ডোমিনো (Domino)
(জাহানারা বুলা)
পর্ব-২
আনোয়ার একদিন এসেছিল স্মৃতির বাসায় লন্ডন ফিরে যাওয়ার আগে। খুব অল্পক্ষণের জন্যে। স্মৃতি বললো, বাইরে কফি খাই চলো। কাজের লোক নেই। মাও নেই। আমারও কফি বানাতে ইচ্ছে করছে না। আনোয়ারও বললো- চলো তাহলে।
গুলশান ১২৬ নম্বর রোডের ওপাড়েই কফিশপ। ঠিক এভিনিউর উপরেই। সন্ধ্যার আলোছায়ায় খুব ভালো লাগছিলো হাঁটতে আনোয়ারের। তার উপর স্মৃতির শিফন ওড়নার আঁচলটা উড়ে উড়ে আনোয়ারের মুখের উপর গিয়ে পড়ছে। একবার হোঁচট খেয়ে পড়তে গিয়ে স্মৃতির কাঁধে যেয়ে পড়লো আনোয়ার। দু’জনেই সামলে উঠলো। ওদের কোনো ক্ষতি না হলেও ফুটপাতের উপর সারিবাঁধা সাইকেলগুলো ডোমিনোর গুটির মত কাত হয়ে পড়ে গেলো একের পর এক। আনোয়ার অনেকের গোলগোল গরম চোখের দিকে তাকিয়ে সরি বললো।
স্মৃতি ঠাট্টা করে বললো- উনি বিলেতি মানুষ। এমন রাস্তায় হাঁটতে পারেন না। প্লিজ ভাই, কিছু মনে করবেন না। তারপর মুখ টিপে হাসলো। আনোয়ার বললো- ও বাব্বা, তুমি মশকরাও করতে পারো! তোমার যেই পুলিশ পুলিশ হাবভাব! দেখো, মানুষের ভেতরটা নানান বর্ণের। তা কেবল পরিস্থিতিই বের করে আনতে পারে, স্মৃতি বললো।
কফি শপে বসে কফি খেলো। কিন্তু সেখানে আন্তরিকতার ঘার্তি ছিলো বলে স্মৃতি কিছুটা বিমর্ষ হলো। ভেতরটা কেঁদে উঠলো। স্মৃতি ভেবেছিলো আজ যাওয়ার আগে আনোয়ার কিছু একটা সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট জানাবে। আবার কবে আসবে তাও জানতে চাইলো না স্মৃতি। মুখ দিয়ে কথাই সরছিলো না। আনোয়ারের বাতুল কথা শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে উঠলো সে। কফিশপটা কেমন গোমোট লাগতে লাগলো। স্মৃতি নিজের মধ্যে রইলো না আর। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎ করেই আনোয়ার শুনতে পেলো- চলো, সন্ধ্যা ঘন হয়ে গেছে। মা ফিরেছেন হয়তো এতক্ষণে।
আনোয়ারের সেই হেয়ালিপনা, আরে বোস তো। ফিরুক না। তুমি তো বাড়ির কাছেই। আর কিছুক্ষণ বোস। কিন্তু, স্মৃতি যেন আর সহ্য করতে পারছিলো না। না, প্লিজ চলো। ভালো লাগছে না। আমার সাথে বোসতে তোমার ভালো লাগছে না? আশ্চর্য! কি হয়েছে? আমাকে বলা যাবে? না কিছুই হয়নি। আমি যাবো, ব্যাস।
অগত্যা বেড়িয়ে পড়তে হলো। আনোয়ার বাড়ির গেট থেকেই ফিরে গেলো। স্মৃতি একাই ঘরে ফিরলো। মা’ই দরজা খুললো আর প্রশ্ন করলো- কোথায় গিয়েছিলি। স্মৃতি কোনো উত্তর না দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করলো।…….. চলবে।
৭ জুন, ২০২২
ঢাকা।
২ Comments
Next
Congratulations