গোধূলি বেলায় ছুয়ে দিলে মন
[অধরা আলো]
পড়ন্ত বিকেল আনমনা জ্বানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, উদাসী মন, কিছুই ভালো লাগছে না, কি করবো ভাবছি।
এমন সময় হঠাৎ টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হলো, উল্লাসের ছোঁয়ায় মেতে উঠা, মনের অজান্তেই জ্বানালায় হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা ছুয়ে দেখা, অপরুপ আবেশে মন ছুয়ে গেলো,
আমি বরাবরই বৃষ্টি খুব ভালোবাসি, বৃষ্টির পরে আকাশ জুড়ে যে রংধনুর খেলা শুরু হয়, তা সব সময় আমাকে আকর্ষন করে। আজও তার কম হলো না।
বৃষ্টি শেষে প্রকৃতি যেনো নতুন রুপে সেজে উঠে, ধুলো পরা পাতাগুলো নতুনত্বে রুপ নেয়। হিমেল বাতাস বইতে থাকে চারিদিকে ভেজা স্যাতস্যাতে মেঠো পথ।
ঘরে বসে প্রকৃতির এই স্নিগ্ধরূপ উপভোগ করায় কোন আনন্দ নেই। ইচ্ছে হলো বাহিরে কোথাও যাব য ঘুরতে, বিশেষ করে নদীর পারে বসে থাকতে এই সময়টা আমার খুব ভালো লাগে।
তাই আমার প্রিয় বন্ধু আদ্রিতাকে ফোন দেওয়ার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই ওর ফোনও চলে এলো, আদ্রিতাও আমার মত প্রকৃতির প্রেমে পরে সব সময়, তাই আমরা দুজন যখন খুশি যেথায় ঘুরতে বের হয়ে যাই।
আমি ফোন রিসিভ করতেই আদ্রিতা বলে উঠলো চল দোস্ত আমরা নদীর পারে ঘুরতে যাই। আমিও বেজায় খুশি কারন আমিও চাইছিলাম ওকে একি কথা বলতে।
ওকে বললাম ঠিক আছে তুই রেডি হয়ে চলে আয় আমার বাসায় এখান থেকেই এক সাথে বের হব।
আদ্রিতা চলে এলো, আমরা বের হলাম, আমার বাসার পাশেই নদী, নদীর চারিপাশে ছোট ছোট হাজারও গাছের সারি, পাশেই বিশাল প্রান্তর জুড়ে কাশঁফুলে ছেয়ে গেছে। বিকেল হলেই অনেক মানুষের আনাগোনা শুরু হয় সেখানে,
আমরাও সেখানে গিয়ে নদীর কিনার ঘেঁষে এক পাশে বসে পরলাম, আদ্রিতা ছবি তুলছে, সে সব সময় ছবি তোলা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে একটু চঞ্চল ও বটে, হুটহাট করে সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে,
আমি ওর থেকে একটু আলাদা, যদিও সকলের সাথে খুব সহজে মিশতে পারি আপন করে নিতে পারি, তবুও চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি।
ও আমাকে বার বার বলছিলো ছবি তোলে দিতে, ওর বিরক্তে কিছু ছবি তোলে দিয়ে বললাম, আমি আর পারবো না, আমাকে ক্ষমা কর। তুই অন্য কাউকে দেখ তোলে দেয় কিনা।
ও আমার উপর অভিমান করে বললো আচ্ছা তোকে তোলে দিতে হবে না, গাল ফুলিয়ে বসে আছে সে।
আমি অবশ্য চুপচাপ আছি, আমি জানি একটু পরেই ওর অভিমান কোথায় হারিয়ে যাবে, এসেই জড়িয়ে ধরে বলবে তোর সাথে রাগ করে কি থাকতে পারি?
