খাদ্যাভাস, ব্যবস্থাপনা এবং ভালাবাসার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের উন্নত জীবন যাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে হোমিওপ্যাথি।:
অটিস্টিক শিশুদের চাই একটু অতিরিক্ত যত্ন, অফুরন্ত ভালবাসা আর প্রানবন্ত উৎসাহ। প্রথমে অটিস্টিক শিশুদের খাদ্যাভাস নিয়ে কিছুটা আলোচনা করি। অটিস্টিক শিশুদের প্রায়ই হজমের অসুবিধা, পেটের ব্যাথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসটাইসিস, পেটের গ্যাস, বমি ইত্যাদি উপসর্গগুলো দেখা যায়। শিশুর কোন কোন খাবারের প্রতি এলার্জিও হতে পারে। এজন্য খাবারের প্রতি প্রতিটি মা বাবার বিশেষ যন্তবান হওয়া দরকার কারণ খাদ্যের সমস্যার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা বা দৈহিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রোটিন ও জিঙ্কযুক্ত খাবার, রক্তের শর্করার ভারসাম্য রক্ষা, ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ, থাইরয়েডের কার্যকারীতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অটিজম বাচ্চার অতি চঞ্চলতা, আক্রমনাত্মক আচরণ, মনোযোগ স্বল্পতা, চক্ষু যোগাযোগহীনতা, বিকৃত অঙ্গভঙ্গিও অন্যান্য উপসর্গের তীব্রতা কমানো যেতে পারে।
অটিস্টিক শিশুদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। দেশী বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাক ও সবজি, দেশী যে কোন মৌসুমী ফল ও ঘরে বানানো বিভিন্ন ধরনের চিনি ছাড়া ফ্রেশ জুস, প্রোটিনের জন্য নদী ও সাগরের মাছ, ডিম বিভিন্ন ধরনের বাদাম, আখরোট, বিভিন্ন ধরনের শিম ও শিমের বিচি এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল দেওয়া যেতে পারে। দুধের কেজিনের বিকল্প হিসেবে সয়াদুধ, অ্যালমন্ড বাটার বা অ্যালমন্ড মিল্ক অথবা অন্যান্য বাদামের তৈরী দুধ ইত্যাদি। চিনি বা মিষ্টি কিছুর বদলে খেজুর দেয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে তৈরী মধু মাঝে মাঝে দেয়া যায়। যে সব খাবার খাদ্য তালিকায় একেবারেই না রাখাই ভাল যেমন চিনি, জাংক ফুড, চকোলেট, চিপস, বানিজ্যিক ভাবে তৈরী জুস, ফাস্ট ফুড, ফ্রোজেন ফুড, প্রোসেসড খাবার, প্রোসেসড মাংস, পাউরুটি, বেক করা খাবার, বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার, পনির, আইসক্রিম, দই ইত্যাদি। তাই পুষ্টিবিদ বা অভিজ্ঞ রেজিস্ট্রার্ড বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা তৈরী করালে ভাল হয়।
মা বাবার, শিক্ষকগণ ও চিকিৎসকগনের বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পরামর্শ শিশুর বিকাশে কাজে আসবে। পরিবারের সকলে শিশুটিকে সময় দিন। ধৈর্য্য ধরুন। দেখবেন ক্রমান্বয়ে শিশুর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ভাষা বিকাশের জন্য করনীয় শিশুর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে বেশি বেশি করে কথা বলুন। শিশুটি আপনার চোখের দিকে তাকাতে ও ঠোঁটের নাড়াচাড়া অনুসরণ করতে সাহায্য করুন।
সেখানো কথাগুলো প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন ও তার সাথে নতুন শব্দ শেখানোর চেষ্টা করুন। শিশুকে গানের অডিও ক্যাসেট শোনাতে পারেন। শিশুকে প্রয়োজনীয় সামাজিক আচরণগুলি শেখান। শিশুকে সকল ধরনের সামাজিক পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে। যেমন- আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর বাসায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে, খেলার মাঠে, পার্কে, শপিং এ। এরুপ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে শিশুকে সাহায্য করুন। শিশুর সাথে নিজেরা নিয়ম করে খেলবেন প্রাথমিক ভাবে সহজ কিন্তু আদান প্রদান মূলক খেলা বাছাই করুন। যেমন-বল ছোড়া ও ধরা, লুকোচুরি খেলা ইত্যাদি। পারদর্শিতা ও শিশুর পছন্দ অনুযায়ী খেলনা ও ক্রমান্বয়ে আরো গঠন মূলক খেলনা দিন। সমবয়সী ছেলে মেয়েদের সাথে কারো তত্ত্বাবধানে খেলতে দিন ও খেলায় সক্রিয় অংশ গ্রহন করতে শিশুকে অনুপ্রানিত করুন। স্বাবলম্বিতা বিকাশের জন্য শিশুকে তার বয়স ও বুদ্ধিমান অনুযায়ী ব্যক্তিগত দক্ষতাগুলি শেখান অর্থাৎ যথাস্থানে প্রসাব পায়খানা করা, নিজ হাতে খাওয়া, হাতমুখ ধোয়া, দাত মাজা, চুল আচড়ানো, জামা জুতা পড়া। শিশুর ভালো কাজ, অযৌক্তিক আচরণকে কখনো প্রশয় দিবেন না। তবে বকা বা জোরে কথা বলা বা গায়ে হাত তোলা যাবে না। তাকে বুঝিয়ে নিয়মকে অভ্যাসে পরিনত করাতে হবে।
সায়মা ওয়াজেদ ম্যাডাম, বর্তমানে অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন হিসাবে কাজ করছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক Expert Advisory Panel এরও Member। অতি সম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সায়মা ম্যাডামকে তাঁর উদ্ভাবনী কর্মক্ষমতার জন্য তাদের দক্ষিন পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নির্বাচন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ম্যাডাম নন প্রফিটেবল গবেষনা ও কর্মদক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপার্সন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া তিনি Centre for Research and Information (CRI) এর অন্যতম ট্রাষ্টি হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ম্যাডাম অটিজম চিকিৎসা ব্যবস্থায় ও উন্নয়নে বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশে বিশাল অবদান রেখেছেন।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত ২৫.০৮.১৯৮৩ অনুযায়ী ‘‘দি বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ (অধ্যাদেশ নং-৪১ অব ১৯৮৩)’’ মোতাবেক রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃত। অতএব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের অটিজম চিকিৎসায়, প্রশিক্ষণ ও কমিটিতে অন্তর্ভুক্তসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সায়মা ওয়াজেদ ম্যাডামের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
দেশের জনগনের বৃহৎ অংশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহন করছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। এমতাবস্থায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অটিজম চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি বিশেষ অবদান রাখবে।
আমাদের লক্ষ্য থাকবে অটিস্টিক শিশুদের উপযুক্ত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে তাদের পরিবার ও সমাজের মধ্যে সর্বোচ্চ জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।
সহযোগী অধ্যাপক সামিনা আরিফ
বি.ফার্ম (অনার্স), এম. ফার্ম, এমবিএ, ডিএইচএমএস, পিডিটি
উপাধ্যক্ষ
ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, ফার্মগেট, ঢাকা।
১ Comment
very good job; congratulations.