সাফোকেশন।
মীনা সাহা।
“অসময়ে কে যে বেলটা বাজিয়েই যাছে … অসহ্য!” দরজা খুলতেই শ্রেষ্ঠার চক্ষু চড়কগাছ। “একি আপনারা ? বার বার বারণ করা সত্ত্বেও সেই এসেই পড়লেন ! কতবার বলেছি-ফ্ল্যাট বাড়িতে ছোট জায়গা, আমাদেরই অসুবিধা হয় তার মধ্যে আপনারা দু’জন ! কি যে বলি, আপনারা আসলে কোন সমস্যা বুঝতেই চান না।” বউমার মুখের বচন শুনে দুজনেই একেবারে থতমত। দুজনাই দুজনার মুখের দিকে তাকিয়ে… “আসলে বউমা, নাতি হওয়ার খবর ছেলে নিজেই জানিয়েছিল। সেই থেকে তোমার শ্বশুর নাতির মুখ দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। লকডাউন একটু শিথিল হতেই ছোঁয়াছুঁয়ি যাতে না হয় সে জন্য একখানা গাড়ি ভাড়া করে এনে আমাকে তৈরি হয়ে নিতে বললেন। তাই আমিও আর সাত-পাঁচ না ভেবেই এসে পড়লাম। তোমার শ্বশুরের বয়স হচ্ছে, কখন কি যে হয় বড় ভয় করে। তোমরা কাছে থাকলে উনি হয়তো এত উতলা হতেন না।
ভেবোনা বউমা, আমরা নাতির মুখ দেখেই এক্ষনি চলে যাব। খোকা আসুক, ভাড়ার গাড়ি তো দাড়িয়েই আছে। ”–“ ঠিক আছে ! ঠিক আছে ! বাইরের সোফাতেই বসুন, ভিতরে আসার কোন দরকার নেই। ছোট্ট বাচ্চা,কি জানি কি ইনফেকশন হয়ে যায়!” ভরতবাবু সোফাতে বসে ব্যাগ থেকে তার সমস্ত সম্পত্তির দানপত্রের কাগজ, বাক্স ভারতি সোনার গহনা ও নগদ টাকা বার করে বউমার হাতে দিয়ে বললেন, “বউমা এটা রাখ। তোমার আর আমার নাতির জন্য।” শ্রেষ্ঠা তো হতবাক। ভরতবাবু আর দেরি না করে বউমাকে বললেন, “আজ আমরা বরং আসি। খোকাকে বোলো আমরা এসেছিলাম। এতটা রাস্তা আবার ফিরতে হবে।” শ্রেষ্ঠা নিমেষে গলার স্বর পালটে আমতা আমতা করে বলে, “বাবা আপনারা থেকেই যান, আপনারা চলে গেছেন শুনলে আপনার ছেলে খুব রাগ করবে।” মৃদু হেসে ভরতবাবু বউমার মুখের দিকে চেয়ে বললেন,“তোমার শাশুড়ি গাড়িতে আসতে আসতে বলছিলেন –”দেখ দেখ শহর জুড়ে কেমন বহুতলের সারি যেন আকাশ ছুঁয়েছে। আমার খোকাও কোন এক আকাশ ছোঁয়া বাড়িতেই থাকে,তাই না বল ? আজ আমরাও ছুঁয়ে দেখব এমন আকাশ ছোঁয়া বাড়ি….।” ভালো থেকো বউমা, আজ আমারা আসি–বড্ড সাফোকেশন হচ্ছে ।”
West Bengal/India.