মিথ্যাবাদী তুমি
মাইন উদ্দিন
১৯৭২ থেকে ২০২০ সাল
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলো
তবুও তুমি কথা রাখোনি
বলেছিলে দেশ স্বাধীন হলে পাবো
মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার
তবে কেন আজ কথা বললে
যেতে হয় কারাগার?
বলেছিলে স্বাধীন হলে মিলবে চাকুরি
তবে কেন বেকারত্বের চাপে দিশেহারা
মা বাবার সার্টিফিকেটধারী হাজারো বকরি?
তুমি বলেছিলে দেশ স্বাধীন হলে
ঘুচবে অনিয়ম আর দূর্নীতি
তবে কেন আজ সকল কাজে দিতে হয়
ঘুষ আর উপরি বাড়তি?
বলেছিলে স্বাধীন হলে মা বোনের দল
বাঁধাহীন ছুটে বেড়াবে একাকী
তবে কেন আজ তাদের ইজ্জত লুটে
উল্লাস হয় ধর্ষণ সেঞ্চুরির?
তুমি বলেছিলে দেশ স্বাধীন হলে
কেউ মরবে না ভাতের তরে
তবে কেন আজ নিত্য পণ্যের দাম
নাগাল ছোঁয়ার বাহিরে?
বলেছিলে স্বাধীন হলে
শত্রু মুক্ত রবে আমার সিমান্ত
তবে কেন আজ ভিনদেশী আমলারা
করছে আমার দেশে রাজত্ব?
তবে কি স্বাধীনতার নামে
শিয়াল থেকে পেয়ে পরিত্রাণ
এসে দাঁড়িয়েছি
হিংস্র জানোয়ার বিধর্মীর পদতলে
যুদ্ধ থেকে আজ অবধি
যে হরণ করছে আমার স্বাধীনতা,সম্পদ
নানা ছলে বলে কৌশলে।
আজ আমার হক কথা বলার নেই অধিকার
সর্বদা অপেক্ষারত কারাগার
আজ আমার মিছিল,মিটিং,সমালোচনার নেই অধিকার
নিতে হয় অনুমতি সরকারী ক্ষমতার
আজ আমার শ্লোগান তোলার নেই অধিকার
রাষ্ট্রদোহী আখ্যা দেয় যখন বলি আল্লাহু আকবার।
তবে কেন এই স্বাধীনতা
জানোয়ার আমায় চুষবে বলে?
আজো পেলাম না স্বাধীনতার সুখ
হিংসাত্মক অপরাজনীতির যাতাকলে।
হে স্বদেশ তুমি মিথ্যাবাদী
মুক্তির আশ্বাস দিয়ে
কেড়ে নিয়েছো ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ
আজো শত প্রাণ নিত্য ঝড়ে তোমার বুকে
আজো শত নারীর ইজ্জত ধর্ষক লুটে
না মেলেছে আমার মুক্তি,না তোমার সম্মান
তবুও তোমার তরে জীবন দিবো হাজার বার
তুমি আমার বিজয় উল্লাস,আমার মা আমার সন্তান।
তবুও আমি স্বাধীনতার মান রাখবো সমুচিত
যদি আসে কেউ কেড়ে নিতে আমার স্বাধীনতা
কিলাবো তারে উপরে নিচে
নাচাবো তা-ধীক ধীনা ধীন।
আফসোস
বিবস্র নারীর রক্তাক্ত দেহ নাহি দেখিতাম
যদি আমি অন্ধ হতাম
নরপশুর বক্ষতলে স্ত্রীর আর্তচিৎকার নাহি শুনিতাম
যদি আমি বধির হতাম।
আজ আমার হাত দু’টি কেটে ফেলতে খুব ইচ্ছে করে
কি লাভ এই অকেজো হস্তদ্বয়ের
কিশোরী বোনের সম্ভ্রম হরণকারী নরপশুর
গলা চেপে যদি হত্যা করতে না পারি
কি লাভ এই দু’ পায়ের
যদি ধর্ষকের বক্ষে সজোরে লাথি না মারতে পারি।
আজ বড়ই অসহায় আমার বাকশক্তি
যদি নিজের চোখে দেখে,কানে শুনেও
প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে না পারি
নিপাত হোক ধর্ষকের মুন্ডু,
ধ্বংস হোক ধর্ষকের মদদকারী
শুধু এতটুকুই আমি বলতে পারি
আমি যেন অন্ধ,বধির আর বোবা হতে পারি।।।
ভাঙ্গছে শির দাঁড়
আজ দেয়ালে দেয়ালে শেওলা-ছাতার আচ্ছাদন
ব্লাকবোর্ডটি কালো মুখে আছে দীর্ঘক্ষণ
জানালার গ্রীল গুলোয় মরিচার আবরণ
বেঞ্চের তলায় জমেছে ধূলিকণা’র আস্তরণ
ছাত্রের মাথায় আজ পাব-জি গেমের সংকলণ
ছাত্রীর হাতের তলায় বড় পাতিলের জ্বালাতন
বাল্য বিয়ে আর কর্মের টানে খালি আজ শিক্ষাঙ্গন
বছর কয়েক পরে কে ধরবে দশের হাল,মূর্খ করবে সরকার গঠন।
শিক্ষকরা আজ সবজি লাগিয়েছে বাড়ীর পাশের উঠানে
কি করবে সে? বেতন ছাড়া হাড়ি চড়ে না উনুনে
সেলাই আর সংসার আছে শিক্ষিকার নিত্য রুটিনে
তবে আপসোস! দপ্তরি যখন হাত তুলে শিক্ষিকার সম্মানে।
