স্মৃতির আয়নায় ডিসেম্বর।
কাপ্তান নূর।
আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা ছিলাম। নারায়নগঞ্জের খানপুর হাউসে মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য একটা গোপন ট্রেনিং সেন্টার খুলেছিলাম। পাঁচবার আগরতলায় যাওয়া-আসা করেছি। একপর্যায় সেখানে মাননীয় মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরীর হাতে ২০ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলাম।
একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর সকাল ১০টায় মাননীয় মন্ত্রী জহুর ভাই আ স ম রব ভাইকে সঙ্গে নিয়ে খানপুর হাউসে আমার আস্তানায় হাজির হন। বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের নির্দেশে রেসকোর্স ময়দানে সারেন্ডা অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে আপনাকে উপস্থিত হতে হবে, তাই নিতে এসেছি। রেডি হন।
আরও বল্লেন, সারারাত জার্নি করে আগরতোলা থেকে আসলাম, চলেন তাড়াতাড়ি৷ এ সময় তাদের সামান্য চা-নাস্তার ব্যবস্থা করে নিজে জলদি রেডি হলাম। তারপর, মালিবাগে বোন রাবেয়ার বাসায় টিএনটিতি ফোন করলাম, বল্লাম ঘটনাটি। আরও বল্লাম তিনজনের লাঞ্চের ব্যবস্থা করতে, খেয়ে রেসকোর্স ময়দানে যাবো।
অতঃপর, আমার গাড়িতে করে তিনজন নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথে অনেক লাশ দেখতে পেলাম।
ঢাকায় পৌঁছে রব ভাইয়ের অনুরোধে, বইলী রোডের শুরুতে পুরনো সিআইডি অফিসের গেটে গাড়ি থামালাম।
রব ভাই নেমেই সেই সিআইডি অফিসের তালা বদ্ধ গেটে লাথি মেরে তালা ভেঙে ফেলল এবং উপস্থিত জনতাকে বল্লো, এ বাসা এখন থেকে ক্যাপ্টেন সাহেবের ভায়রা সাইদ ভায়ের জন্য নির্ধারণ করা হলো। দুইতিন পর তিনি আগরতলা থেকে পরিবার নিয়ে এখানে আসবেন। তাই ঘটেছিলো।
অতপর, আমরা তিনজন মালিবাগ আমার বোনের বাসায় পৌঁছালাম এবং লাঞ্চ করে, সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছালাম।
ময়দানে সে কি দৃশ্য!!
অনেক মানুষের ভিড়ে নিয়াজীসহ পরাজিত পাক আর্মির সেনারা রাইফেল নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একটু পরেই, ভারতীয় আর্মির কমান্ডার জেনারেল অরোরা ময়দানে উপস্থিত হলেন স-দলবলে।
কিন্তু, মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি কর্নেল ওসমানীকে দেখা গেলো না। শুনলাম তিনি সিলেটে আটকা পড়েছেন।
কাদের বাহিনীর কমান্ডার সিদ্দিকী-কে দেখা গেলো, বেশকিছু সিপাহী নিয়ে সেও উপস্থিত।
সে সময় মুক্তিবাহিনীর পক্ষে মাননীয় মন্ত্রী জহুর ভাইকে নিয়ে আমরা তিনজন দাঁড়িয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে আআত্মসমর্পনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে, আমরা তিনজন আবার গাড়িতে উঠলাম।
মন্ত্রী মহোদয় আর রব ভাইকে সার্কিট হাউসে নামিয়ে দিয়ে আমি মালিবাগে ফিরে এলাম।
ডিসেম্বর এই স্মৃতি কখনও ভুলি নাই, আর কখনও ভুলবোও না। জয় বাংলা।
লেখক: কাপ্তান নূর (দেশের একমাত্র প্ল্যানচেট লেখক)
২ Comments
Aj Montri Johur bhai nai..kintu Rob bhai achen tini
.o pore Montri hoyecilen…
Mukti bahinir pokhe surrender onusthane thakte pere nijeke obossoi gourobmondito mone korchi..
Joy Bangla..
congratulations.