বিরামহীন এই যুদ্ধ
বিরামহীনযুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ
এপারে যুদ্ধ, ওপারে যুদ্ধ
বিরামহীন এই যুদ্ধ ।
সারাদিনভর যুদ্ধ করে নিস্তব্ধরাতে ক্লান্ত যোদ্ধা স্বপ্নদেখে আসবে নতুনদিন –
তখন শান্তির হাওয়া ক্লান্তযোদ্ধার দু’চোখে দেয় চুম
আসে রাজ্যের যতো ঘুম.. ।
যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ
বিরামহীন এই যুদ্ধে
ছুটছে পথে ক্ষুধার জ্বালায়
লাগাম ছিড়ে সুখ যে পালায়
হাহাকারে ভাঙ্গে বুক
কোথাও কি নেই সুখ?
ডাস্টবিনেতে কুকুর-বিড়ালে আর মানুষে চলে যুদ্ধ
যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত দেহে ইট- শুরকি বিছানো পালঙ্কতে
স্বপ্নরা সব ভিড় জমিয়ে করে কত খেলা
কাল হয়তো আধাপেটে নয়তোবা খাবো মাছ-মাংস
ভাবতে ভাবতে ঘুমের রাজ্যে উড়াল দেয় স্বপ্নের বুনোহংস ।
যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ
এপারে যুদ্ধ, ওপারে যুদ্ধ
চাকুরির বাজারে ছুটছে সবাই
তবুও স্বপ্নগুলো দেয় না জবাই
চোখের নিচে কালি জমে , তবুও রাতভর স্বপ্নেরা দেয়
কাঙ্খিত-পথ পাড়ি ।
যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ
অসুখের সাথে জীবনের যুদ্ধ
জীবনের সাথে মৃত্যুর যুদ্ধ
কেউবা হারে কেউবা জিতে
কেউ আবার মানে না হার
নতুন করে সংগ্রামী হয় যুদ্ধ বাড়ে তার ।
যুদ্ধ করে শুধুই যুদ্ধ..
একনীড় ভেঙ্গে মানুষ আরেক নীড়ে বাঁধে ঘর
আপনমানুষ ভুলে তখন পরকে করে আপন
ভাঙ্গানীড়ের মানুষটি করে শুধুই যুদ্ধ,
ভুলে যাওয়ার যুদ্ধ
অন্ধকারে যুদ্ধ করে ক্লান্তমনে দেখে নতুন সূর্য
যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ ।
ধর্ষিতানারী যুদ্ধ করে নেংড়াসমাজের সাথে
বাঁচার জন্য লড়াই করছে তবুও লোকে নিন্দা করে পাছে
ভয়ের সাথে চলছে লড়াই
সত্যের সাথে চলছে লড়াই
তবুও এই স্বপ্নে কাটায় রাত আসবে নতুন ভোর ।
যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ
বিরামহীন এই যুদ্ধে –
ব্যাধিগ্রস্থ সন্তানের চিন্তায় মা’র অশ্রু অবিরাম ঝরে
অদেখাকষ্ট রক্তবিন্দু হয়ে দেহ হতে শুধু পরে
সন্তানের শুশ্রূষায় দিনের পর দিন তমসার কতো নির্ঘুম রাত পরাজয় যেন মানে,
আকাশ-জমিন কেঁপে কেঁপে ওঠে বুকভাঙ্গা কাঁদনে,
আবার দিনের বেলায় বাঁচার তাগিদে যুদ্ধ চালায় অবিরত
কেউ দেখতে পারে না অসহায় মায়ের সেই ক্ষত
দিনশেষে সবাই ঘুমায়, মা যে জেগে রয়
সন্তানের চিন্তায় যেন শোকে পাথর হয়
দিন কেটে যায়, মাস কেটে যায় বছর ঘুরে বছর আসে
কান্নাগুলো পাথর হয়ে বুকেই চাপা রয়
তবুও মা’র যুদ্ধ চলছে শুধুই যুদ্ধ
মৃত্যু যখন করবো আলিঙ্গন শুরু হবে নতুন এক যুদ্ধ
এপারেও যুদ্ধ ওপারেও যুদ্ধ
বিরামহীন এই যুদ্ধ….
