বিশ্ব শিক্ষক দিবস
হাসানা হেনা
আজ ৫ অক্টোবর। বিশ্ব শিক্ষক দিবস।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও আমার কিছু আত্ব কথন।
১৯৮২ সাল। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের কোন একদিন অর্থাৎ স্কুল জীবনের বিদায়ের দিন। আমরা বিদায়ী ছাএ ছাএীরা শিক্ষকদের বক্তৃতা শুনছি আর কান্না কাটি করছি। এমন সময় মাইকে ঘোষণা শুনলাম
হেড স্যার বক্তৃতা দিবেন। এ ঘোষণার কয়েক মিনিট পরে ই শুনতে পাচ্ছি স্যার বলতেছেন ” আইজ্য তোমাদের এমন একটা জিনিস দিউম যা টাকা দিই পাইতা নো”
স্যার এতটুকু বলেই থেমে গেলেন।আমি কান্না বন্ধ করে মাইকের দিকে কান খাড়া করলাম জিনিস টা কি যা টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। আরও ২/১ মিনিট পর বললেন “পয়সা দিয়িও পাইতা নো” এর আর একটু পরে বললেন ” পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়ে ও
পাইতা নো ” আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম এবং ধৈর্য ও হারিয়ে ফেললাম জিনিসটা কি জানার জন্য (স্যার খুব থেমে থেমে বলছিলেন) সম্ভবত এর ও ২/৩ মিনিট পর স্যার বললেন ” হেইগ্যান অইছে দোয়া ” আমি উওর
পেয়ে গেলাম এবং খুব বিরক্ত হলাম। আর ভাবলাম ঐ দোয়া আমার দরকার নাই যা এত কিছুর বিনিময়ে পাওয়া যায় না। এডমিট কার্ড নেয়ার পর স্যারের কাছে যখন দোয়া চাইতে গেলাম স্যার টেবিলের নীচ থেকে পা বের কর রাখলেন। আমারা যখন পা ধরে সালাম করলাম প্রত্যেকের সাথে ই খুব ভালো ভাবে কথা বললেন দোয়া করলেন। যদি পায়ে সালামের সময় বলতেছিলেন” সালাম লাইগ দ নো ” আমার এটাও ভালো লাগে নাই।সালাম নিলো আবার বললো ” লাইগ দো নো” এটা কেমন হলো।সে যাই হউক পরীক্ষা দিচ্ছি,
কিছু বিধি বাম আমার শেষ পরীক্ষার আগের দিন২২ মার্চ বিকাল ৫টায় আমার বাবা মারা গেলেন। তার পরের দিন আমার ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। আমাকে যখন পরীক্ষার হলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আমার বাবার লাশ ঘরেই ছিল দাফনের প্রস্তুতি চলছে। আমি পরীক্ষার হলে ঘন্টা খানেক লিখলাম, কি লিখেছি তাও জানিনা, দের ঘন্টার মত বসেছিলাম আমার স্পষ্ট মনে পরে। রেজাল্টের পর যখন মার্ক শিট পেলাম দেখি ইতিহাসে ৫৩ নম্বর। আমি অবাক। কিভাবে? এখন ভাবি স্যারের দোয়া ই কাজে লেগেছে।তখন বুঝি নাই,
এখন বুঝতেছি হাড়ে হাড়ে।কতই না অবুঝ ছিলাম।
স্যার যদি বেঁচে থাকতেন আমি অনেক অনেক দোয়া স্যারের কাছ থেকে নিয়ে বাকি জীবনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতাম। সেই সময় ত আর কখনো ফিরে আসবে না। যে সময় হারিয়ে যায় ঐ সময় আর ফেরত আসে না।আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে স্যারের কথা মনে পড়ছে।
আজ এইদিনে বিশ্বের সকল শিক্ষকের প্রতি রইল আন্তরিক শ্রদ্বা, ভক্তি, ভালোবাসা।
ভুলের খাতা ভুলেই ভরে থাকে,
হয় জীবনের বলি।
বৃন্তে কি ফিরে আসে কখনও
তরু তলে ঝরে পরা কলি।
সঠিক সময়েই রেখে যেতে চাই
জীবনের প্রতি মায়া, মমতা প্রীতি।
ভালোবাসা জানাই শ্রদ্ধা জানাই বিশ্বের সকল
শিক্ষকের প্রতি।
হাসানা হেনা
৫/১০/২০২১ ইংরেজি।
স্যার নোয়াখালীর ছিলেন। স্যার যেভাবে কথা বলেছেন ঐভাবে ই কোট করেছি। কেউ এটাকে ব্যাংগাত্বক দৃষ্টিতে দেখবেন না, অনুরোধ রইল।