অমোঘ নিয়তি
শীরীন আক্তার
নির্বাক,নিস্তব্ধ, নিঝুম নির্ঘুম রাতে দূরে কোন অজানায়,
একটি কুকুর অবিরাম করুণ সুরে কেঁদে চলেছে বেদনায়।
আমি লাশকাটা ঘরে রক্তের গন্ধের মধ্যে পড়ে আছি
অসংখ্য লাশের মাঝে যেন এক পাখা হীন মাছি।
সারাদিন কলুর বলদের মতো অমানুষিক খাটুনি খেটে
চলৎশক্তিহীন হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে রাত যায় কেটে।
নেই কোনো কিছু বলার অধিকার
শুধুই সেবা দিয়ে যেতে হয় থেকে নির্বিকার।
অনবরত অন্যায়, অত্যাচার সয়ে সয়ে হয়ে গেছি সত্তাহীন অস্তিত্ব,
আমার থাকতে নেই কোনো প্রকার ব্যক্তিত্ব।
শুধুই করে যেতে হবে নিশিদিন দায়িত্ব পালন,
অসুখ বিসুখ হলেও সহানুভূতির বদলে মিলে নির্যাতন।
অসুস্থতা সেটাও মহা অপরাধ কাজ করতেই হবে,
যদি প্রাণটা বেরিয়েও যায় তবুও নিস্তার নাহি পাবে।
বাইরে ঘরে বিরামহীন পরিশ্রম করে যা অর্জন করবে,
তাও ওদের হাতে পুরোটাই তুলে দিতে হবে।
তবুও বিন্দু মাত্র শান্তি বা মূল্য দেবে না
অষ্টপ্রহর কষ্টের আগুনে পুড়ে ছাই হলেও তাদের কিছুই আসে যায় না।
কখনও কেউ যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে করে প্রতিবাদ,
অকপটেই তাকে দেয়া হয় চরিত্রহীন ভ্রষ্টা নারীর অপবাদ।
এ-ই তো নারীর জীবন অধিকাংশ সংসারে,
চিরদিন ওরা গিনিপিগ হয়ে প্রাণ দেয় অকাতরে।
কোনো কালে তাদের জন্য কারও একফোঁটা অশ্রু ঝরে না,
মৃত্যুর পরপরই শূন্যতা পূর্ণ করতে ওরা দেরি করে না।
নতুন মুখ নিয়ে হাসি আনন্দে ডুবে যায় নিমেষেই,
কিছু দিন পরে নতুনেরও ঠাঁই হয় চিরপরিচিত অন্ধকার জীবনেই।
এটাই এদেশের নারীদের অমোঘ নিয়তি,
জন্মই যেন তাকে পৌঁছে দেয় করুণ বাস্তবতায় এ-ই তো গতি।