যুদ্ধ শুধুই যুদ্ধ ।।
মমতার প্রতিদানে হিংস্রতা নয়
কাঙ্খিত সুখের পদতলে লুন্ঠিত মান,
নতজানু বেদনাভরা ক্লান্ত মনপবন,
লড়াই এর পর লড়াই চলছে বাঁচাতে সন্মান।
সুখত্যাগী আত্নজা বাঁচাতে স্বীয় নারীত্বের অক্ষতযোনিতা।
দন্ডে দন্ডে পদতলে পিষ্ঠ হচ্ছে মানবিকতা,
ক্রূরমতি পৌরুষের শোষনের যাঁতাকলে,
বারং বার চলছে হেতায় নারীর শ্লীলতাহানি।
রক্তে মিশে থাকা নষ্টামি তবু নিজেকে ভাবে সে ভূস্বামী।
গভীর বিদ্বেষ তব মনতে মমতা মোরা যে জননী,
নিবৃত্তি দিয়েছে ভুলেছে সবই পরাকাষ্ঠা সে নারী।
বক্ষে লুকিত মমতার মহা সমুদ্রে স্বযতনে আগলে রেখেছে স্বামী,ছেলে,পিতা ও ভাইকে।
তবুও অধিক্ষিপ্ত কেন হবে মানবী তুমি আজ?
হিংস্রতা দিয়ে নয়,ভালোবাসা দিয়ে কর জয়,
তবেই প্রজন্ম তোমায় করবে উপগীত,
পৌরুষ তুমি থেকো না আর অসান্ত্বনীয়।
সর্বোত্কৃষ্ট হয়ে বসবে তবেই তুমি নারীর চিত্ত জুড়ে।
চার দোয়ালে আবদ্ধ জীবন
মেয়ে মানুষ গো কই মাছের প্রাণ,
মরবে না গো মরবে না,
তোমরা শুধু দেখলা দেহতারে
কোথায় আঘাত,কোথায় গরম খুন্টি আর জলন্ত সিগারেটের চিহ্ন।
দেখেলানা ফুটন্ত লাভায় হাবুডুবু খাওয়া মনতারে,
মরবে না গো মরবে না…
চার দেয়ালে আবদ্ধ এই ঘরকে স্বর্গ ভেবে,
নি:শব্দে কাটাতে পেরেছে যখন পচিশটি বছর,
বাকীটা জীবনও এই নি:সঙ্গ বলয়ের মধ্যে চলবে পথ
এই তো ভেবেছিলে…।
দিনের আলোর আড়ালে সহেছি রক্তচক্ষুর শাসন,
চাঁদ বলে পুড়িয়েছো সূর্যের প্রখর তাপে।
খাদ্য দিয়েছে,দিয়েছে ঘর নামক এক ভালোবাসাহীন নি:সঙ্গ জীবন ,
নিজের সুখ ভোগে মক্ত থেকে আমাকে করেছে সেবাদাসী।
ক্ষত-বিক্ষত মন থেকে অবিরত ঝরে পরা রক্ত,
আজ যেন বিশাল রক্ত সমুদ্রে রুপ নিয়েছে,
প্রতিদিন স্নান করেছি সেই সুমুদ্রে।
তোমরা শুধু দেখলে দেহতারে,
আমার মনটারে দেখলে না চেয়ে!
আজ হিসাব চাই,আমার জীবনের চব্বিশটা বছরের হিসাব,
সকল অবহেলার হিসাব চাই আজ।
তখন আমার জীবনেও ফাগুনেরা খেলা করতো,
রঙ্গিন স্বপ্নরা প্রাণ পেতো তোমার ছোঁয়ায়,
অপেক্ষারা মুখ থুবরে পরেনি তখনও,
“অপেক্ষা”শব্দটির উপর বড় অভিমান আজ।
মর্গে শুয়ে থাকা এই নিথর দেহটি নিয়ে আজ কত পরীক্ষা চলছে,
হিসাব বুঝি মিলছে না আজ তাদের,
নির্যাতেন চিহ্ন খুজছে হন্ন হয়ে,
আমার লেখা শেষ দুটি লাইন।
ভালো থেকো..
তোমার দেওয়া আঘাতের ভার বইতে অক্ষম আজ
ক্ষমা করো।
আঘাত কি শুধু শরীরে থাকে?
মনে থাকে না..!
যে মনের শক্তিতে দেহ চলে,
তাকে আর কত অবহেলা করবে তোমরা !
কত অভিযোগ করেছি,চিৎকার করে বলেছি বার বার,
তখন কেন নিরব ছিলে তোমরা?
যখন অনুভুতির মৃত্যু হল তখন খুঁজছো আঘাত!
আজ শুধু দুটি লাইন সত্যি হয়ে থাকলো,
বাকীটা আঘাতের কালো পর্দায় ঢাকা রয়ে গেল।
লেখক: রোকসানা মোর্তজা, কানাডা প্রবাসী কবি
১ Comment
ভাল। শেষের টা আরো ভাল