এতিমের কান্না
(মোহাম্মদ হেদায়েতুল ইসলাম)
মুক্তিযুদ্ধে গেলো বাবা আমায় মায়ের পেটে রেখে,
যুদ্ধে বাবা শহীদ হলেন যেতে পারেননি আমায় দেখে।
জন্মের ক’মাস না যেতেই মা ও চিরবিদায় নিলো,
দুঃখী নানা নানীর কাছেই আমার স্থান হলো।
মায়ের দুধের কতইনা অভাব ছিলো ছোট বেলায়,
বর্লিটা এনে দিত আমার ছোট খালায়।
কিছুদিন পরে নানাজি গেলো দুনিয়া ছেড়ে,
সম্বলহীন নানী এতিমখানায় দিল যেখানে উঠি আমি বেড়ে।
খাবার দিত সেখানে আমায় দু’বেলা নামমাত্র,
শিশু বয়সে কাজ করেও হয়েছি অবজ্ঞার পাত্র।
ছাড়পোকার অসংখ্য কামড় খেয়েছি আমার ঐ শিশু গায়ে,
মশারও অনেক কামড় খেয়েছি পায়ে।
ভাতের মধ্যে পাইতাম অনেক পোকা খেতে গিয়ে ভাত,
ডালের মধ্যে ডাল ছিলো না ছিলো পানি এক হাত।
মাছ মাংসের তরকারি যদি হঠাৎ পাতে দিলে,
কাটা আর হাড় যে শুধু আমার ভাগ্যে মিলে।
পড়ার চাইতে বেশি সেবা ক’জন শিক্ষককে দিতে হতো,
সেবাতে মন জয় না হলে চরম বেত্রাঘাত অকারনেও দিতো।
দান তুলতে ভেজাইতো বলতো যাও দ্বারে দ্বারে,
দয়ার মানুষেরা দান করতো আমারে বলতো তুমি এতিম আহারে!
নানী মারা যাওয়ায় মাঝে মাঝে খালার বাড়ি যেতাম,
খালা খালু তাদের সন্তানদের আদর দিতো দেখে আমি চেয়ে রইতাম।
নিষ্ঠুর দুনিয়া বাবা নেই মোর কাকে বাবা বলে ডাকবো,
মা হীনা আমি কতদিন নাজানি এই দুনিয়ায় থাকবো।
দেখি বাবারা তাদের সন্তানদের কতই না আদর করে,
বাবাহীন আমি বড় হয়েছি কতই না অনাদরে।
মা আছে যাদের আবদার তারা কত কিছুই না করে যায়,
নেই যে মা মোর এতিম আমি করি যে হায় হায়।
উৎসব এলে কষ্ট আমার বেড়ে যায় অনেক গুনে,
এতিম আমি অনাদরের জীবন আমার এই কথাই থাকে মনে মনে।
অনেকে সুন্দর জামা পরে বাবা মারে সাথে নিয়ে চলে,
ছেড়া জামা আবদারহীন, অনাথ আমি এতিমদের দলে।
কত জনের সন্তানরা স্কুলে যেত বাবা মার গাড়িতে চড়ে,
ভেতরে আসে কান্না কত যে আমার বাবা মা অনেক আগেই গেছে মরে।
বাবাকে দেখিনি মাকেও ডাকতে পারিনি কভু,
হাত জোড় করে বলি কাউকে আমার মত এতিম করোনা প্রভু।
১ Comment
এতিমের হৃদয়ের কষ্ট ও পাওয়া না পাওয়ার হাহাকার তুলেছেন, কবি।