৩ অক্টোবর শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহ’র জন্মদিন;
১৯৫৯ সালের এই দিন চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সম্ভ্রান্ত কাজীবাড়ির কে এম আবদুস শুকুর এবং সৈয়দা রিজিয়া বেগমের ৫ম সন্তান রহীম শাহ।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ঘরানার এই লেখক পরম মমতায় শিশুসাহিত্য রচনা করে চলেছেন। বলা যেতে পারে, দীর্ঘ চার দশক ধরে সাহিত্যের সব শাখায় ফুল ফুটিয়ে চলেছেন শিশুঅন্তপ্রাণ এই মানুষটি। অবিরাম উজ্জ্বলতর করে তুলেছেন শিশুসাহিত্যকে। পেয়েছেন পাঠকপ্রিয়তাও।
প্রধানত শিশুকিশোর সাহিত্যের লেখক। ১৯৭০ সাল থেকে লেখালেখি শুরু। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পত্রপত্রিকার নিয়মিত লেখক। সাহিত্যকর্মের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে সম্মানিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পুরস্কার, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, মাওলানা ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, আবদুল আলীম স্মৃতি পুরস্কার, শিশুকিশোর নাট্যম পুরস্কার, আমরা কুঁড়ি পদক, চন্দ্রাবতী একাডেমি শিশুসাহিত্য সম্মাননা, কথন শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবি কাজী কাদের নওয়াজ স্মৃতি স্বর্ণপদক, কবি গোবিন্দচন্দ্র দাশ সাহিত্য সম্মাননা এবং নওয়াব ফয়জুননেসা স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন।; বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহ.
বাংলাদেশে যে কজন লেখক কিশোর কবিতা চর্চা করে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রহীম শাহ’র নাম উল্লেখযোগ্য। অবশ্য ছড়া লেখক হিসেবে তার পরিচয় সর্বব্যাপী। অনবদ্য ও সাবলিল তার প্রতিটি ছড়া ও কিশোরপাঠ্য কবিতা। সময় এবং পাঠকের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে মাঝেমধ্যে ফর্ম ভাংচুর করেন তিনি। এ কারণে কখনও কখনও মনে হয় তার লেখাগুলো অতিক্রম করে যাচ্ছে কালকেও। উদ্ভট আজগুবিই শুধু নয়, অলীক রস, বিস্ময় জাগানিয়া অন্ত্যমিল এবং ছন্দের কারুময় ব্যবহার যা ছড়ার প্রাণ, কত অনায়াসে তিনি এনেছেন, সাজিয়েছেন, পরম যত্নে, ভালোবেসে। একমাত্র ছোটদের প্রতি শ্রদ্ধা, সমীহবোধ থাকলেই এ কাজটি করা সম্ভব। কবিতা-ছড়ার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, জীবনী, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, বিজ্ঞান, অনুবাদসহ শিশুসাহিত্যের প্রতিটি শাখায় আছে তার নিপুণ হাতের স্বাক্ষর। বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়-আশয়গুলো অত্যন্ত সহজ ভাষায় লিখে বিভাগটিকে জনপ্রিয় করেছেন। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বিজ্ঞানবিষয়ক তার সবগুলো বই-ই পাঠক সমাদৃত হয়েছে। বিজ্ঞানকে গল্পের আদলে নিয়ে এক মোমের জগৎ যেন সৃষ্টি করেছেন।
আমাদের অনুবাদ সাহিত্যেও তিনি এনেছেন নতুন মাত্রা। বহুপঠিত আইজাক আসিমভের লেখা সায়েন্স ফিকশনের পাশাপাশি আমাদের দেশে অপঠিত অনেক বিশ্বনন্দিত লেখকের লেখাকে তিনি পরম যত্নে অনুবাদ করে শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় চার্লস কিংস্লে-এর ‘ওয়াটার বেবিস’ এবং অ্যাস্ত্রিদ লিন্দগ্রেন-এর ‘পিপপি গোজ অ্যাবোর্ড’-এর কথা। বিশ্বনন্দিত শিশুসাহিত্যিক অ্যাডওয়ার্ড লিয়রের লিমেরিক অনুবাদ করে রহীম শাহ তার দক্ষতাকে নতুন করে যেন শানিয়ে নিয়েছেন। সম্পূর্ণ দেশজ ও নিজস্ব ভঙ্গিতে লিয়রের এমন অনুবাদ বাংলা সাহিত্যে বিরল।
তার প্রতিটি রচনা যেন ভিন্ন মেজাজের। শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন এবং বহুমাত্রিকতায় সমৃদ্ধ তার প্রায় সব লেখা। জলজ প্রকৃতি আর অফুরন্ত শ্যামল নিসর্গ আক্রান্ত জনপদের, লোকজ জীবনের এক স্পর্শকাতর তীব্র সংবেদনশীল লেখক রহীম শাহ। পক্ষিকুল কিংবা পতঙ্গ, উদ্ভিদ কিংবা বনবনানীর বিশালতা তার মগ্ন চৈতন্যে অবিরাম শিস দিয়ে যায়। এই কারণে হতে পারে তার প্রতিটি লেখায় পাওয়া যায় প্রকৃতির নিবিড় নির্জনতা, অবিরাম পাখির ডানার কাঁপন, ভেজা মাটির গন্ধ এবং বাতাসে দুলে ওঠা জলতরঙ্গের মৌন ছুটে চলা।
স্বপ্ন নিয়ে খেলা, আগামী দিনের রহস্য, আগুন ডানার পাখি, অ্যাডভেঞ্চার হিমছড়ি, আনন্দ রে আনন্দ, পৃথিবীর জন্মকথা, বেজি বাঘ বানরেরা, মানুষ করল আকাশ জয়, টোকাই টোকাই, একটু পেলে ছুটি, ঘুরে আসি প্রাণিরাজ্যে, বীরমানুষের ছড়া ও পাখির জন্য ভালোবাসাসহ প্রায় শতাধিক বইয়ের লেখক তিনি। সম্পাদনা করেছেন বাংলা ভাষার সর্ববৃহৎ ছোটদের সঙ্কলন—‘আকাশকুসুম’, ‘আজ আমাদের ছুটি’, ‘সকালবেলা পাখি’, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর’ এবং ‘আজ ছুটিবার’।
২ Comments
শুভ জন্মদিন। অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা।
খুব ভালো