আকাশ নদীর আত্মাহুতি
[শাহান আরা জাকির পারুল]
আজকাল খুব বেশি নিঃসঙ্গ লাগে আকাশের! বড্ডো বেশি মনে পরে নদীকে !
কি ভেবেছিলো দুজনে, আর কি ঘটে গেল ! ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে শুধু !
নিম্ন জাতের ছেলে আকাশ!বাবা, ডোম কানাইলাল আকাশকেও এই কাজেই লাগিয়েছিলেন!
একই পাড়ার মেয়ে নদিয়া কে প্রেম করে বিয়ে করেছে আকাশ ! নদীয়া কে আকাশ আদর করে নদী বলে ডাকে ! সবকিছু সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছিলো !
আকাশ ডোম এর কাজ করলেও নদী ভালো একটা কাজ পেয়ে যায় !
হটাৎ কোন এক ভিনদেশি বাবু এসেছে তাদের পাড়ায়!
একাকি!
তাকে দুমুঠো রান্না করে দিতে হবে ! জাতকুল জানার পরও নদীর হাতের রান্না সে খাবে,জেনে নদীও কম খুশি নয়!
ভালো বেতন পায় নদী!
রান্নার পর পরদেশী বাবু সব খাবার দিয়ে দেয় নদীকে!
আকাশ ও সে দুজনেইএই খাবার পেটপুরে খায়!
ভাল মন্দ অনেক কিছু নদী বাবুজিকে রান্না করে খাওয়ায় ! দিনে দিনে নদীর গা গতর যেন আরও লাবণ্যময়ী হয়ে ওঠে!
আকাশ মনে মনে খুব খুশি! নদী এখন খুব সাজ গোঁজও করে!
আজকাল ফিরতে একটু
রাত হয় নদীর! বাবুজির কোন মেহমান নাকি এসেছে দেশ থেকে!
কিন্তু আজ একটু বেশি রাত হচ্ছে কেন নদীর ফিরতে?আকাশ এর বুক ধরফর করে!
লণ্ঠন হাতে দৌড়ে দৌড়ে যায় আকাশ নদীকে আনতে!দরোজার সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় আকাশ !
দরজায় যে তালা ঝুলছে!
গেলো কোথায় ওরা?
“বাবুজিতো বাসা ছাইড়ে দিয়েছেগো আকাশ বাবু!”
কোথা থেকে এসে পাড়ার বখাটে রাজন বত্রিশ দাঁত বের করে খলখল করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে!
আকাশের বুকের পাশটা যেন এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়!
আকাশ নদী নদী বলে চিৎকার করতে করতে লণ্ঠন হাতে দৌড়াতে থাকে !
চলে যায় দূরে …….অনেক দূরে!
ছেলে ও ছেলে বৌয়ের খোঁজে পাগলপ্রায় কানাইলাল দুদিন পর অজ্ঞানবস্থায় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর তীর থেকে পাঁজা কোলে কোরে তুলে এনেছিল ছেলেকে !
আকাশের আর জ্ঞান ফেরেনি!
লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার ও গবেষক/ টিভি ও বেতার।
১ Comment
nice