মুস্তাফা জামান আব্বাসী ও আসমা আব্বাসী’র বিবাহ বার্ষিকী, ষাট দশকের আলোড়িত প্রেম, জসীমউদ্দীনে’র ঘটকালি
–সালেম সুলেরী
পাত্র >> সঙ্গীতসম্রাট আব্বাসউদ্দীন-পুত্র মুস্তাফা জামান আব্বাসী। কনে >> সুসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী’র ভাগ্নি আসমা আব্বাসী। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর সিলেটে মহাসংযোগ। ষাট দশকের আলোচিত বিয়েটি সম্পন্ন হয় ২০ জানুয়ারি। এরপর এক সপ্তাহ ধরে চলে অনুষ্ঠানাবলী। উল্লেখ্য, উভয়ের মধ্যে প্রেম ছিলো অনেকটা গোপনীয়তায়। যা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন তৃতীয় পক্ষের একজন। তিনি সুবিখ্যাত পল্লীকবি– জসীমউদ্দীন আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণ-তরুণী’র ঘটকালি করেছিলেন।
আব্বাসী ভাই পারিবারিক সম্পর্কে আমার ফুপাতো সহোদর। আসমা ভাবী আমার চিরশ্রদ্ধার এক মহান অভিভাবক। আমার লেখক জীবনের শ্রেষ্ঠতম অনুপ্রেরণাদাত্রী। আমার একাধিক কবিতা ওনার ঠোঁটস্থ। ২০১৬-তে অনুষ্ঠান ছিলো অ্যামেরিকার ফিলাডেলফিয়ায়। বিশেষপর্বে আব্বাসী ভাই-এর গান, আমার কবিতা। এছাড়া অন্যান্যদের কবিতা পাঠ, সঙ্গীত পরিবেশনা। প্রবাসকবি হাসানাল আব্দুল্লাহ’র গাড়িতে আমরা গেলাম। অনুষ্ঠানে কথা ও কবিতা পরিবেশনে আমন্ত্রিত হলেন আসমা ভাবী। তিনি সেদিন নিজের কবিতা রেখে পাঠ করলেন আমাকে। অর্থাৎ শুধুমাত্র আমার কবিতা। বললেন, প্রিয় কবিতা পড়তে বেশি পরিতৃপ্তি পাচ্ছি। পড়লেন >> সকালে ফোন দিও, বিকেলে মন দেবো।
আব্বাসী-আসমা দম্পতির সঙ্গে আমার পাহাড়সম স্মৃতি। সিলেট-রংপুর ভ্রমণেও কুড়িয়েছি মুক্তো-মানিক।
কন্ঠকর্মা মুস্তাফা জামান আব্বাসীর প্রিয়দিন জন্মদিন ০৮ ডিসেম্বর। ২০১৭-তে ৮০ বছরে পদার্পণ করেন। গান-লেখা-সংগঠন-সফর আর মহান সৃষ্টিকর্তার গুণকীর্তন। বয়েস বাড়লেও তারুণ্য যেন আজীবনের লালিত সম্পদ। কণ্ঠে আড়ষ্ঠতাও প্রশ্রয় পায়নি। যেন চিরদরাজ, প্রবাহবান, প্রসারমান। পিতা কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ। মা বিশিষ্ট কবি লুৎফুন্নেসা আব্বাস। সহোদর বিচারক মোস্তফা কামাল ছিলেন প্রধান বিচারপতি। সহোদরা ফেরদৌসী রহমান দেশের শীর্ষ কণ্ঠশিল্পী। স্ত্রী আসমা আব্বাসী লেখিকা, রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। অসাধারণ বাগ্নী, কথা’র রাজকুমারী। পাঠপ্রিয় গদ্য-পদ্যের বই অর্ধডজন। কন্যাদ্বয় সামিরা আব্বাসী, শারমিনী আব্বাসীও গুণপনায় সুপরিচিত।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী অর্ধশত গ্রন্থের লেখকও। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘নজরুল-আব্বাস সেন্টার’-এর প্রবক্তা। আব্বাসী ভাই-এর একটি পারিবারিক নাম রয়েছে। তুলু, আর সহোদর-সহোদরা : দুলু, মীর্ণা। দুলু ভাই-এর কন্যা নাশিদ কামাল-এর ডাকনাম ইভু। নায়লা ও নাফিসা কামাল হলো– রিমি ও নুপু। সুমি, লাবনী– সামিরা ও শারমিনী’ আব্বাসীর ঘরোয়া নাম।
