ধারাবাহিক গল্প:
বৌদি
পর্ব এক:
আজ তপুর মন ভাল নেই মায়ের কথা মনে পড়ছে,ঘুম থেকে জেগেই মায়ের জন্য চিৎকার দিয়ে কাঁদছে। রহিম সাহেবরও ঘুম ভেঙ্গে গেলো ছেলের কান্না শুনে জেগে উঠলেন,উঠেই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। রহিম সাহেবের চোখেও জল নিরবে কাঁদছে সে ছেলেকে শান্তনা দেবার ভাষা জানা নেই রহিম সাহেবের,তবুও ছেলেকে বলছে,বাবা কাঁদেনা লক্ষী সোনা ঐ দেখ হাতি ঐ দেখো ঘোড়া,শো কেচের ভিতর রাখা খেলনা হাতিটি এনে ছেলের হাতে দিল,রহিম সাহেবের চোখ দুটি ছল ছল করছে মনে মনে স্ত্রীর কথা ভাবছে। কেন আফরোজা তুমি আমাকে কঠিন এক পরীক্ষায় ফেলে এভাবে চলে গেলে, রহিম সাহেবের স্ত্রীর নাম আফরোজা, ছয় মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তপুর বয়স মাত্র পাঁচ বছর আজ মার কথা বেশি বেশি মনে পড়ছে তপুর,আর ডুকরে ডুকরে কাঁদছে মা মা বলে। রহিম সাহেবের প্রতিবেশি গৌরী নন্দী,স্বামী শঙ্কর নন্দী দুজনেই নিঃসন্তান,চাকরির সুবাদে রহিম সাহেবের পরিবারের সাথে খুব ঘনিষ্ট সম্পর্ক নন্দী পরিবারের। রহিম সাহেবের স্ত্রী আফরোজা বেঁচে থাকাতে গৌরী নন্দীর সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা এতটাই যে,বাইরের কেউ এসে বুঝতেই পারবেনা তারা পৃথক পরিবার। তপুর কান্না শুনে গৌরী ছুটে এলো,এসে রহিম সাহেব কে বললেন,কি হয়েছে তপুর? ও কাঁদছে কেন। রহিম সাহেব কোন উওর দিতে দিতে পারলে না আর কি উত্তর দেবে জানা নেই রহিম সাহেবের,গৌরী তপুকে কোলে নিয়ে রহিম সাহেব কে বললেন,আমি তপুকে নিয়ে যাচ্ছি,রহিম সাহেব সম্মতি দিয়ে বললেন দেখেন ওকে থামাতে পারেন কিনা। সেই থেকে গৌরি তপুকে নিজের কাছে রেখে সন্তানের মত আদর যত্নে মাকে ভুলিয়ে রাখারর চেষ্টা করছে,আস্তে আস্তে তপুও গৌরির আদর যত্নে মায়ের কথা ভুলে যেতে থাকলো এবং গৌরীর মমত্ববোধ তপুর হৃদয়ে স্থান করে নিতে থাকে। গৌরি তপুকে দাদু বলে ডাকে গৌরীর স্বামী শঙ্কর নন্দীও তপুকে খুব স্নেহ করে ছেলের মত কারণ গৌরী ও শঙ্কর নন্দী নিঃসন্তান মানুষ। তপু এই নিঃসন্তান দম্পতির সন্তানের অভাব কিছুটা হলেও পূর্ণ করেছে,একদিন গৌরী ও স্বামী শঙ্কর নন্দি রহিম সাহেবের কাছে তপুকে চাইলো,এবং বলল,তপু আমাদের কাছে থাক আমরা ওকে মানুষ করবো। রহিম সাহেব গৌরির শঙ্কর নন্দীর কথা শুনে কেঁদে ফেললেন,স্ত্রী আফরোজার কথা মনে পড়লো,আজ যদি তপুর মা বেঁচে থাকতো এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না। গৌরি রহিম সাহের হাতটি ধরে বলল,না করবেন না তপু আমার সন্তানের মত থাকবে।