ডোমিনো
(জাহানারা বুলা)
(পর্ব-৪)
কান্নাকাটি শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো স্মৃতি। আলমারি খুলে একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করে নিলো। তাই পরে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলো। ড্রইং কাম ডাইনিং। সেখানকার সোফাতেই বসে ছিলো স্মৃতির মা। মেয়ে না খেয়ে আছে তাই অপেক্ষা করছিলো মা। স্মৃতির মা দেখতে পেলো মেয়ের মুখটা এখনো থমথমে। তাই আর এগুলো না। ঢাকা দেয়া ভাত তরকারি উদোম করে অল্প একটু ভাত আর লাউ চিংড়ির তরকারি তুলে নিলো পাতে। এক দুই লোকমা খেয়ে ঝট করে উঠে গেলো। হাত ধুয়ে নিয়ে শোবার ঘরে চলে গেলো।
বেড কভার সরাতে গিয়ে দেখলো পায়ের কাছে রাখা কম্ফোর্টারটা আজ গায়েব। শীত গরম বারোমাসই ওটা লাগে স্মৃতির। এসি ছেড়ে ঘুমোলে খানিক পরেই তো ঠান্ডা হয়ে যায় ঘর। তার উপর সিলিং ফ্যানও চলতে থাকে। স্মৃতি নিশ্চিত ওটা ধুতে নিয়ে গেছে ওদের বুয়া। বিড়বিড় করে বলছে- বুয়ার এই স্বেচ্ছাচারিতা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। অন্য একটা দিয়ে তো ওটা নেবে! অত্যন্ত বিরিক্ত হয়ে শেল্ফ থেকে একটা বই নিয়ে বিছানায় গেলো স্মৃতি। বেড কভারটাই গায়ে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
আনোয়ারও আজ ভীষণ আপসেট। স্মৃতিকে খুব দরকার ছিলো। কিছু কথা বলার ছিলো। কিন্তু, স্মৃতি রাগে দুঃখে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। তাই আর বলা গেল না কিছুই। টিকিট বদলে নতুন করে টিকিট করবে আনোয়ার। লন্ডন ফেরাটা খুব দরকার। স্মৃতিকে খবরটা কি করে দেবে ভেবে ছটফট করছে। অনলাইনে খুঁজে দেখলো সকালের ফ্লাইটেরই টিকিট আছে। সব কিছু বাদ দিয়ে আগে টিকিটটা নিয়ে নিলো। খুব সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে। তাই ধুপধাপ করে লাগেজও গুছিয়ে নিলো। বারবার স্মৃতিকে ফোন করছে। কিন্তু, রিং হতে হতে শেষ হয়ে যাচ্ছে, স্মৃতি ফোন রিসিভ করছে না। কি আর করার। ওকে না বলেই চলে যেতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে কথা সেরে নেবে অবশেষে ভাবলো আনোয়ার।
স্মৃতির ঘুম ভাঙলো অনেক বেলা করে। কান্নার একটা ক্লান্তি আছে। তার রেশও লম্বা। সেই ক্লান্তি আর রেশ স্মৃতিকে যেন ঘুমপুরীতে বন্দি করে রেখেছিলো। সোনার কাঠি রুপোর কাঠি না ছোঁয়ালে ঘুম যেন ভাঙবেই না।
ঘুম থেকে উঠে জানালার ধারে বসে রইলো কিছুক্ষণ। ওহ, রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছে মনে হচ্ছে। কি জানি কতক্ষণ হয়েছে। কী পরিচ্ছন্ন সব, মনেমনে উচ্চারণ করছে স্মৃতি। এমন মেঘলা গুমোট দিন খুব প্রিয় স্মৃতির। তখন কেবল গান শুনতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা, মোবাইলটা নিই। ইউটিউবে গান শুনি। তারপর ফ্রেশ হতে যাবো- ভাবতে ভাবতে জানালা থেকে উঠে এসে বালিশের নিচে হাত দিলো। মোবাইলটা নিয়ে জানালার কাছেই আবার বসলো। মোবাইলের স্ক্রিন লক খুলতেই দেখে ২৫ টি মিস কল। ক্লিক করে দেখলো সবই আনোয়ারের নম্বর থেকে আসা কল। স্মৃতি অবাক হলো- ভ্রু কুচকে ভাবলো, এত বার কল দিয়েছে আনোয়ার! ও বাব্বাহ! মনে মনে তিরস্কার করতে করতেই ফেইসবুক নোটিফিকেশনও চোখে পড়লো। ম্যাসেঞ্জার খুলে দেখলো এক লাইনের ছোট্ট একটি ম্যাসেজ- জরুরী ভিত্তিতে লন্ডন ফিরছি, পৌঁছে সব বলবো।
এর চেয়ে অবহেলা আর কি হতে পারে ভাবলো স্মৃতি। ঠিক তখনই সিদ্ধান্ত নিলো- নাহ, অনেক হয়েছে। এমন সীমাহীন অবজ্ঞা আর মেনে নেয়া যায় না। স্মৃতির স্বভাবটাই এমন। সারাক্ষণ ওলট-পালট সিদ্ধান্ত নেয় আর সিদ্ধান্ত ভাঙে। তাই, লন্ডন পৌঁছেই যখন আনোয়ার ম্যাসেজ পেলো- “ভালো করেছো চলে গেছো। তুমি থাকলেও আমাদের আর দেখা হতো না। আমার সাথে যোগাযোগ করার আর চেষ্টা কোরোনা প্লিজ”, আনোয়ার তখনও নিজের মধ্যে নেই। তাছাড়া স্মৃতি এমন বলতেই থাকে ভেবে ম্যসেজটা পড়ে আনোয়ার নির্বিকারই থাকলো। চলবে….
১০ জুন, ২০২২
ঢাকা।।