সন্ধ্যা’র চোখে রাত নেমে এলো
[সালেম সুলেরী]
{কলকাতায় সুকন্ঠী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের দেহাবসানে}
সন্ধ্যা’র চোখে রাত নেমে এলো, সন্ধ্যার দেহে রাত,
সন্ধ্যা এখন নীরবকন্ঠ, শোকাহত সংবাদ।
‘ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা, আর ডেকো না’তো কেউ,
হয়তো কিছুই নাহি পাবো’ বলে আকাশে মেঘের ঢেউ..।
‘এ শুধু গানের দিন’ বলে যার– আজীবন গান বলা,
জানিনা ফুরাবে কবে এই পথ–‘ শেষ হলো জান, চলা!
লতাজী’র পিছু আকাশমন্চে সন্ধ্যাতারা’র মেলায়
স্বর্গবাসীকে গান শোনানোর মেতে ওঠা নবখেলায়–
সন্ধ্যা জ্বালালো মৃত্যু-সেঁজুতি, পনেরো ফেব্রুয়ারি,
হায় দু’হাজার বাইশে’র বাঁশি, আহারে গীতের নারী
শীতের পিঁড়িতে সলিল সমাধি, সাত দশকের শাসন,
মার্চের চারে, এক তিরিশের আশ্বিনে অভিবাসন–
জন্মতিথিতে মাতা হেমপ্রভা, পিতাও নরেন বাবু
গানের গহীনে শিশু সন্ধ্যাকে সুরে করে সুখী, কাবু।
ওস্তাদ ‘বড়ে গোলাম আলি’ ও খ্যাতিমান সুরবাজ
রাগ মালকোষ, ইমন এবং উচ্চাঙ্গের ভাঁজ–
গলা কারুকাজে সেরাদের সেরা দেবীসম সুরদেবী,
পূজোর গানেও প্রভূ নিবেদিত, ঈশ্বরে দূরসেবী।
বাংলা’র কবি শ্যামল গুপ্ত– ছেষট্টিতেই স্বামী
যাঁর গানে কতো সুর সংগত, যে আলোয় নামি-দামী।
রাধিকার চেয়ে সাধিকা বানাতে স্বামী-সন্তান সবাই
দেখেছে গলার গোপন জাদুটি, তারুণ্যময় প্রভাই।
বিদায় বঙ্গ-বিভূষণ’ময়ী, শেষ প্রতিবাদ জানি,
রাষ্ট্র তোমাকে শেষবেলা এসে দিয়েছে ভূষণখানি,
নাও নি পদক, ফিরিয়ে দিয়েছো, এড়িয়েছে কতোযুগ,
তুমি শ্রোতা মিলে উপভোগ দিলে– প্রত্যাহারের সুখ।
পর্দার সেরা জুটি উত্তম, সুচিত্রা সেন– রমা
হেমন্ত আর সন্ধ্যার গলা– শ্রেষ্ঠ পরিক্রমা।
সাদাকালো থেকে রঙিন ছবিতে যতো গড়া নবযুগ–
পর্দার সেই মহারসায়ন– সন্ধ্যা’য় উন্মুখ।
মৃত্যুমহান– তার ছলনায় ভুলবো না, ভুলবো না..
মধু মালতী’র নকশা কাঁথাটি হৃদ-দেহে, খুলবো না।
সুরের মহিমা কি করে সহি মা– তুমি গান তুমি প্রাণ,
তোমাকে হারিয়ে বাঙালি পাগল, হৃদভূমি খান খান।
যতোদিন প্রাণে প্রিয় কান আছে, শ্রবণে রয়েছে গতি,
ততোদিন নেবো সন্ধ্যা’র সুধা, রেখো প্রভু সঙ্গতি।
স্বর্গীয় হোক বিদেহী আত্মা, গলাটিও থাক তাজা,
পরকালে চাই গীতময়ী দি’কে, ফিরে চাই ছিলো যা যা।
মাত্রাবৃত্ত # ফেব্রুয়ারি ২০২২, নিউইয়র্ক
# salemsuleri.ss@gmail.com