রহিম সাহেব না বলতে পারলেন না,মা হারা তপুকে গৌরির দায়িত্ব দিয়ে বললেন ওর দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে দিলাম। আজ রহিম সাহেব ভাবছে অন্তত তপু গৌরির আদর স্নেহ ও মমতায় মানুষ হতে পারবে,কিছুদিন পর গৌরি তপুকে সাথে নিয়ে রামগাতী উপজেলায় শিশু নিকেতনে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি করে দিলেন। রহিম সাহেব অনেক চিন্তামুক্ত হল এটা ভেবে যে,তপু গৌরির কাছে অন্তত মায়ের আদর পাবে!এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল পনেরোটি বছর। তপু এখন বড় হয়ে গেছে এবার তপু এস এসসি জিপি এ ফাইভ পেয়ে পাশ করেছে, চোখে তার স্বপ্ন কলেজে ভর্তি হবে। গৌরি তপুকে সাথে নিয়ে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে বলল,কলেজে গিয়ে এই বৌদিকে আবার ভুলে যেওনা যেন,তপু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। কলেজে তপু নিয়মিত যায় পড়াশুনায় তপু খুব ভালো প্রথম সাময়িক পরিক্ষায় প্রথম হয়েছে,সময় ধীরে ধীরে চলতে থাকে তপুর এইস এস সি পরীক্ষা এসে গেলো,গৌরি তপুকে সাথে করে মার্কেট করলো শার্ট প্যান্ট জুতা সব কিনে বাড়ি ফিরলো। রহিম সাহেব সমস্ত দায়িত্ব গৌরির উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিত,তপু পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত এবং তৈরি হলো। আজ পরীক্ষা শুরু তপু গৌরি বৌদিকে প্রণাম করলো,খুব খুশি তপু কারণ সে আজ কলেজে যাবে পরীক্ষা দিতে। গৌরি তপুর পাশে থেকে একজন শিক্ষকের মত সব সময় গাইড করেছে এবং আদর স্নেহ দিয়ে তপুকে উৎসাহ দিয়েছে পড়াশুনায়। আজ তপু বুঝতে শিখেছে গৌরি বৌদি কতটা জায়গা জুড়ে আছে তপুর হৃদয়ে, মায়ের কথা মনে পড়েনা এখন সেখানে গৌরি বৌদি ছাড়া। তপু পরীক্ষা দিতে কলেজে গেলো প্রথম পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এলো,গৌরি বৌদিকে বলল,পরীক্ষা ভালো হয়েছে।এক সময় নিয়ম অনুযায়ী ধীরে ধীরে সব পরীক্ষা শেষ হলো। পরীক্ষা শেষ করে অবসর সময়টা তপু ও গৌরি বৌদি ঘোরাঘুরিতে তিন মাস অতিবাহিত করলো,এখন ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষা শুরু। গৌরী আর তপুর অপেক্ষার পালা শেষ হলো,আজ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবে, এইস এস সির রিজাল্ট ঘোষনা করেছে শিক্ষাবোর্ড,গৌরি তপুকে বলল,চল কলেজে গিয়ে রিজাল্ট নিয়ে আসি,তপু আর গৌরি বৌদি কলেজে এসে ফলাফলের চার্ট দেখলো তপু জিপি এ ফাইভ পেয়ে পাশ করেছে। ২৫-৯-২০২১ ——চলবে
বৌদি
পর্ব দুই:
