সুখের অসুখ
সালমা ডলি
২২.০৭.২০২১
তুমি আমার হাত দেখে দুষ্টুমির ছলে বলেছিলে,
একদিন রাজরানী হবে!
আমি কি বলেছিলেম মনে আছেতো?
তোমার সঙ্গে থেকে ঘুটেকুরানী হবো।
জানোতো, শুক্লাতিথিতে তিলকঠাকুরও সেকথা বলেছিল একদিন।
হয়ত সেদিন অলক্ষ্যে হেসে ছিলেন ঈশ্বর,
তাইতো তোমাদের বর সত্যি লেগে গেল!
এখন আমার শ্বেতপাথরে পা,
সোনার পালঙ্কে গা
রুপোর থালায় আহার
ঝর্নার জলে স্নান,
সামনে এগুলে শীষমহল,
পেছনে মতিমহল।
যখনি বলি সাজবো,
মালিনী গাঁথে মালা
দাসীরা বাটে হলুদ, চন্দন
তৈরী করে কেসার,গোলাপ পাপড়ি দিয়ে
কাঁচাদুধের হৌজ।
দূরন্ত চুলে হীরের কাটা।
যখনি বলি ঘুমবো,
রাজকীয় পাখায় ঠান্ডা দোল,
বাজে নিদ্রাবিষ্ট তানপুরা,
হঠাৎ কাঙ্খিত শান্তির ঘুম দুঃস্বপ্নে ভেঙ্গে যায়।
মাঝরাতে শুনি রংমহলে
নর্তকীর ঘুঙরের চিৎকার।
রাত শেষে হীরা-জহরত সমেত ক্লান্ত,
নেশায় ঢুলুঢুলু রাজা সাহেবের আগমন।
ঠিক তখনি বুকের বামপাশে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
রক্তের সুড়ঙ্গ কেটে কেটে বের হয় একটা সাপ।
গায়ে বালুচরী নকসা,
লাল গোধূলী রঙের চোখ,
হলুদ হাসি,
দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ।
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে আমায়।
আমার সমস্ত সোনার গহনায় ধরে শ্যাওলা,
মখমলের বিছানা হয় স্যাঁতস্যঁতে।
সেই সাপটা কে জানো?
সেই সাপটা আমার স্মৃতি
মহলে ঢোকার সময় যাকে ফেলে এসেছি
বালুচরে সুখের ভাঙ্গাঘরে।
যে চেয়ে আছে অহর্নিশ পথপানে,
চাইলেও পেছনপানে তাকাতে পারিনা আমি।
আমি যে রাজমহলে রানী,
ময়ুর সিংহাসন আমার।
হাতী-ঘোড়া,ফৌজ-প্রজা সবই আমার
তবু ঘুরে বেড়াই একা,
একদমই একা।