অনন্যা’ এ বছরের শুরুতেই প্রকাশ করেছে আমার প্রিয় লেখক-কথাসাহিত্যিক মাজহারউল মান্নানের স্মৃতিকথা, ‘শিক্ষকতার চুয়ান্ন বছর’। গত সপ্তাহের ৭ তারিখে বইটির পাঠ-উন্মোচন হয়। আমন্ত্রণ পেয়েও আমি কপালপোড়া, সে-অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। ফলে, লেখক মাজহারউল মান্নান Sir-এর একপশলা বকা খেয়েছি ০৮ তারিখে।
ফেসবুকেই এর অধিকাংশ লেখা ধারাবাহিক আকারে পড়া হয়েছে। আমার চেয়ে আরো বেশি নিয়মিত পড়েছেন লেখকের বন্ধুপক্ষে ডা, মফিজুল ইসলাম মান্টু; আর বিপক্ষের অনেকজন। তাঁরা তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এ-বইটির জীবনঘনিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটি সম্পন্ন করেছেন।
শিক্ষক তিনি সারাজীবন, যেমন বিদ্রোহী ছিলেন সারাজীবন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের নূরলদীন। জনাব মাজহারউল মান্নান মসৃণ মোজাইকে নরম পা ফেলে ফেলে শিক্ষকতার কাজ করেননি। তিনি ছাত্রদের নকলবাজ প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন; মস্তানবাদের মুখের ওপর ঘুষি তুলেছেন সেই অটল দৃঢ়তায়, যে প্রবল একাগ্রতায় রুখে দিয়েছেন তাঁর ছাত্রজীবনের অভাব অনটনকে। শত্রুর ভয়ংকর থাবাই তাঁর চলার পথের সাথী, যেমন সেকালে রাজপুত্র-জমিদারপুত্রের ভ্রমণসঙ্গী থাকতো হাতি। ‘হাতি মেরা সাথী হ্যাঁয়’; মাজহারউল মান্নানের জন্য ‘দুর্যোগ ও বিপদ আমার চিরসাথী’।
শিক্ষকতা শুধু পাঠ্যবইয়ের ছাপানো পাতা উল্টিয়ে-যাওয়া আর সমাজকে তোষামোদ করে পদোন্নতি পাওয়া ছিল না তাঁর অভীপ্সা। তিনি বরং ওসব মুনাফা দলে গেছেন পায়ের তলায়! কী কারমাইকেল কলেজে, কী অন্যান্য কলেজে–সর্বত্রই এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান। লক্ষ্য, সমাজদেহ বিনির্মাণ। ‘শিক্ষকতার চুয়ান্ন বছর’ সেই জীবনেতিহাসেরই এক দালিলিক বয়ান।
পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮৭-তে পেলাম গাইবান্ধার মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত। মুক্তিযোদ্ধা দুই ভাই, হিরু আর তরু, এবং আরও অনেকে তাঁর মায়ের কাছে আবদার নিয়ে আসতেন, ‘খালা, অনেকদিন ভালো খাই না। হাঁসের মাংস খেতে মন চায়’। লেখক মাজহারউল মান্নানের মানবদরদী গৃহিণী রান্না করে স্বহস্তে আপ্যায়ন করতেন তাদের। আমি পড়ি স্লুইসগেটে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের কথা; পড়ি ০৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে মাহাবুব ইলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে গাইবান্ধা দখলের কথা।
বইটি মূলত স্বাধীন বাংলাদেশের আধা শতাব্দীকালের সামাজিক ইতিহাস। এর পশ্চাতপটে রাখা হয়েছে স্বাধীনতাপূর্ব চার বছর, ১৯৬৭ থেকে। শিক্ষকতার বয়ান কেবল একটা পাত্র; সেই পাত্রে তিনি তাঁর “জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরি করেছেন দান”।
আমন্ত্রণ, ‘শিক্ষকতার চুয়ান্ন বছর’ শিরোনামবিশিষ্ট জনাব মাজহারউল মান্নানের স্মৃতিকথায়, যা আর এক অর্থে বাংলাদেশেরই সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিকথা।
২ Comments
অসংখ্য ধন্যবাদ।
এমন আন্তরিকতার তুলনা হয় না।
ভালো থাকবেন।
আরও অনেক পোস্ট শেয়ার করবেন।
thanks sir