গৌরি বলল,আমি জানতাম তপু তুমি প্রথম হবে,তপু বলল,কি করে জানতে বৌদি। গৌরি বলল,আমার মনের অফুরন্ত বিশ্বাস থেকে,কারণ তুমি যে আমার লক্ষী সোনা। রহিম সাহেব চেয়ারে বসে তপু ও গৌরি বৌমার কথোপকথন শুনছে,আর ভাবছে আজ যদি তপুর মা বেঁচে থাকতো কতোই না খুশি হত। রহিম সাহেব গৌরিকে বলল,মা তোমার এ ঋন কোন জন্মেও শোধ করতে পারব না আমি,তুমি তপুর জন্য যা করেছো তা ওর নিজের মাও করতো কিনা জানিনে। গৌরি শুধু বলল,এটা আমার দায়িত্ব শুধু তাই নয় তপু আমার সন্তানের মত ওয়ে আমার সন্তানও। বলেই গৌরি রহিম সাহেবকে বলল,আমি আসছি কাকা,তারপর গৌরি নিজ ঘরে গিয়ে দেবী সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করলো, আমার তপু যদি এবার অনার্সে প্রথম বিভাগে পাশ করে আমি আবার মা তোমার পুজো দেব। তপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করলো তারপর অনার্সে তপু ভর্তি হল। গৌরি অনেক খুশি আজ যে জ্ঞানের দেবী সরস্বতী তার প্রার্থনা শুনেছে,তপুকে আজ গৌরি মনের কথাটি বললো,তার মানত অর্থাৎ স্বরসতীর পুজার কথা। তপু অবাক হয়ে গেলো এটা ভেবে যে,গৌরি বৌদি কি শুধু তার বৌদি না তপুর মা। তপুর শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেলো বহুগুণ গৌরী বৌদির প্রতি কারণ তপুর মায়ের অভাব গৌরি বৌদি কখনো কোন দিন বুঝতে দেননি। কিছুদিন পর তপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল চলে গেলো এবং হোস্টেলে উঠলো,আজ তপু ভাবছে তার গৌরি বৌদির কথা। খুব খুব মনে পড়ছে বৌদিকে,তপু মনে মনে আজ সংকল্প নিলো অনার্সে প্রথম হয়েই বৌদিকে সারপ্রাইজ দিবে। এদিকে গৌরির জ্বর হলো শঙ্কর নন্দি ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ নিয়ে এলো, গৌরিকে খায়ালো জ্বর কমলো। কিন্তু কিছুদিন পরে আবার জ্বর এলো,এভাবে দিন যায় মাস যায় গৌরির শরীরের অবনতি হতে থাকলো। কোন ঔষধে জ্বর সারছে না ডাক্তার বলল,গৌরির রক্ত প্রস্রাব পরীক্ষা করার কথা। শঙ্কর নন্দি দেরি করলো না গৌরিকে জেলা শহর হাসপাতালে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখালো। ডাক্তার গৌরির শরীর পরীক্ষা করে শঙ্কর নন্দিকে বলল,আপনার স্ত্রীকে ঢাকা ক্যান্স হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন,শঙ্কর নন্দী ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলো গৌরির কি ক্যান্সার হয়েছে!ডাক্তার বলল,বলতে পারছি না তবে লক্ষণ তেমন মনে হচ্ছে। শঙ্কর নন্দি আর দেরি করলেন না গৌরিকে ঢাকা ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাল। পরের দিন পরীক্ষার রিপোর্ট গুলো নিয়ে ডাক্তারকে দিলো,ডাক্তার রিপোর্ট দেখে শঙ্কর নন্দিকে বলল,গৌরির শরীরে মরণ ব্যাধি ব্লাড কেন্সার। শঙ্কর নন্দি স্ত্রীর ক্যান্সার শুনে ভেঙে পড়লো ডাক্তার গৌরিকে বাড়ি নিয়ে যেতে বললেন,গৌরিকে বাড়ি আনা হলো। গৌরি দিন দিন কঙ্কাল হয়ে যেতে শুরু করলো,রহিম সাহেব গৌরিকে