প্রেমে পড়েছি
[ড. নজরুল ইসলাম খান ]
নদীর পাড়ে জন্ম আমার
নদীতেই সাঁতার, নদীতেই গোসল, নদীর পাড়েই বেড়ে ওঠা।
কখনও অনুভব করিনি-
নদী আমাকে ভালোবাসে অথবা আমি নদীর প্রেমে পড়েছি।
যেদিন সন্ধ্যা নদীতে ট্রলার ডুবি হলো, সেদিন বুঝেছি নদী আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে।
কারণ নদীর পানিতে আমি ডুবে যাইনি, ভেসে যাইনি, নদী আমার প্রাণ কেড়ে নেয়নি।
সেদিন থেকেই আমি নদীর প্রেমে
পড়েছি!
আর গাইতে শিখেছি-
‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’—-
আমার জন্মস্থান থেকে অনতিদূরেই সমুদ্র।
সমুদ্র পাড়ের মানুষের জীবন যৌবন দেখে দেখেই বড় হওয়া। কখনও সমুদ্রকে অপর মনে হয়নি, শক্রও ভাবিনি।
মাঝে মাঝে মানুষের জীবন নিয়ে
ছিনিমিনি খেললেও সমুদ্রকে জীবন থেকে বিছিন্ন করতে পারিনি।
যে দিন থেকে আমার প্রিয়াকে কাছে পেয়েও সমুদ্র গ্রাস করেনি সেদিন থেকে আমার প্রিয়ার নয় আমি সমুদ্রের প্রেমে পড়েছি।
কিন্তু তারপরও আমি সমুদ্রকে ভালোবাসতে পারিনি।
কারণ জীবন নিয়ে হেলাফেলা করা সমুদ্রের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মায় না।
যেদিন আমি কক্সবাজার সমুদ্রের নোনা জলে গা ভেজালাম
সেদিন থেকে আমি সমুদ্রের বিশালতায় আটকে গেলাম।
এখন সময় পেলেই আমি তার কাছে ছুটে যাই
আর সুরে সুরে গাই-
‘সমুদ্রের ঢেউ উতাল-পাতাল হাওয়া-
জীবনের জয়গান মিলেমিশে চাওয়া।’
বড়ো বোন কবি নজরুলের সাথে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলেন
আমি কবি হবো বলে।
এ কথা জানার পর, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুনীল, শামসুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণ, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ সহ অনেক কবির কবিতা পড়েছি-
কখনো মনে হয়নি, আমি কবি হবো কিংবা কবিতা লিখব।
কিন্তু যেদিন থেকে আমি তসলিমা নাসরিনের কবিতা পড়তে শুরু করেছি-
সেদিন থেকে আমি অল্প অল্প করে তসলিমার কবিতার প্রেমে পড়তে শুরু করেছি।
একদিন তসলিমার শ্রেষ্ঠ কবিতার বইটি উপহার পেলাম আরেক তাসলিমার কাছ থেকে।
সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি কবিতা লিখব
ধীরে ধীরে
গোপনে গোপনে
একজন কাব্য-বোদ্ধা হয়ে উঠব।
কারণ আমি এই প্রথম কবিতার প্রেমে পড়েছি
কবিতাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
জানি না-
কবিতা আমাকে ভালোবাসে কিনা
কবিতা আমাকে বন্ধু ভাবে কিনা
কবিতা আমাকে কবি বানায় কিনা!
কবিতা আমাকে কোথায় নিয়ে যায়
আমি কবিতাকে কোথায় নিয়ে যাই
তার অপেক্ষাতে আছি দিবসজামি।
ভাবছি –
কবিতা হবে আমার প্রেম
কবিতা হবে আমার বিচ্ছেদ
তবুও থেমে যাব না আমি
কবিতা তোমার ব্যবচ্ছেদ!
কত সালে গল্প-উপন্যাস পড়তে শুরু করেছি এখন আর মনে নাই।
কয়েকটা বই যখন পড়া শেষ তখন অবধি সাহিত্য আমাকে ঔপন্যাসিক হতে নাড়া দেয়নি,
সাহিত্য রচনায় দোলা দেয়নি, সাহিত্যের প্রেমে আমি পড়িনি।
যেদিন থেকে আমি আহমদ ছফা’র অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী পড়তে শুরু করি-
সেদিন থেকে টের পেলাম
আমি ছফা সাহিত্যের প্রেমে পড়েছি।
আর শামারোখ এর ভালোবাসায় মজেছি।
শরৎ, সুনীল, বিভূতি আর শীর্ষেন্দুরা যে আমাকে ভালোবাসায় ফেলেনি
তাও হলফ করে বলতে পারবো না।
তবে লাল সালুর সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, নির্বাচিত কলামের তসলিমা নাসরিন, দেবদাসের শরৎচন্দ্র আমাকে
সাহিত্য লিখতে বাধ্য করেছে।
তাই নির্দ্বিধায় বলতে চাই-
আমি তোমাদের প্রেমে পড়েছি।
১ Comment
congratulations