‘প্রতিবিম্ব প্রকাশ’ পরিবারের পক্ষ থেকে এই গুণী কবিকে শুভেচ্ছা।
লেখক পরিচিতি:
কবি জেবুন্নেছা জোৎস্না
জন্ম: ২রা এপ্রিল, ১৯৭৬।
বেড়ে ওঠা যশোর, বর্তমান স্থায়ী নিবাস ঢাকা।
মাইক্রোবায়োলোজীতে মাষ্টার্স শেষে ২০০৩ সাল থেকে নিউইর্য়ক প্রবাসী।
দশ বছর ফুল টাইম মা এবং গৃহিনী থাকার পর প্রবাসে সম্মানজনক পজিশনে প্রতিষ্ঠীত হওয়ার লক্ষ্যে শুরু হয় জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
পার্ট টাইম জবের পাশাপাশি আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থায় হাই স্কুল পাশের শেষে ডায়াগনষ্টিক মেডিকেল সনোগ্রাফীতে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন নিউইর্য়কের লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে।
অষ্টম/নবম শ্রেণী থেকে লেখালেখি, ছবি আঁকা, স্পোর্টস এবং বাগান করার শখ থাকলেও থাকলেও প্রবাসের একাকী সংসার জীবনে দূরে সরে যান সব কিছু থেকে।
ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সংসার, জব এবং ফুল টাইম স্টুডেন্ট হওয়ার সময় প্রচন্ড স্ট্রেস থেকে নিজেকে
ব্যালেন্স রাখতেই শুরু করেন আবার লেখালেখি। নিয়মিত কবিতা, গল্প, আর্টিকেল- প্রবন্ধ লিখছেন
দেশে/প্রবাসে/ অনলাইন পত্রিকা গুলিতে।
বর্তমানে ডায়াগনষ্টিক মেডিকেল সনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আছেন লং আইল্যান্ড জুহিশ হসপিটালে, এবং ম্যানেজ করছেন এ্যাডভ্যানটেজ ফিজিশিয়ান কেয়ার অফিসের একো ল্যাব ডিপার্টমেন্ট! এছাড়াও পার-ডিয়েম হিসেবে নিযুক্ত আছেন কর্ণেল -প্রেসব্যাটেরিয়ান হসপিটালে, যেটি সনোগ্রাফার হিসেবে তাঁর প্রথম কর্মক্ষেত্র।
ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের মা, হেল্পফুল হাজবেন্ড, এবং একজন সুখী নারী হিসেবে নিজেকে মনে করেন।
শুভেচ্ছা নিরন্তর এই গুণী কবিকে
কবি জেবুন্নেছা জোৎস্না’র লেখা কিছু কবিতা :
রঙ্গমঞ্চ
জীবনের রঙ্গশালায় অনবদ্য পাটের ভুমিকায়
ব্যস্ত নারী- পুরুষ। আপাত দৃষ্টিতে সব কিছু
স্বাভাবিক মনে হলেও, আসলে কিন্তু তা নয়!
অন্ধকারে যখন খসে পরে মেকাপের প্লাস্তারণ,
বেরিয়ে আসে কোটরাগত চোখ, কংকলসার হনু’র
ভর্য়াত শেয়ালের শানিত চিৎকার!
হতাশা, লোভের না পাওয়ার অভিশাপে
কৃষ্ণগহবরে টগবগে তরুণের দেহ ক্লান্তসার!
এরা বাতাসেই সঙ্গম করে, নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলে ডিম;
ভেসে থাকে আফিমের কালো নেশায়; হয় না
শেখা তাই মাটিতে ভর দেয়া; অদম্য ইচ্ছায়
দেখেনা স্বপ্ন আলোক বর্ষ’কে মুঠো’য় পুরে
অজানা সৌরলোকে বসত গড়ার; অথবা আদৌ
জানতে চায় না আইসোটোপ এ্যাটমে’র ক্ষরণ গুনে
বিলুপ্ত জীবাস্মের বিস্ময়কর অজ্ঞাত বয়স!
আ্যমবায়িক চলনে ডোবার কোলা ব্যাঙের বসতে
এরা দেখেছে কেবল চিলেকোঠা’র এক চিলতে অন্ধকার,
শ্বাসরুদ্ধকর ঠাসা চার’টি দেয়াল, আর জেনেছে,
পরশ্রী মশকের ভূমিকায় গোপনে অন্যের রক্ত চোষা।
আর ঠিক একইভাবে নতুন সজ্জিত রঙ্গমঞ্চে
ফের আবার কোন এক মহড়ার, অপেক্ষায় থাকা।
বৃষ্টি-বিলাস
ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ’র নির্বিকার কোলাহলে—
গ্রীস্মের হঠাৎ মাদল বাদলের আমন্ত্রণে-
শূন্য হাওয়ার ক্যানভাসে আঁকছি তোমায়
চুমুকে ভেজা ক্যাফের বাস্পায়িত কাঁচ গলে!
অথবা গাড়ির উইন্ড স্ক্রীনে টসটসে ফোঁটা জলে-
ইথারে ভেসে আসা কারো শব্দহীন সম্বোধনে-
ঝাপসা চোখে মুছছি তোমায় বারে বার
আসছো যতবার পথ ভুলে সন্মুখে এ মনে!
ঢং ঢং শহুরে ঘড়ির সময়ের আর্বতনে, অতঃপর
বিরতির ব্যবধানে অবশিষ্ট লাঞ্চের প্যাকেটে মুড়ে,
ফেলছি তোমায় আনমনে চলতি পথের ট্রাসক্যানে!
অথচ, তুমি আছো দশদিকে, আমার সবখানে! সবখানে!
সবার উপরে মানুষ
কাহারও গোপন কম্পন পরশে জেগেছিল ধরত্রী সূধা—
মনুষ্য চোখে যাহা দেখি, বিস্ময়ে তাহাই অপরুপা।
তিলোত্তমা পৃথিবীতে জীবাণুর শুভ্রতা ভরা সুখ—
সৌন্দর্যের পল্লব ছিঁড়ে আদমের রক্ত-পূঁজ কংকালে
আজ দারুণ অসুখ! ক্ষোভ নয়, জেগেছে বিক্ষোভ—
স্যাঁতস্যাতে আদমেরে আজ ছুঁয়ে যাক বিধ্বংসী রোদ।
যে পূজা করে না, মৌসুমে সেও আপাদমস্তক মন্ত্রমুগ্ধ—
খাবি খাঁ চাঁদের হাটে একদিন হয় সে পরাজিত – পথভ্রান্ত।
যে পথের অন্ধ গলিতে সত্য চিপায় ক্লান্ত, মিথ্যা কাঁপায় রাজপথ,
অমিয় ক্ষুধায় সরল আদম উদভ্রান্ত।
যে শহর লাশ চায়, পোড়া মানুষের গন্ধে
বুক তার ভারাক্রান্ত; একই সীমানা, একই মানুষ
তবে আর কতো বিভাজনের চক্রান্ত?
বেঁচে আছে চন্ডীদাস, পুস্তকের অক্ষরে খোদাই,
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ ।
১ Comment
congratulations