রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই-এর জন্মদিন, নিরন্তর শ্রদ্ধা
৯ এপ্রিল ছিল দাদাভাইয়ের জন্মদিন। ১৯২৫ সালে নানার বাড়িতে জন্মেছিলেন তিনি। ফরিদপুরের পাংশার সেকালের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সম্পাদক রওশন আলী চৌধুরী ও এয়াকুব আলী চৌধুরী ছিলেন দাদাভাইয়ের নানা।
দাদাভাইয়ের আসল বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মোখাইর উদ্দীন খান। শৈশবে মাকে হারিয়ে নানা বাড়িতেই তিনি বড় হন। পাংশা জর্জ স্কুলে পড়াশোনা করেন ।
হাটটিমা টিম টিম / তারা মাঠে পারে ডিম / তাদের খাড়া দু’টি শিং / তারা হাটটিমা টিম টিম।
কিংবা- বাক বাকুম পায়রা / মাথায় দিয়ে টায়রা / বউ সাজবে কাল কি / চড়বে সোনার পালকি।
এই দু’টো ছড়ার সাথে আমরা কমবেশী সবাই পরিচিত। কিন্তু এই ছড়ার রচয়িতা সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি। যার ছড়া আমাদের কোমলমতি শিশুদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, তাকে জানাটাও জরুরী নয় কি?
তার নাম রোকনুজ্জামান খান। ‘দাদাভাই’ নামের আড়ালে যার আসল নামটিই ঢাকা পড়ে যায়। কেন তিনি ‘দাদাভাই’?
এর পেছনেও রয়েছে এক গর্বিত ইতিহাস। রোকনুজ্জামান খান ‘দাদাভাই’ ছিলেন একজন সাংবাদিক, শিশু সংগঠক ও সাহিত্যিক। ১৯৫৫ সালে তিনি ইত্তেফাকে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এ দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’। তিনি ‘কচিকাঁচার মেলা’ ও দৈনিক ইত্তেফাকের ছোটদের বিভাগ ‘কচিকাঁচার আসর’-এর পরিচালক ছিলেন। ‘দাদাভাই’ নামে সংগঠন ও আসর পরিচালনা করেন। একসময় সবার কাছে হয়ে ওঠেন অসম্ভব জনপ্রিয় ‘দাদাভাই’।
দাদাভাই মূলত একজন শিশুপ্রেমিক। তাঁর দীর্ঘ জীবন কেটেছে শিশুদের প্রতিভা বিকাশ ও শিশুদের স্বপ্নের ভুবন গড়ার লক্ষ্যে। আমৃত্যু তিনি আগামী দিনের শিশুদের নিয়ে ভেবেছেন। আজকের বাংলাদেশ শিশু একাডেমী তাঁরই প্রস্তাবে গড়া। ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমীর সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৯৪ সালে শিশু একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি প্রচুর ছড়া কবিতা প্রবন্ধ লিখেছেন। ছড়ার বই ‘হাটটিমা টিম’এর প্রকাশ ১৯৬২ সালে । ছোট ছোট মজার কাহিনী নিয়ে লেখা ‘আজব হলেও গুজব নয়’ ঝর ঝরে ভাষায় লেখা আরেকটি অনবদ্য বই।
পারিবারিক জীবনে দাদাভাই ছিলেন দুই কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ‘বেগম’ সম্পাদক নূরজাহান বেগমও প্রতিভাদীপ্ত। ‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তাঁর শ্বশুর । রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।