পোড়া মন পোড়া ঘর।
(নারগিস দোজা)
পর্ব: ০১
তাহমিনার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল একটা হইচইয়ের শব্দে। মনে হোল রাস্তা থেকে আসছে। হাজারো গলা ছাপিয়ে ক্ষিন একটা কান্নার শব্দ। একটা বাচ্চার গলা। তাহমিনা বিছানা ছেড়ে উঠলো। আস্তে আস্তে বেডরুমের সাথে লাগোয়া বারান্দাটায় বের হয়ে উঁকি দিল। যা দেখলো ওর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। ল্যাম্পোস্টের সাথে আঁটসাট করে বেঁধে রাখা হয়েছে একটা মহিলাকে। জামা কাপড় ছেঁড়া এখানে সেখানে। সাতআটজন মহিলা পুরুষ মিলে তাকে থেকে থেকে লাঠি দিয়ে মারছে আর ছয়সাত বছরের একটা মেয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় আগলে রাখার চেষ্টা করছে। তাহমিনা আস্তে করে ঘরে ঢুকে গেল। ওয়াড্রোবের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে লতিফাকে দরজা লাগিয়ে দিতে বললো। তারপর তিন তলা থেকে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। তাহমিনাকে আসতে দেখে সবাই সরে দাড়ালো। তাকে মহল্লার সবাই মোটামুটি চেনে সন্মানের সাথে দেখে। এই মহল্লায় তাদের তিন পুরুষের বাসা। তাহমিনা আগিয়ে যেয়ে জানতে চাইল
— কি ব্যাপার মারছো কেন এভাবে ওনাকে?
— ওই একটা চুর খালাম্মা। মুদি দোহানতন রুডি লইয়া লোড় দিছে। ভিড়ের ভিতর থেকে একজন উত্তর দিল।
— চুরি করেছিলে কেন? মহিলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো তাহমিনা।
— মায়ে চুরি করে নাই। হেরা মিচা কয় ছোট্ট মেয়েটা উত্তর দিল।
— চুরি না করলে মারবে কেন? তাহমিনা বললো। তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বললো
— এভাবে কাউকে কেউ মারে? কি চুরি করেছিল সে?
— পাউরুটি। একজন উত্তর দিল।
একটা রুটির জন্য এভাবে কেউ কাউকে মারে?
— মারুম না ক্যা?চুরি করলে কি আদর করুম নি। এক ঘাড়তেড়ার চাঁচাছোলা উত্তর।
— চুরি করতে গেলে কেন? তাহমিনা মহিলাকে প্রশ্ন করলো।
— মায় তো রুটি চুরি করে নাই। টেকা দিছে তো!
— বার টেকার রুটি দশ টেকা দিয়া বাকিটাকা না দিয়া আয়া পড়ছে।
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা গেল। একটু ফিসফিসানি শোনা গেল।
–দুটো টাকার জন্য তোমরা ওকে এভাবে মারলে? তাহমিনা সবার দিকে তাকিয়ে বলল।
একজন যে রুটির দাম বলেছিল তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল
–এই মিয়া আগে কওনাই ক্যা যে বেডি রুটির দাম দিছে। হুদাই মারলাম খামাখা।
— আমারে বেডির পিছনে চিকরাইতে দেইখা আপনারা মারধর শুরু কইরা দিলেন। আমি তো কুন কথা কবারই পারলাম না। দোকানদার সাফাই গাইল। তাহমিনা ততক্ষণে বুঝে গেছে কান নিয়ে গেল চিলের মত ব্যাপারটা।তাহমিনা দোকানদারের হাতের বাকি টাকা দিয়ে সবাইকে বললো।
–খুলে দাও বাঁধনটা। আর ভবিষ্যতে এমন করলে তোমাদেরকেই আমি পুলিশে দেব।
লোকাল ফার্মেসিতে বসে আছে তাহমিদা। তার হাতে ডাক্তারের দেয়া প্রেশক্রিপশন কম্পাউন্ডার মহিলাকে ড্রেসিং করতে ভিতর নিয়ে গেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার এতো কিছুর পরও মহিলা একটা কথা বলেনি।মনে মনে ভাবছিল তাহমিনা।
–মায় না কথা কইতে পারে না। বলে উঠল ছোট্ট মেয়েটা। যেন তাহমিনার চিন্তার খেই বুঝতে পেরে।
——
চলবে
লেখক: কানাডা প্রবাসী কবি…
৩ Comments
Thank you
অসাধারণ লেখনী । হৃদয় ছুঁয়ে গেলো রেখে গেলো একরাশ মুগ্ধতা
ধন্যবাদ