আব্বাসউদ্দীন দম্পতি ও দুলু ভাই, ভাবী প্রয়াত। তুলু ভাই, ভাবী– প্রবীণ হলেও সতত প্রাণবন্ত। পন্চাশোর্ধ বিবাহ বার্ষিকীতে আটলান্টিকপারের সাগর-শুভেচ্ছা। সঙ্গে নিবেদন করছি হৃদ-চিন্তার নিবেদিত পদাবলী।
পাঁচ প্রতিভার পুরুষ
–সালেম সুলেরী
কণ্ঠকর্মা মুস্তাফা জামান আব্বাসী ও পরিবারের সুকৃতির উদ্দেশ্যে
কথায় না বড় হয়ে কাজে মহীয়ান,
গলা যার কালোয়াতি, প্রাণ ভরা গান।
লেখাপড়া প্রণিধানে সমাবর্তন,
শিখরিনী নারী তাঁর, ধোয়া বর্তন…
সবিদ্য সংসার যথাবিধি চল
স্রষ্টার ধ্যান-ধাঁচে যথা অবিচল।
সিদ্ধিও কতো পথ, কতো গুণপনা
পাঁচটি আঙ্গুল হাতে– তাতে বনিবনা,
কড়ে– মানে করো সেবা, পিতা মাতা জন,
তর্জনী– অর্জনে, সংসার, ধন।
মধ্যমা– মেধাসেবী, গান লেখালেখি,
কনিষ্ঠা– কারো নয়, মহাজনে থির–
সৃষ্টিকর্তা আর মহাপৃথিবীর।
এইতো হাতের পাঁচ, দশ ঠাঁটে স্বর,
ঠাঁটে ঠাঁটে রাগ গড়ে সুরের খবর–
গান তবে মন ভরা, প্রাণে সমীরণ,
বিশুদ্ধতার সুখ বেচিছে ক’জন ?
কোকিল লুকিয়ে বাঁচে, কাকের বাজার
বিধি- গীতি পলাতক, সমাধি মাজার।
পুরুষে প্রতিভা পাঁচ– পৃথিবীর দাবি,
নারী তার পরিবার, খোঁজে বাহু, চাবি
ধলিজাল সংসারে সন্তান শুভ,
জায়া-পতি যদি বোনে সমঝোতা, উভ…
এ রকম বেঁচে থাকা, পারিজাত ঘর
নামে-ধ্যানে সমাগম- সুখের খবর,
মুঠো থেকে, গলা থেকে ছড়ালেন জ্যোতি-
সেরা তাঁকে বলা হোক– দেবো সম্মতি।
দেবো আরো শ্রদ্ধার বীরবর তাজ,
যাচনে সুভাষ তিনি, সেরা তাঁর কাজ।
সুকণ্ঠ সমাহারে পিতা যার শ্র্রেয়
মাতা ছিলো সহ-গুণে, প্রতিদান দেয়…
ভ্রাতা-বধু সহোদরা সন্তান, তারা
তুলো- মনা তুলু ডাকা বাবা-মা’কে হারা…
প্রতিভা পুরুষ ছেলে হরঘড়ি চোখে
গুণের গোলাপ হলো– অমর্ত্যলোকে।
বিরাজিত বহুমুখী, সতত গতিক,
জীবন্ত কীর্তি হে অগ্রপথিক।
মুস্তাফা জামান বা আব্বাসী নামে
খ্যাত এক সন্ততি গীতি-সংগ্রামে।
লেখনীতে পুরঃসর, প্রাঞ্জল, যোগী,
গবেষণা-রসদের স্বাদ উপভোগী।
সমাজের সৈনিক, সেবকের ছায়া,
পৃথিবীর পথে-রথে মহাজাল মায়া…
বিশ্বজালের যুগ, ফেসবুক, ধারা
আধুনিক উদ্বাহু, ভয়-ভূত তাড়া,
হলাহল, চলাচল, প্রশান্তি প্রিয়–
আব্বাসী– হে যুগল যুগ যুগ জিও!
লেখক : সালেম সুলেরী, আমেরিকা।
স্বরবৃত্ত: salemsulri.ss@gmail.com
১ Comment
Congratulations