খালেদ খান
অভিনেতা ও আবৃত্তি শিল্পী প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা।
পুরোনাম: খালেদ মাহমুদ খান যুবরাজ
জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮
মৃত্যু: ২০ ডিসেম্বর ২০১৩
বাংলাদেশের একজন অন্যতম জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী ও অভিনেতা । ১৯৭৮ সালে নাগরিক নাট্যদলের ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকে কাজ করার মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুরু। তিনি ৩০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন ১০টি নাটকে।
তিনি টিভি পর্দায় কাজ করেছেন ‘সিঁড়িঘর’, ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘তুমি কোন কাননের ফুল’, ‘রূপনগর’, ‘মফস্বল সংবাদ’, ‘ওথেলো এবং ওথেলো’, ‘দমন’, ‘লোহার চুড়ি’র মতো জনপ্রিয় নাটকে। ‘রূপনগর’ নাটকের হেলাল চরিত্রের জন্য তিনি খ্যাত। চরিত্রের জনপ্রিয় একটি সংলাপ “ছি ছি ছি তুমি এত খারাপ” জনপ্রিয় হয়েছিল। তার খুব প্রিয় গান ছিল রবীন্দ্রসংগীত ‘দূরে কোথায় দূরে…’, ‘আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’
খালেদ খান ১৯৫৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলাধীন মসদই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিলো যুবরাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউএলএবি) তিনি রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি করছেন। ২০০৫ সালে তিনি বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে তিনি একুশে টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে বেক্সিমকো ফার্মার ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭৫ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মঞ্চনাটকে তার যাত্রা শুরু হয়। মঞ্চে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে: দেওয়ান গাজীর কিসসা, অচলায়তন, নূরলদীনের সারা জীবন, ঈর্ষা, দর্পণ, গ্যালিলিও ও রক্তকরবী। ঈর্ষা নাটকে অভিনয়ের জন্য কলকাতায়ও তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। খালেদ খান নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে: রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা, পুতুল খেলা, কালসন্ধ্যা, স্বপ্নবাজ রূপবতী, মাস্টার বিল্ডার, ক্ষুদিত পাষাণ। ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিষেক হয় তার। খালেদ খান অভিনীত প্রথম টিভি নাটক হলো সিঁড়িঘর। এরপর অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেন তিনি। একাধিক নাটকে তার বেশ কিছু সংলাপও জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে নব্বই দশকের নাটক রূপনগর-এ তার ‘ছি ছি, তুমি এত খারাপ’ শীর্ষক সংলাপটি চলে আসে মানুষের মুখে মুখে। তার অভিনীত জনপ্রিয় টিভি নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: এইসব দিনরাত্রি, তুমি কোন কাননের ফুল, রূপনগর, মফস্বল সংবাদ, লোহার চুড়ি, সকাল সন্ধ্যা।
১৯৮১ সালে খালেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বি. কম ও ১৯৮৩ সারে এম. কম ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া এই শিল্পী অভিনয় শুরু করেন আশির দশকে, মঞ্চনাটকের মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ ও ইমদাদুল হক মিলনের ‘রূপনগর’ নাটকে অভিনয় করে সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পান তিনি। রূপনগর নাটকে ‘ছি, ছি, তুমি এতো খারাপ’ সংলাপটি সেই সময় দর্শকদের মুখে মুখে ফিরত। নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে দেওয়ান গাজীর কিসসা, নূরুল দীনের সারাজীবন, দর্পণ সহ ৩০টির বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন পুতুল খেলা, ক্ষুধিত পাষাণসহ ১০টির বেশি নাটক। অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ‘রক্ত করবী’ নাটকের বিশু পাগল চরিত্রে অভিনয় করেন। সুবচন নাট্য সংসদের ‘রূপবতী’ নাটকেরও নিদের্শনা দেন। সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের নিবন্ধক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক তার স্ত্রী। কণ্ঠশিল্পী ফারহিন খান জয়িতা তাদের সন্তান।
খালেদ খানের পিতা নাজ্রুল ইসলাম খান স্কুল মাস্টার ছিলেন। কিন্তু তিনি ফুটবল খেলা, অভিনয় ও গানে ভীষণ পারঙ্গম ও এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। মা খালেদা বেগম গৃহিণী ও সংগীত অনুরাগী ছিলেন। নয় ভাই বোনের মধ্যে খালেদ খান সবার বড়। ভাইয়ের হার ধরে শাহীন খান অভিনয়ে এলেও পরে আর পেশাগত কারণে আর ধরে রাখতে পারেননি। খালেদ খানের ছোট ভাই মামুন জাহিদ বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী। টেলিভিশন ও মঞ্চে বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মামুন জাহিদ। খালেদ খানের স্ত্রীর নাম মিতা হক। তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। তার কন্যার নাম জয়িতা, সেও সঙ্গীতের সাথে জরিত।
২০ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মটর নিউরন রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন খালেদ খান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালেদ খানের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদন