রবীন্দ্রনাথের জীবনে সত্য ঘটনা।
একটা সময় ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে এই শিশুটিকে ছোট বেলার সত্যজিৎ রায় বলে চালানো হত।কিন্তু সেটি সঠিক নয়।আসুন জেনে নেই এই শিশুটি কে? …. একবার রবীন্দ্রনাথের সচিব অনিল চন্দ ও তাঁর স্ত্রী রাণী চন্দের ছয় মাসের ছেলের কান্না শুনে মধ্যরাতে নিজের বায়োকেমিকের বাক্স থেকে বেছে ওষুধ নিয়ে তাঁর বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভীষণ স্নেহ করতেন শিশুটিকে …. …. শান্তিনিকেতনে তখন অভিজিতই একমাত্র শিশু – সকলের কোলে কোলে সে খুব আদরে বাড়তে লাগলো। একদিন দু’পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পা-পা ফেলে চলতেও শিখল। এই শিশুটিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কত আগ্রহ, তার সমস্তটাই তাঁকে মুগ্ধ করে রাখে। অভিজিত যখন টলমল পায়ে ওনার দিকে এগিয়ে আসে, তিনি বলেন – এই কচি পা একদিন কত শক্ত হবে, কত দৃঢ় হবে – এর উপরেই ভর রেখে জীবন সংগ্রামে জয়ী হবে। অভিজিতকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ডাকতেন ‘‘যুবরাজ”। জ্ঞান হওয়ার আগে থেকেই অভিজিত চিনেছে রবীন্দ্রনাথকে। চলতে যখন শেখেনি, তখন থেকেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখমুখ ধুয়ে মায়ের কোলে চড়ে বাইরে এসে যার মুখ আগে দেখত সে, তিনি রবীন্দ্রনাথ। তখন থেকেই তার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল – ভোরে উঠে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথের কাছে আসা। মাঝে মাঝে যখন রবীন্দ্রনাথ থাকতেন না, সেই রবি হারা সকাল গুলিতে এই শিশুটি দু’চোখ অশ্রুতে ভাসিয়ে প্রকৃতির আর সকল দৃশ্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করত। একটু ভালো করে চলতে শেখার পর, সে একাই যখন তখন চলে আসত রবীন্দ্রনাথের কাছে – কোনোদিন তো বিছানা থেকে নেমেই ছুট দিত সে দিকে। তখন ওর মা তাড়াতাড়ি ছুটে পাকড়াও করে বাসিমুখ ধুয়ে জামাকাপর পরিয়ে নিজেই কোলে করে দিয়ে আসত রবীন্দ্রনাথের কাছে।
অভিজত রবীন্দ্রনাথের এসে দাঁড়ালেই, রবীন্দ্রনাথ লেখার টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের বৈয়াম থেকে তিনটি লজেন্স দিত ওর হাতে; এই ভাবে অভিজিতের দিন শুরু হত। …. শেষবার – যেবার অপারেশন হবে, শান্তিনিকেতনকে কান্নায় ভাসিয়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আসা হল কলকাতায় – পরদিন ভোরে যথানিয়মে অভিজিৎ রবীন্দ্রনাথের ঘরে গেল। রবীন্দ্রনাথ বিছানায় শুয়ে আছে, অনন্তে তাঁর দৃষ্টি – অভিজিতের উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালেন খাটের পাশে রাখা টেবিলের দিকে – লজন্সের বৈয়াম সেখানে নেই। অভিজিতের সেদিন খালি হাতে ফিরতে হল। রবীন্দ্রনাথের বুকে বড়ো বাজলো, সবাইকে ডেকে ধমকের সুরে বললেন, ‘‘এরা জানে আমার সাথে সাথে থাকে লজন্সের শিশি, সেই জিনিসেই এদের যত ভুল।” সঙ্গে সঙ্গেই বৈয়াম ভরা লজেন্স কিনে এনে রাখা হল। অপারেশানের পরের কয়েকটা দিন, এই লজেন্স পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল অভিজিতের, তবুও সে রোজ একটা বার অন্তত সকলের হাত ছিটকে আসত তার দাদুর ঘরে, তারপর এক গভীর মগ্নতায় শুয়ে থাকা তার দাদুর দিকে চেয়ে থাকতো কিছু সময় শান্ত হয়ে, একসময় আপনা থেকেই অনেক খানি মন খারাপ করে বেরিয়ে আসত।
সেদিন বাইশে শ্রাবণ – রবীন্দ্রনাথ সবটুকু জাগতিক বন্ধন ছিঁড়ে পাড়ি দিয়েছেন অমৃতলোকে – ঘরে ভিড় উপছে পড়ছে, অভিজিতের কথা কারো মনে নেই, অভিজিৎ ওই ভিড়ের ভিতরই একটু ফাঁক করে পথ করে নিয়ে বিদ্যুতের মত এসে দাঁড়ালো ঘরে। একটি কথা নেই মুখে তার – সাদা চাদরে আবক্ষ ঢাকা গুরুদেব-দাদুকে দেখল স্তব্ধ হয়ে। তারপর যখন ফুলে ফুলে ঢাকা গুরুদেবের দেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নীচে – ওই হাজার লোকের ভিড়ের মাঝে একটি শিশু কণ্ঠ চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল – দাদুকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওরা – অমন করে নিয়ে যাচ্ছে কেন – দাদুর যে কষ্ট হবে – বাইশে শ্রাবণের সেই দিন থেকে অভিজিত আর কোনোদিনই কারও কাছ থেকে লজেন্স নেয় নি আর কেউ কোনোদিনই আর তাকে তার দাদুর মতো করে ‘যুবরাজ’ বলে ডাকেনি …. তথ্যঋণ : রানী চন্দ (অভিজিৎ চন্দের মা)…
★পুনশ্চ★ফেসবুকে এই ছবিটিকে “কবিগুরুর সাথে ছোট্ট সত্যজিত” বলে চালানো হয়। ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না | রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পরম স্নেহের “যুবরাজ”ছোট্টো অভিজিৎ চন্দ ….
১ Comment
congratulations