বলল,বৌমা তপুকে সংবাদ দেই,গৌরি বলল,সংবাদ দেবেন না কাকা কারণ তপুর পড়াশুনার ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি এমনি ভাল হয়ে যাবো আপনারা দেখবেন,শঙ্কর নন্দিও বলল,তপুকে খবর দেবার কথা,গৌরী স্বামীকেও নিষেদ করলো। গৌরী জানেনা তার কি হয়েছে সে জানে তার জ্বর হয়েছে,রহিম সাহেব আর শঙ্কর নন্দি দুজনেই আর গৌরিকে কিছু বললো না,শুধু ক’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো শঙ্কর নন্দির অবুঝ দুটি চোখ থেকে এ অশ্রু ভালোবাসার এ যেন ভালোবাসা হারানোর ভয়। রহিম সাহেবের চোখেও জল জানে গৌরি আর বেশি দিন তাদের মাঝে আর থাকবেনা।তপুর ও প্রথম বর্ষের অনার্স পরীক্ষা সব শেষ হয়ে গেলো। পাশা পাশি তপু বেসরকারি কোম্পানিতে একটা জব করতে শুরু করলো,প্রথম মাসের বেতন পেয়ে তপু গৌরি বৌদির জন্য অনেক জিনিসপত্র কিনলো। কিছু দিন পর পরীক্ষার ফল বের হল,তপু ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছে প্রথম বর্ষ অনার্সে, রিজাল্ট পেয়ে তপু গৌরি বৌদিকে আগে খবরটা জানানোর জন্য ফোন করলো,গৌরি তপুর ফোন রিসিভ করলো। তপু বলল,বৌদি আমি ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হয়েছি,গৌরির চোখে জল টলোমলো করে উঠলো শুধু বলল,দাদু আরো ভালো করতে হবে বলেই বলল,আমি পরে কথা বলবো বলেই ফোনটা কেটে দিল।তপু ভাবলো বৌদি হয়তো কাজে,পরে ফোন করবো। কিছুদিন পর তপুর বাড়ি থেকে ফোন পেলো তপুর বাবা রহিম সাহেব করেছে,তপু ফোন রিসিভ করতেই রহিম সাহেব ছেলেকে বলল,তপু তুমি বাড়িতে চলে আসো যত তাড়াতাড়ি পারো,তোমার গৌরি বৌদির অসুখ, তোমাকে দেখতে চাই। ————- ২৭-৯-২০২১ চলবে
গল্প বৌদি
পর্ব শেষ
——- তপু বার বার ফোন দিল কেউ রিসিভ করলো না,তপুর মন বিচলিত হয়ে উঠলো, একটা ভয় তপুর চিন্তা বা ভাবনার ভিতর রেখাপাত করলো,বৌদির এমন কি হয়েছে যা তপুকে বলা হয়নি ফোনে। তপু আর কিছু ভাবলো না,একটাই ভাবনা তপুকে তাড়া করলো,আজই বাড়ির পথ ধরতে হবে। তপু হোস্টেল থেকে বৌদির জন্য কেনা জিনিষপত্র সব গুছিয়ে নিয়ে ব্যাগে ভরলো, নিজের জামা কাপড় নিলো তারপর পাগলের মত স্টেশনের দিকে ছুটলো। বাস স্টেশনে পৌছে কাউন্টারে গিয়ে টিকেট করে গাড়ীতে উঠে বসলো। আধা ঘন্টা পর গাড়ী ছাড়লো কিন্তু তপু ভাবছে বৌদির কথা,কি হয়েছে বৌদির?