বই-খাতা আজ ছনপাপড়ি, হাওয়া মিঠাই কেনার বাহক
বছর ঘুরলেই আসে রেজাল্ট বোর্ডগুলো আজ অটোপাসের জনক।
করোনায় সব করা যায় পাঠ্যদান ছাড়া
নিত্য নতুন আইনে পড়ে আমরা সবাই দিশেহারা
পাঠশালা আজ বন্দি তালায়,জাতীর ভাঙ্গছে হাড়
শিক্ষা ছাড়া মূর্খ সবাই সোজা নয় তার শির দাঁড়।
প্রবাস আত্মকথন
আকাশ ছোঁয়া উঁচু দালান কোঠায়
নিত্য হরহামেশা কাজ করে গরীব বাপের বেটায়
জমি বিক্রি,গয়না বন্ধক সব করেছে বিলীন
প্রবাস এসে টাকা কামাবে,প্রবাস যে টাকার মেশিন
নির্যাতন আর নির্মমতায় কাটে নিত্য দিন
সারা দিনের ক্লান্তি শেষে বিনিদ্র রজনীতে আঁকে স্বপ্ন রঙ্গিন।
বোন বিয়ে দিতে হবে,ভাইকে পড়াতে হবে
বৃদ্ধ মা বাবার ঔষধ আর সংসার খরচ
এ যেন নিত্য কথন,নিত্য যতন
স্বল্প আয়ে বিগ বাজেটের আত্মকথন।
মালিকের নির্যাতন সয়ে যায় চুপচাপ
করে না প্রতিবাদ,যদিও সে নিষ্পাপ
মালিকের সাথে করে না কভু ঝামেলা
জানে সে তাতে ফায়দা হবে না এক বেলা।
সারা মাস কষ্ট সয়ে
সব ভুলে যায় মাইনে পেয়ে
ভাই এর বই কিনতে হবে
বোনের গয়না শাড়ি,
মাস পরে বোনের বিয়ে
দিতে হবে পালকির সাঝ জামাই বাড়ি।
মায়ের অসুখটা আবার বেড়েছে
বাপের বেড়েছে দেনা
বাড়ি যাবে,ক্ষানিক ঝিমোবে
এ ঝামেলায় সে ঝামেলায় তা আর হয়ে উঠে না।
রোড পারমিটের যাঁতাকলে
বছর ঘুরলে আয় কামাই যাচ্ছে চলে
পেটে ভাতে কাটছে দিনপাত
প্রবাসী এরা মানুষ নয়! ভিন গ্রহের ভিন্ন জাত।
সকল প্রবাসীদের সম্মানে
বগলতলে ইটের খনি
জল ভরা কলস আজ সকলের ঘরে
তবুও স্বজাতি ভাই-বোন তৃষ্ণায় মরে
গোলাভরা খাবার রয়েছে হিমাগারে
তবুও অভুক্ত দেহখানি না খেয়ে মরে
সন্দুক ভরা জামা কাপড় রেখেছে যত্ন করে
অথচ স্বজাতি শিশু বৃদ্ধা বনিতা বিবস্ত্রে ঘুরে
চিকিৎসালয় গুলো এসির হাওয়ায় টালমাটাল
স্বজাতি প্রতিনিয়ত বোমার আঘাতে বেসামাল
নিত্য খাবার চাহানে আস্ত পশুর মুন্ডু
আধা খেয়ে আধা ফেলে,আনন্দে আছে বন্ধু।
গড়েছে সবাই তাদের সনে সুসম্পর্ক
কেউ করেছে মেয়ে দান কেউ বা পুত্র
কেউবা চুপিসারে করেছে দেনা
কেউবা তাদের নাট্যমঞ্চ সেনা
কারো কাছে ফের তারাই সুযোগ্য
তবে কেন আমি পারি না মেলাতে
আমার ঈমানী হিসেবি অংক।
মুসলমানের পবিত্র নগর বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত
বিধর্মীদের মিথ্যা আশ্বাসে ঈমান আজ পরাস্ত
ফিলিস্তিন নয় তো শুধু একটি ভূখন্ড
কোটি মুসলমানের আত্ম-সম্মান
যা আগলে রাখে এই হৃৎপিণ্ড।
যারা গেয়েছে মানবতার গান
স্বীয় দেশে বিধর্মীদের করেছে ভিটী দান
আজ তারাই নিজ গৃহে যাযাবর
আপন ভিটায় দিচ্ছে আপনা জনের কবর।
তোমরা যারা আজ আহারে ব্যস্ত
সাহায্যে তোমাদের মন নয় ন্যস্ত
ভাইয়ের চোখের অশ্রু তোমাদের করছে না আসক্ত
তবে কি বলবো আমি ঈমানে নয়
দেহখানি তোমার বে ঈমানে বিষাক্ত।
মুখে মিঠেবাণী বগলতলে ইটের খনি
নামে আর জুব্বায় মুসলমানি তবে কর্মে শয়তানি
আহা! আপসোস আজ স্বীয় সত্তায়
পরিচয়ে মুসলিম তবে কর্মে মুনাফেকি অতিমাত্রায়।
৮ Comments
ধন্যবাদ সম্পাদক মহোদয় কে, সকলের দোয়া ও ভালোবাসা কামনা করি
অসাধারণ।
অস্বাধারণ উপস্থাপন করেছেন। গুচ্ছ কবিতা আকার আয়োতন নিয়ে একটু ভাববেন।
সবগুলোই ভালো লাগলো
ধন্যবাদ
অসাধারণ প্রতিটি কবিতা । পাঠে মুগ্ধ হলাম প্রিয় কবি ।
congratulation; very good response.
sokol antorik suvecca.sokoler doya kamona kori
plz send by email: khair.hrm@gmail.com