স্মৃতি ওড়ে হৃদয় পোড়ে
[ড. নজরুল ইসলাম খান]
গিফটের স্মৃতিগুলো এখনও নতুন, অন্তরে খচখচ করে-
কত যে গিফট তুমি দিয়েছ আমায়
তার হিসেব আমি রাখিনি
বলা যায় বেহিসেবি আমি।
গিফট পেতে যেমন ভালো লাগে তেমনি কাউকে দিতেও হৃদয় জুড়ায় আমার।
আমি নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখেছি তোমার চোখের পাতায়
তুমি দিতেই পছন্দ কর বেশ!
অনেকবার তোমাকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি
তোমার না নেয়ার অজুহাত আমি প্রত্যক্ষ করেছি
যুক্তি খন্ডন করেও তোমার হাতে আমার স্মৃতি তুলে দিতে পারিনি।
তুমি যখন কোন গিফট তুলে দাও আমার হাতে,
আমার ভীষণ লজ্জাও লাগে। গভীর রাতে যখন তোমাকে মনে পড়ে
তখন তোমার গিফটগুলো আমার চোখের তারায় তুলে আনে থরেথরে
বুকের ভেতর ধিকধিক শব্দ করে আর চিনচিনিয়ে ব্যাথ্যা করে বাম কোণে।
হাসনা হেনা, সোহেলী, চামেলি, জুঁই
আরো নাম না জানা কত বন্ধু আছে ডাকি তুই
তোমরা আমাকে কত গিফট দিয়েছ
কিন্তু তোমাদের কাছে আমি স্মরণীয় হতে পারিনি, তোমরা আমাকে সে সুযোগ করে দাওনি।
হয়তো ভেবেছো তোমরা-
আমার কাছে গিফটের টাকা নেই
নাকি তোমাদের মন বোঝার ক্ষমতা নেই
নাকি হৃষ্টপুষ্ট এক সাগর ভালোবাসা নেই?
হয়তো পরীক্ষায় ফেলেছ আমাকে, উত্তীর্ণ হতে পারিনি।
আমি জানি একদিন আমি শুধু উত্তীর্ণই হবো না, আমি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হবো।
যেদিন আমার পকেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে
সেদিন তুমি একবারও গিফট নিতে রাজি হবে না-এ আমার মন বলে সারাক্ষণ।
এও জানি, যেদিন আমার পকেট ফাঁকা থাকবে
সেদিন তোমার সুন্দর একটা ড্রেস পছন্দ হবে, মুখে উচ্চারণ না করলেও মনে মনে বলবে-
আহ্! ড্রেসটা যদি আমাকে কেউ গিফট করতো! ড্রেসটা আমাকে বেশ মানাতো!
আমি তোমাকে ট্রায়াল দিতে বলি, ততক্ষণে তুমি বুঝে গেলে আর একটু পরেই আমি সেলস্ বয় কে বলব-
‘এটা প্যাক করে দাও তো’!
তুমি যখন ট্রায়াল রুমে ট্রায়াল দাও, তখন কিন্তু আমি আমার পকেটে বারবার ট্রায়াল দিচ্ছি
ভাঙতি টাকা আস্ত করলে কত টাকা হয়, বিকাশের ব্যালেন্স চেক করছি।
সব মিলিয়ে সামান্য শর্ট পরছে। অসুবিধা নেই সামান্য কিছু না হয় তোমার থেকে লোনই নেয়া যাবে।
শরীর থেকে ঘাম ঝড়ে পড়ে মনের গহীনে। ড্রেসটা নিতে পারবো তো?
ট্রায়াল রুমে আমার ডাক পড়ে।
‘এই-দেখতো আমাকে কেমন লাগছে ড্রেসটাতে?
আমি কন্ঠস্বর নামিয়ে বলি, খারাপ না, চলে!
আমি জানি পকেটে যদি টাকা থাকতো তাহলে আমি বলতাম-
‘অনেক সুন্দর! সময় নাই তাড়াতাড়ি কর।
সেলস্ বয়কে ডাক দিয়ে বলতাম-
‘তাড়াতাড়ি প্যাক করে দাও তো’!
তোমার মুখের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে তোমার আনন্দের রেখাগুলো উঁচু হতে দেখতাম
মনের গহীনে খেলে যাওয়া হাসির দোলা খেতে দেখতাম।
বিধি বাম, সব হিসেব নিকেশ ফেল করে গিফটা শেষ পর্যন্ত আর নেয়া গেল না।
মনের শান্তির জন্য বলি-
অসুবিধা নেই, আগামীকাল কিনে পাঠিয়ে দিব তোমায়।
তোমার মুখের চেহারা যাই বলুক
তোমার মন কিন্তু বলছে, এত কম টাকা নিয়ে কেউ মার্কেটে আসে?
লোকটাকে দেখতে মনে হয়, বেশ টাকা-পয়সাওয়ালা
পকেটে টাকা নেই, নাকি আমাকে ভালোই বাসে না!
আমার জন্য তার কোনো বাজেট নেই, শুধু শুধু উড়ন্ত ভালোবাসা দেখাচ্ছে।
আমার কী যে লজ্জা হয় তখন, মন চায় পকেট খুলে সব দেখাই
মনে চায় মনটা খুলেও দেখাই আরেকবার
‘এই দেখ আমার ভালোবাসাটা কত্ত বড়!’
যাক, দেখাদেখির দরকার নেই, দরকার শুধু ড্রেসটা একবার হলেও গায়ে তোলা
আর অতীত স্মৃতিকে একটু একটু করে ভুলে যাওয়া।
কারণ-
স্মৃতিগুলো যত ওড়ে, হৃদয়টা তত পোড়ে।
© ড. নজরুল ইসলাম খান || স্মৃতি ওড়ে হৃদয় পোড়ে|| চব্বিশ পাঁচ দুই হাজার বাইশ ||
১ Comment
congratulations