সাংসারিক জীবনের খুঁটিনাটির মজার সব ভিডিও করে ইতোমধ্যে নেট দুনিয়ায় আলোচিত হাবিব-নাতালিয়া দম্পতি। তারা নিয়মিত ভ্রমণ, শপিং, রান্না-বান্না, খেলাধুলার ভিডিও আপলোড করেন ফেসবুক ও ইউটিউবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন নাতালিয়া-হাবিব দম্পতি। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রথমবারের মতো নাতালিয়া স্বামী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছেন আর ভাঙা বাংলায় সবার সঙ্গে কথা বলছেন নাতালিয়া।
গ্রাম সম্পর্কে অসাধারণ অনুভূতি প্রকাশ করে নাতালিয়া বলেন, ঢাকা শহরে অনেক গাড়ি, অনেক বাড়ি। গাড়ির শব্দে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। গ্রামটা অনেক সুন্দর। এখানে একটা ভালো ঘুম হবে। বাংলাদেশকে ও গ্রামকে ভালোবাসি।
তিনি আরও বলেন, আমাকে পরিবারের সবাই প্রিন্সেসের মতো ট্রিট করছে। সবাই খুব দ্রুত আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমাদের বেলারুশের গ্রামগুলো অনেক ছোট। তাই এভাবে উপভোগ করতে পারি নাই। এখানে সবার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।
নাতালিয়া কাজ করতে চান এদেশের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুদের জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে যাদের শিক্ষার সুযোগ করে দিলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। আমরা তাদের জন্য সহজ শিক্ষামূলক ভিডিও বানাব। নাতাশা রহমানকে দেখতে এসেছেন মো. সেলিম হোসেন নামে এক প্রতিবেশী।
তিনি বলেন, হাবিবের বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে। শুনেছি তাদের বাড়িতে বিদেশিনী আসছে। তাই বিদেশি বউকে দেখতে এসেছি। দেখে মনে হয়নি তাদের বাড়ি বিদেশ। আমাদের দেশের মানুষের মতো বাংলায় কথা বলে এবং সবার সঙ্গে মিশছে।
বাংলাদেশের ছেলে হাবিব এবং বেলারুশের মেয়ে নাতালিয়া। বসবাস করেন জার্মানিতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দম্পতির সাংসারিক খুনসুটি ও মজার মজার ভিডিও প্রতিদিন দেখছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষ।
এ দম্পতির পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। জার্মানির বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ স্টেডিয়ামে ‘স্টুডেন্ট জব’ করতে গিয়ে হাবিবের সাথে পরিচয় হয় নাতালিয়ার। ধীরে ধীরে তা বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে রূপ নেয়। অবশেষে ২০১৭ সালের ৯ জুলাই তারা বিয়ে করেন। চার বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের পৌনে দুই বছরের একমাত্র ফুটফুটে কন্যাসন্তান নাদিয়া রহমানও রয়েছে।
২০২০ সালের অক্টোবরের শেষে জার্মানিতে দীর্ঘ লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে শখের বশেই ‘নাতালিয়া অ্যান্ড হাবিব- দ্য মিক্স ম্যাচ ফ্যামিলি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ খোলেন। নাতালিয়ার ভাঙা ভাঙা বাংলা বলা ও বাংলা সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং ছোট্ট নাদিয়ার সরব উপস্থিতিতে অল্পদিনেই তাদের ইউটিউব চ্যানেলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম পাঁচ মাসেই পেয়ে যান এক লাখ সাবস্ক্রাইবার ও সিলভার প্লে বাটন। এই পর্যন্ত সাবস্ক্রাইবার দুই লাখ এবং পাশাপাশি ফেসবুক পেজেও ফলোয়ারের সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি। শুধু ইউটিউবে তাদের ভিডিও এখনো পর্যন্ত দেখা হয়েছে পাঁচ কোটি বার। ফেসবুকে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও ৬০ লাখের উপরে এবং প্রতিটি ভিডিও দেখা হয়েছে গড়ে ৫ থেকে ১০ লাখ বার।
হাবিব যুগান্তর প্রতিবেদককে জানান, নাতালিয়া ও মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে এখনো বাংলাদেশে আসা হয়নি। ডিসেম্বরে বড়দিনের ছুটিতে তিন সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে আসব। এরই মধ্যে টিকিট কনফার্ম করে রেখেছি। বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে সবার কাছে পরামর্শও চেয়েছি। নাতালিয়া জানান, বাংলাদেশে হাবিবের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। পাশাপাশি বাংলাদেশের সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলো ঘুরে দেখব।
বর্তমানে কর্মসূত্রে তারা জার্মানির পূর্বাঞ্চলের সাক্সনি অঙ্গরাজ্যের কেমনিজ শহরে থাকেন। হাবিবের আত্মীয়-স্বজনরা ঢাকায় থাকলেও তার দেশের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজলার ভোলাকোট ইউনিয়নের টিউরী গ্রামে। তিনি মোল্লা বাড়ির মৃত আবদুর রবের ছেলে। বাবার কর্মসূত্রে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং পড়াশুনা সূত্রে রাজশাহীতে (রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে) কাটে জীবনের বিভিন্ন সময়।
হাবিব ২০১২ সালে জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। বর্তমানে পড়াশোনা শেষে জার্মান একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং ফার্মে ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে নাতালিয়ার পরিবার বেলারুশের রাজধানী মিনাস্কের কাছাকাছি শহর বাবরুস্কে থাকলেও তিনি জন্মান চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে। নাতালিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি আসেন ২০১০ সালে। মিউনিখের লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে নাতালিয়া একটি কোম্পানিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত।