রফিকুল হক দাদুভাইকে স্মৃতিচারণ:
সুপ্রিয় দাদুভাই, গুডবাই গুডবাই! ♦ সালেম সুলেরী (আমেরিকা থেকে)
চিরদিনের জন্যে নিভে গেলো প্রাণ-অফুরান হাসি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক, সংগঠক
রফিকুল হক / দাদুভাই–
চিরতরে গুডবাই, গুডবাই।
১৯৭৭ সালে আমাদের পৈতৃকবাস নীলফামারীর ডোমার এসেছিলেন। আমরা তখন ‘চাঁদেরহাট’ সংগঠন করি। দাদুভাই-এর সঙ্গে আজকের যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম। সংগঠক সৈয়দ দিদার, রংপুরের কবি-সাংবাদিক মাহবুবুল ইসলাম।
তারপর দাদুভাই-এর সঙ্গে-পাশে প্রায় পুরোটা জীবন। কখনো একই মিডিয়ায়, একই আবাসনে, একই সাহিত্য-আয়োজনে।
আমাদের আশীর্বাদ করার এক বাতিঘর চলে গেলো। দেহাবসান ১০ অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১টায়। নব্বই ছুঁই ছুঁই মানুষটির জন্ম ৯ জানুয়ারি, ১৯৩৭। পৈতৃকবাস রংপুর শহরের কামালকাচনায়। আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালনের কর্মসূচিটি আমাদের হাতেই শুরু। সংবাদপত্রের মেধাবী মানুষটিকে জানাতে প্রয়োজন পুরো বই। আশাকরি আমি তা লিখে সারতে পারবো।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনকে ঢাকায় প্রথম আশ্রয় দেন। আফজাল হোসেনকে হাত ধরে পৌঁছিয়ে দেন টেলিভিশনে। ইমদাদুল হক মিলনকে লেখক বানান প্রথম লেখা ছেপে। ছড়ালেখক হানিফ সংকেতকে সাহায্য করেন তারকা হতে। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিঁড়ি দেন — উপন্যাস ছেপে। ‘দীপু নাম্বার টু’– যা পরে চলচ্চিত্রও হয়। বাংলাদেশের প্রথম কিশোর সাপ্তাহিক ‘কিশোরবাংলা’র সম্পাদক। দাদুভাই সাংবাদিকতা করেছেন প্রায় পনেরটি দৈনিকে।
জীবনের শেষ সখ ছিলো অ্যামেরিকা সফরের। আপন সন্তান ছিলো মার্কিন প্রবাসী। ‘চাঁদেরহাটে’র নিবেদিতপ্রাণ কর্মী-সংগঠকও অনেক। কতোবার বইমেলা, হইচই মেলা হচ্ছে, হবে। কিন্তু আমন্ত্রণ পাননি লেখালেখির মৌলিক মানুষটি। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছড়ালেখক। শিশু একাডেমি অগ্রণীব্যাংক শিশুসাহিত্য পদকও পেয়েছেন। ‘বর্গি এলো দেশে’ সহ পনেরটির মতো জনপ্রিয় গ্রন্থ। সর্বপরি হাজার পাঁচেক লেখক গড়ার দীপ্র কারিগর। সূর্য, চাঁদ, আকাশ, বৃষ্টি, বায়ু-বৃক্ষ হয়ে দিয়েই গেলেন। বিনিময়ে তেমন কিছু প্রাপ্তির বিষয়ে ছিলেন চির-উদাসীন।
৪৪ বছর আগে দাদূভাইকে পেয়েছিলাম আমাদের বাড়ির উঠোনে। সেদিনের সঙ্গী সাইফুল আলম জাতীয় প্রেসক্লাবের বিদায়ী সভাপতি। চাঁদেরহাটে’র সংগঠক, ‘দৈনিক যুগান্তরে’র খ্যাতিমান সম্পাদক। জীবনের উপান্তে সেই যুগান্তরে’ই দাদুভাই ফিচার সম্পাদক। অনুজের নীরব ভালোবাসায় উপভোগ করেছেন প্রশান্তিও। একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক হিসেবে জাতীয় সম্মাননা ওনার একান্তপ্রাপ্য।
“আমার একটি নদী ছিলো। নদীটির নাম ধরলা।
বদর বদর ভাদর মাসে কী কাম তুমি করলা।
আমার একটি পাখি ছিলো। পাখিটির নাম ময়না।
এতো পুষলাম, এতো খুঁজলাম, ময়না কথা কয় না…”
দাদুভাই পাখির আদলে কবিতা আওড়াতেন, কথা বলতেন। এখন সবকিছু স্মৃতির পদ্মপাতায় ফোটা ফোটা শিশির।;
প্রিয়-শ্রদ্ধেয় দাদুভাই-এর বিদেহী আত্মা স্বর্গবাসী হোক। নিকটজনদের জন্যে শোক, সমবেদনা, শুভকামনা♠
♦নিউইয়র্ক, আমেরিকা। ১০ অক্টোবর ২০২১ (লেখক: আমেরিকা প্রবাসী কবি ও সম্পাদক)
১ Comment
Great respect.