ভেবেই চললো তপু,গাড়ীও চলছে কিন্তু তপুর মনে হচ্ছে গাড়ি আজ ধীরে চলছে। তপু বৌদির কথা ভাবছে, এ ভাবনা এক ছেলের মা’কে নিয়ে,কখন পৌছাবে সে রামগাতি থানায়। তপুর খুব বিরক্তবোধ মনে হচ্ছে গাড়ির প্রতি,তপু ঘড়ি দেখলো এবং হেলপারকে জিজ্ঞেস করলো আর কত সময় লাগবে রামগাতি থানা পৌছাতে। হেলপার বলল,এখনো রামগাতি পৌছতে দুই ঘন্টা সময় লাগবে ভাই,তপুর অপেক্ষার পালা শেষ হয়না যেন,অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষে রামগাতি থানা বাস স্টেশন পৌছালো গাড়ি সকালে,তপু রামগাতি উপজেলা নামলো নেমেই বাড়ির দিকে ছুটলো। তপু বাড়িতে ঢুকেই অনেক মানুষের ভিড় দেখতে পেল,রহিম সাহেব তপুকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,তপু বলল,কি হয়েছে বাবা। রহিম সাহেব বলল,তোমার বৌদি আর বেঁচে নেই,তপু খবরটা শুনেই হোচট খেলো তারপর বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তপু গৌরি বৌদির মৃতদেহের কাছে গেল, শঙ্কর নন্দি তপুকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো,আজ তপুর দু’চোখে অঝোর শ্রাবণ। তপুও কাঁদছে আর বৌদির দুটি হাত ধরে বার বার করে মিনতি করে বলছে,বৌদি ও বৌদি দেখ আমি তোমার তপু এসেছি, তোমার চাওয়া অনার্স ফাষ্ট ক্লাস ফাস্ট হয়ে এসেছি। ও বৌদি উঠো তুমি বলেছিলে সরস্বতী পুজা দেবে,যে গৌরি মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে তিলে তিলে বড় করেছে সেই গৌরি তার এত আদরের তপুর ডাকে আর সাড়া দিলো না। রহিম সাহেব ছেলেকে শান্তনা দিচ্ছে বার বার,এদিকে গৌরির লাশ নিয়ে শ্মশানের যাবার প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। গৌরির লাশ নিয়ে য়াওয়া হলো শ্মশানে,সাজানো চিতায় গৌরিকে শুয়ে দেওয়া হল,শঙ্কর নন্দি গৌরির চিতায় আগুন দিল। দাউ দাউ করে চিতা জ্বলে উঠলো,চিতা জ্বলছে,তপু নির্বাক হয়ে কাছ থেকে দেখছে আজ তার বৌদি নয় আজ তার মা গৌরি আগুনে পুড়ছে। আজ তপুর মনে হল এ আগুন চিতায় নয় তার অন্তরে জ্বলছে,সেই পাঁচ বছর বয়সে মা মৃত্যু বরণ করেছে তপুর কোন স্মৃতি তেমন মনে নেই কিন্তু গৌরি বৌদি শুধু তার বৌদি নয় গৌরি তপুর মা ছিল এই অনুভূতি তপুর সমস্ত হৃদয় মন আছন্ন করে দিল। গৌরির মৃত্যুর পর তপু খুব চুপচাপ হয়ে গেলো কারো সাথে তেমন কথা বলে না, তপু বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো খাওয়া দাওয়াও ঠিক ঠাক মত করে না,সব কিছু বিরক্ত লাগে তার। হঠাৎ একদিন তপু বাড়ি থেকে কোথায় যেন চলে গেলো অনেক খোঁজা খুঁজি করা হলো কোথাও তপুর সন্ধান মিললো না।রহিম সাহেব এবং শঙ্কর নন্দি হতাশ হয়ে পড়লো এটা ভেবে যে কোথাও তপুর হদিস পাওয়া গেলো না। শুনা যায় তপু পাগল হয়ে গিয়েছিল এক বছর পর শুনা গেলো রামগাতী উপজেলায় শ্মশানের পাশে একটি মৃত লাশ পড়ে আছে। রহিম সাহেব আর শঙ্কর নন্দি খবরটা পেয়ে শ্মশানে গিয়ে দেখলো লাশটা তারপর শনাক্ত করলো লাশটা আর কারো নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ফার্ষ্ট ক্লাস ফার্ষ্ট হওয়া তপুর লাশ।। ———- ২৮-৯-২০২১