অনেক ভালোবাসি নিঝুম তোকে।
আমি ওর অভিমান টুকু উপভোগ করছি, আমাদের খুনসুটি দেখে পাশ থেকে কিছু ছেলে মিদু হাসছে,
ওদের হাসি দেখে আদ্রিতা আরও ক্ষেপে গেলো।
বলে দেখ কেমন হেংলার মত ছেলে গুলো হাসছে, আমিও আড় চোখে তাকাতেই চমকে গেলাম।
সেই চির চেনা মুখ, যার প্রতিচ্ছবি প্রায় আমাকে তাড়া করে, আমি হতভম্ব হয়ে যাই, বৃস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকি অপলক দৃষ্টিতে।
আদ্রিতা আমাকে ধাক্কা মেরে বলছে এই নিঝুম তোর কি হয়েছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম কই? নাত কিছু হয়নি। ছেলে গুলোও লক্ষ করলো।
আদ্রিতা বললো তুই কি ওনাদের চিনিস, আমি বললাম হে তিনজনের মধ্যে দুজনকে চিনি, আর একজন আমার ছায়া মানব, যাকে আমি অদৃশ্যে খুঁজে ফিরি।
যে আমার খনে খনে ছুঁয়ে যায় হৃদয়, ওবললো কি করে চিনিস, আমি বললাম তিনজনের মধ্যে একজন সাগর, একজন আকিব অন্য জনকে আমি চিনি না নামও জানি না তার। সাগর আর আকিব ভাই আমাদের হাউজিং এ থাকে।
আদ্রিতা তাহলে বল না আকিব কে আমার ছবি তুলে দিতে, ইস তুই বল আমি ওদের সাথে কখনো কথা বলিনি।
কখনো বলিসনি বলে, বলা যাবে না এমন তো নয়, প্লিজ বল বল না।
তুই বল গিয়ে যা, ওকে আমিই যাচ্ছি।
হেলো! আপনি কি আকিব?
হুম, আমি আদ্রিতা, নিঝুমের বন্ধু, নিঝুমকে তো চেনেন?
হ্যা চিনি বাট কথা হয়নি কখনো
হুম জানি, আচ্ছা আমাকে কিছু ছবি তোলে দিবেন।
ওকে, আকিব আদ্রিতাকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তোলে দিচ্ছে,
আদ্রিতা, আচ্ছা আকিব ওনাদের সাথে তো পরিচয় করিয়ে দিলেন না
ওও সরি আদ্রিতা, ও হচ্ছে সাগর আমার বন্ধু, আর ও হচ্ছে আকাশ আমার কাজিন।
আদ্রিতা, আমি আদ্রিতা,
আকাশ কোন কথা বললো না চুপ করে রইলো
আদ্রিতা চলে এলো, এসে আমাকে বলছে দোস্ত আকিবের কাজিনের কি ভাব দেখ কথাও বললো না।
আমি বললাম দ্যাত বাদ দে এসব নিয়ে ভাবিস না।
যথারীতি ঃ-আমরা দুজনেই গল্প করছি, আর লক্ষ করছি আকাশ আড় চোখে বার বার তাকাচ্ছে আমাদের ধীকে আমরা লক্ষ করতেই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে,
ছেলেটা বেশ সুর্দশন, স্মার্ট, অসাধারণ দেখতে যে কোন মেয়ে প্রথম দেখাই তার প্রেমে পরে যাবে।।
আমিও তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিনা, কেবলই মনের অজান্তেই চোখ চলে যায়। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি। সূর্য টা প্রায় ডুবন্ত চারিদিকে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে, সন্ধ্যা নামার সাজ সাজ রব।
আদ্রিতা বলছে চল এবার ফেরা যাক, না হয় আম্মু রাগ করবে।
কিন্তু আমি জানি না কেনো যে এক অদৃশ্য মায় সেখানে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে, সেখান থেকে ফেরার ইচ্ছেই হচ্ছে না।
বার বার আকাশের সাথে কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে , কিন্তু কি করার একজন অচেনা মানুষ যাকে কখনো দেখিনি জানি না তার সাথে কি করে কথা বলবো।
মনে অসংখ্য এলোমেলো ভাবনা, অদ্ভুত অনুভূতির স্পর্শ।
ধীরে ধীরে গুটি গুটি পায়ে হেটে চলে আসলাম। ওরা ও তিনজন আমাদের পিছু পিছু চলে আসছে,
কি ভাববে ভেবে পিছন ফেরে তাকানো হয় না।
বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালে হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে মুখ মুছছি, আর আকাশের মুখচ্ছবি ভেসে আসে। আমি অবাক হই। কি হচ্ছে পেছন ফিরে তাকাতেই নিজেকে খুজে পাই।
ভাবি ঐ ছেলেটা এখানে কোথা হতে আসবে।
সাথে সাথে আম্মুর ডাক নিঝুম এদিকে আস, নাস্তা করো, আসছি আম্মু নাস্তা খেতে বসেও খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
খাবার রেখে টেবিল ছেড়ে চলে আসলাম। আকাশ পানে তাকিয়ে চাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম কে সে। এত চির চেনা মুখচ্ছবি। যে আমার কল্পনার, আমার রং তুলির অবয়ব। তাহলে সেই কি আমার প্রেমময় জ্যোতি। গোধূলির ক্ষণে এসে যে আমার ছুয়ে দিলো মন। তাহলে সেই কি আমার প্রিয়জন। মনের অজান্তেই গুন গুন করে গাইতে লাগলাম
গোধূলি বেলায় ছুয়ে দিলে মন
তুমিতো সে প্রিয়, তুমিই প্রিয়জন।