বিচ্ছেদের দৃশ্যটা
[তসলিমা হাসান]
বিচ্ছেদের দৃশ্যটা অন্যরকমও হতে পারে।
মানুষটা আর থাকতে চাচ্ছে না,
এই নির্মম সত্যটা জেনে যাওয়ার পর তার কাছ থেকে নিরবে সরে আসার ভেতর একটা আলাদা রকমের সেল্ফ রেসপেক্ট কাজ করে।
একটা মানুষের সাথে সম্পর্ক হলেই যে তার সাথে সারাজীবন একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ হবে, এটা ভুল।
মাঝে মাঝে তো এমনও হয়,
দুজন মানুষ ভালোবেসে একটা নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল কাটিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেও, একসাথে থাকতে পারে না।
মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়।
মানুষের শৈশব কৈশোরে শরীরের পরিবর্তনের মতন মাঝে মাঝে মনেরও পরিবর্তন হয়।
প্রেম, ভালোবাসা, যত্ন সব’টা ঠিকঠাক থাকার পরও কখনো কখনো একজনের আগ্রহটা আর থাকে না।
যেই মানুষটাকে নিয়ে একটা দীর্ঘ পথ হেটে যাওয়ার কথা, সেই মানুষটার সাথে মাঝপথে থেমে যাওয়ারও একটা দুঃখ আছে।
তবে এই যে মানুষের মন ও আগ্রহের পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারার মতন ম্যাচিউরিটিটা
সবার হয় না।
মানুষটা আর একসাথে থাকতে চাচ্ছে না,
এই সত্যটা পুরোপুরি জানবার পর তাকে চলে যেতে দেওয়া উচিৎ..!
দোষারোপ নয়, ভালোবাসায় দোষ ধরতে নেই।
বরং এই নিরব বিচ্ছেদে একটা আনন্দ থাকে।
মুক্তির আনন্দ।
একটা মানুষের সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া আর একটা ভুল মানুষের সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া এক জিনিস নয়।
জোর করে আটকে রাখা যায়; জোর করে লয়্যালিটিটা আদায় করা যায় না। তারচেয়ে বরং কেউ থাকতে না চাইলে, তাকে চলে যেতে দেওয়াই সুন্দর।
এতে, সে পেয়ে গেলো উড়বার আনন্দ;
তুমি পেয়ে গেলে মুক্তি।
একটা মিথ্যে মিথ্যে ভুল মানুষের সাথে জীবন
কাটিয়ে দেওয়ার মতন ভুল থেকে মুক্তি।
মানুষটা চলে যেতে চাইলে, তাকে হাসতে হাসতে চলে যেতে দিয়ে; কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ফিরতে হয়।
এটা তোমার নিষ্পাপ আবেগ এবং
ম্যাচিউরিটির সমীকরণ।
প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষের হাত ছেড়ে চলে আসবার পথে, গলির মোড়ের দোকানে পেট ভরে কাচ্চি খেয়ে ঘরে ফিরতে হলে; বড় হতে হয়। আমরা বড় হই না;
মরে যাই। নিজের ভেতর নিজেই মরে যাই রোজ।
একটু একটু করে মরে যাই।
আমাদের জীবনভর দুঃখ পোহাতে হয়;
আমরা মেনে নিতে পারি না এই কারনে।
মেনে নিতে পারলে, পৃথিবীর কোন কিছুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং সবটাই স্বাভাবিক। সবটাই সত্য।
কারো চলে যাওয়াতে নিজেকে প্রতারিত ভেবো না; নিজেকে মুক্ত ভাবো। জয়ী ভাবো।
স্বাধীন ভাবতে শিখো।
কলমে- তসলিমা হাসান
কানাডা, ০২-০২-২০২২