আশাবাদ
[সেলিনা আখতার]
ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে
মানুষ নামের জীবেরা
শুধু মাছ ভাত আর মাংস ই খায় না
কেউ কেউ ঘৃণা ও কন্ঠ পর্যন্ত গিলে থাকে।
সমাজ-সংসারের পরিত্যক্ত সহানুভূতি নিয়ে
এরা টিকে থাকার চেষ্টা করে ।
বেঁচে থাকার তাগিদ এদের জীবনকে
মূল্যহীন করলেও মৃত্যুহীন করতে পারে না ।
তাই গায়ে থাকা অনাদর আর
অসম্মানের চাদর অনায়াসে খুলে
এরা শক্তি খুঁজে ফেরে ।
সান্ত্বনা খুঁজে -‘এই পৃথিবীতে
শেষ হবে সমস্ত পাশবিকতার ।
ক্ষয় হবে সাজানো প্রাসাদ ,
ফুলের বাগান আর মায়াবী সম্পর্কগুলো।
আলো বাতাসহীন স্যাতস্যাতে গর্তের মাঝে
সুকঠিন বাস্তবতায় মিশে যাবে
অধিনস্তের প্রতি কঠোর
শাসকের শরীরটিও।’
নির্ভেজাল দুঃখ পিড়িত মানুষগুলো
রোদহীন বিকেলের নির্মল দৃষ্টি দিয়ে
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে
তথাকথিত সমাজের ঘৃণাপাত
থেকে মুক্ত হবে একদিন।
মুক্তি পাবে জাত-পাত !!
পাড় ভাঙ্গা নদীর ঘাটে জমবে
নাতিশীতোষ্ণ পলি মাটির স্তর।
বিতশ্রদ্ধ মন, বিভ্রান্ত ভালোবাসার
গণ্ডি পেরুবে । বসতি গড়বে ভদ্র পাড়ার।
খোলা বারান্দার মিষ্টি রোদে পিঠ রেখে
তারাও নিঃশ্বাস ফেলবে স্বাধীনতার!!
ধোঁয়া ওঠা ভাতের থালায়
গলিত ঘিয়ের সাথে ঘৃণা নয়;
স্বাদ পাবে ভালোবাসার, সম্মানের।
ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে এই আশাবাদ।।
০৭/১২/২০
কুড়ানির ভালোবাসা
সেলিনা আখতার।
আটপৌরে জীবন, পুরাতন ব্যস্ততা
কুড়ানির দু’চোখ,
না’না কাজের ভাঁজে নিবিষ্ট।
সে বোঝে, শিশুর ঘুমিয়ে থাকার
অবকাশটুকু নিংড়ে নিতে।
স্বামীর পছন্দের খাবার,
শ্বশুর-শাশুড়ির বয়সের আয়েশটুকু।সন্ধ্যেবেলার বাতিটাও যেনো,
মহা আলস্যে তারই অপেক্ষায় ।
কাজের ফাঁকে কুড়ানী খোঁজে,
শিশুর খিলখিল হাসির মোহনীয়তা।
ঘামে ভেজা শরীরের মাঝে নেই
সুগন্ধি নিকানোর বাতুলতা ।
অবসন্ন কুড়ানী,
নিশীথের উষ্ণতা ছড়াতেও ভুলে না।
শুধু ভুলে যাই –
জানালার কপাট খুলে,
দূর সীমানায় দৃষ্টি দিয়ে
দূরান্তে ছুটে চলা পাখিদের মতো
উল্লাস করে প্রিয় মানুষটিকে একবার
বলে উঠতে-‘ ভালোবাসি তোমায়’।
তার বুকের ভালোবাসা,
সমস্ত কাজের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
হাঁরিয়ে যাই অহরহ।
কুড়ানীর নিরব দুটি চোখ
ভালোবাসা খুঁজে ফেরে তন্নতন্ন করে
স্বামীর রক্ত জমাট দৃষ্টি আর
অন্যদের অসন্তোষের ভাষায় ।
ছিটে ফোটা প্রাপ্তির আশায় কুড়ানী
আটপৌরে স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাই
পুরাতন ব্যস্ততার মাঝে,
নীরব ভালোবাসায়।
ভালোবাসা নয়, অভ্যেস
সেলিনা আখতার
সুখ কিংবা দুঃখে,
সময়ে কিংবা অসময়ে
কখনো বলবো না ,তোমায় ভালোবাসি’।
তোমার প্রতি মনোযোগ?
ওটা আমার জন্ম জন্মান্তরের অভ্যেস।
সকালে বিছানা থেকে উঠে
যখন স্নানঘরে গলা সাধো,
আমি তোমার শোবার স্থানটায়
শ্রদ্ধাভরে বিচরণ করি।
তোমার বালিশে মুখ রেখে
তোমার শরীরের গন্ধ মাখি
এটা আমার অভ্যেস।
তোমার চায়ের কাপে
ফেলে রাখা চা টুকু
কাজের ফাঁকে চুমুক লাগাই ।
কাপে ঠোঁটের জায়গাটাতে
ভালোবাসার স্পর্শ আমার অমৃত সমান।
ভালোবাসি বলে নয়।
অফিস যাওয়ার মুহূর্তটুকু
এক নিমিষ চেয়ে থাকা ,
আর একটু ছুঁয়ে দেওয়া হাত
প্রতিদিন শপথের নতুন মাত্রা এনে দেয়।
রান্না শেষে টেবিল সাজিয়ে
তোমার পথের দূরত্ব মাপা ,
এটা ও আমার অভ্যেস
ভালোবাসি বলে নয়।
তোমার ভালো টুকু বা মন্দের ভাগ
সবটাতেই মঙ্গল খুঁজে নেওয়া
আমার নিত্য বেলার অভ্যেস।
কখনো খুঁজে দেখি নি ভালোবাসা কি?
কি আছে ভালোবাসায়?
অনেকগুলো অভ্যাসের নাম যদি
ভালোবাসা হয়, তবে আমি-তাই!!
বলবো না কখনো ভালোবাসি।
আমার সন্ধ্যাকালীন জীবনে
তোমাকে একমাত্র প্রদীপ ভাবাটাও
আমার ইদানিংকার অভ্যেস।
তোমার আমার মিলিত জীবনের
একমাত্র অশ্রুর তরবারি
কতবার পরিশোধিত করেছে
দুটি হৃদয়ের অসামঞ্জস্য টুকুকে ।
তোমার মাঝে পলিমাটির সংমিশ্রণে
আর্দ্রতা খুঁজে ফেরা আমি ,
একটু একটু করে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি।
বৃক্ষের মতো নীরবতায় চেয়েছি তোমায়।
অভ্যেসের ছলে।
ভালোবাসি তোমায় বলবোনা কখনো
সবই অভ্যেসের দখলে।।
২ Comments
সাবলীল প্রকাশ
congratulations