দায়িত্বের অবসান
(তসলিমা হাসান)
সেদিন চৈত্রের শেষ সপ্তাহ, তোমার কাছে যাবো যাবো করে আর যাওয়া হলো না। তবুও বোধ হয় তুমি পথ চেয়ে ছিলে?
এ দিকে বাড়িতে মস্ত কাজ পড়ে গেছে, ছোট বোনের বিয়ে, মেহমান, বাজার সদাই কত কিসের দায়িত্ব সব আমার কাঁধে।
এর মধ্যে তোমার ফোন! পালাবে আমার সাথে! আমি নিয়মের শৃঙ্খলে আজীবন বন্দি আসামীর ভেসে, তোমাকে সোজা বলে দিলাম এ আমাকে দিয়ে হবে না অণু!
তুমি বরং বাড়ির কথা মেনে নাও, আমরা না হয় আলাদা, আলাদা ভাবে দুজন দুজনকে মনে রাখবো, ভালোবাসবো!
তুমি হঠাৎ নীরব থেকে নিরবতায় চলে গেলে, একটু পরেই ধপাস করে ফোনটা কেটে দিলে। আমিও আর ভাবলাম না, আমার তো অনেক কাজ এতো এতো দায়িত্বের ভীড়ে, তুমি নামক দায়িত্বটা যে বড্ড ফ্যাকাসে, বড্ড বেমানান।
হঠাৎ অনেকগুলো বছর চলে গেলো, আমি যে মন্দ ছিলাম তাও কিন্তু না! তুমি হয়তো ভাববে আমি এখনো বুঝি তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি!
এ সব তোমার সবটা ভুল ধারণা অণু!
আমি কখনো কারও জন্য অপেক্ষায় থাকিনি।
একদিন আমার ঠিকই দায়িত্বের অবসান হলো।বাড়িতে আর হুট করে কেউ দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয় না!
আচ্ছা অণু! তুমি কি জানো? তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেখেয়ালি, অপর্দাথ, তোমার দেয়া কেবলা কান্ত নামের ছেলেটির মাইনাস ফিপটি পাওয়ারের চশমাটা এখন প্লাস ফিপটিতে চলে গেছে!
বাড়িতে আজকাল কেন জানি সব সময় খুশি লেগেই থাকে। কেউ আর এগিয়ে এসে আমার কাছে খবর পৌঁছে দেয় না। আমিও আর আগের মত দৌড়ে গিয়ে এক ঝুঁড়ি দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ঘুরি না। বললাম তো অবসরে আছি আমি, একদম অবসর!
ছোট ভাইটি ভালো একটা চাকরি পেলো!
মা আমার রুমে আসে না আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো! সেদিন মা এসে জানালো ছোট ভাইটির জন্য পাত্রী দেখেছে বাসা থেকে! আর কতদিন একা, একা থাকবে? বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব যে এখন ওর হাতে!
আমি তখন বুঝেছি, সত্যিই আমি বুঝেছি, শুনছো অণু আমি সত্যিই বুঝেছি, মানুষের দায়িত্ব ফুরানোর যন্ত্রণা, কষ্ট, ঘ্রাণী, শোক, দুঃখ বেদনা।
তুমি কিন্তু ভেবো না আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় আছি! আমি আসলে মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি! একটা সহজ, শর্তহীন মৃত্যু, দায়িত্ব ফুরানোর মৃত্যু, এক আকাশ অশ্রু বিসর্জনের মৃত্যু।
সমাপ্ত।
লেখক: বরেণ্য কবি ও কথাসাহিত্যিক।
কানাডা, ০২-০১-২০২২
২ Comments
Good one.
congratulations