আমার হাত ধরেই সাংবাদিকতায় যোগদান.. ‘কলমবীর পীর হাবীব–‘ শিরোনামে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের আহ্বান। সালেম সুলেরী
আমার হাত ধরেই ১৯৯১-এ সাংবাদিকতায় এসেছিলো। আমাকে পীরের মতোই সম্মান করতো সুপ্রিয় পীর হাবীব। ৫ ফেব্রুয়ারি’২২ অকালপ্রয়াণ– বুকটা ভেঙে গেলো যেন! গালে টোল পড়া হাসিমুখটি আজ ভুলবো কী করে!
প্রথম পরিচয় আশির দশকে, ঢাকাতেই। ‘বাকশাল ছাত্রলীগ’ করতো, আড্ডা পেটাতো। পৈতৃকবাস সুনামগন্জ, স্নাতকোত্তর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আমি তখন সর্বাধিক সার্কুলেশনের ‘সন্দ্বীপ ম্যাগাজিন’ সম্পাদনায়। মতিঝিলের টয়েনবী সার্কুলার রোডে অফিস। প্রায়শ আড্ডা পেটাতে আসতো তিন ‘সিলেটী প্রিয়মুখ’। ‘আজ পাশা খেলবো’-খ্যাত গায়ক সেলিম চৌধুরী। হুমায়ূন আহমদের হিমু-খ্যাত ফজলুল হক তুহিন। আর স্বপ্নচারী সমাজ-ভাষ্যকার পীর হাবীবুর রহমান।
লেখালেখিতে আগ্রহ ছিলো বিধায় লিখতে বলতাম। ছোট-খাটো কিছু লেখনী ‘সন্দ্বীপে’ ছেপেছিও। তবে ‘পীর হাবীবুর রহমান’ নামে নয়। বলেছি এ নামে একজন খ্যাতিমান রাজনীতিক আছেন। তাছাড়া সাহিত্য-সাংবাদিকতা-সংস্কৃতিতে দীর্ঘতর নাম চলে না। অবশেষে ‘পীর হাবীব’ নামেই করেছে লেখালেখি।
১৯৯১ সালে আমি ‘সন্দ্বীপ’ ছেড়ে ‘সাপ্তাহিক আকর্ষণ’-এ যোগ দেই। কবি সৈয়দ আল ফারুক ছিলেন সম্পাদক-প্রকাশক। আমি তিন মাসের জন্যে নির্বাহী সম্পাদক হয়েছিলাম। তাতে প্রতিবেদক হিসেবে সংযুক্ত করি পীর হাবীবকে। সাংবাদিকতার পেশায় এটিই তাঁর প্রথম চাকরি। এরপর ‘দৈনিক বাংলাবাজারে’ আমি প্রথম বার্তা সম্পাদক। পীর হাবীবকে পরে সেখানেও পদায়ন করা হয়। এরপর এই অনুজকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দৈনিক আমাদের সময়, যুগান্তর বা ‘পূর্ব-পশ্চিম’ পোর্টাল। পীরে’র আহ্বানে ‘পূর্ব-পশ্চিমে’ অনেক লিখেছি। সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ দায়িত্বপূর্ণ নির্বাহী সম্পাদক। সম্পাদক নঈম নিজামেরও প্রথম চাকরি ‘সন্দ্বীপ ভবনে’ আমার মাধ্যমে।
পীর হাবীবের অসুখ বিষয়ে আগে থেকেই আমি অবগত। নিজের পোস্টে নিজের অসুস্থতার আপডেড লিখতো সে। মাঝে মধ্যে হাসপাতাল বা পরিবারের ছবি দিতো। বাঁচার আকুলতা প্রকাশ করতো কায়মনোবাক্যে। জানতাম, ক্যান্সারের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু কেমোথেরাপির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় পর্যুদস্ত। করোনাক্রান্ত হলো তৃতীয় ঢেউ-এর প্রাক্কালে, ওমিক্রনকালে। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা শূন্যের কোঠায়। ২০২২-এর ২৭ জানুয়ারি থেকে হাসপাতাল বন্দি। ভাষা ও ভালোবাসার মাস ফেব্রয়ারি ০৫-এ দুখিত-দেহাবসান!
মৃত্যু সংবাদটি প্রথম জানলাম ফেসবুক পোস্ট থেকে। পোস্টটি দিয়েছিলো মিডিয়ামুখর বন্ধু সৈয়দ রানা মুস্তফী। পীরে’র কথা ভাবতে গিয়ে রানা’র স্মৃতিও মূর্ত হলো। ১৯৮৮-তে রানা’কে আমিই সন্দ্বীপ ভবনে নিয়ে আসি। ‘মাসিক ব্যাংকার’-এর সফল নির্বাহী সম্পাদক ছিলো। আড্ডাবাজি থেকেই পীরে’র সঙ্গে রানা’রও বম্ধুত্ব।
আমার হাত দিয়ে পীরে’র সাংবাদিকতার শুরু। এমন কথা আমি নিজে কখনও বলিনি। কিন্তু পীর হাবীব স্বয়ং তা প্রচার করেছে। একবছর আগে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ আমার নাম নিয়েছিলো। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ‘হাবা হাশমত’ আখ্যা দিতে গিয়ে। ১৯৯১-এ নায়িকা শাবনাজ-এর বাসায় গিয়েছিলাম। সঙ্গে প্রতিবেদক পীর হাবীব, আলোকচিত্রী সলিমউল্লাহ সেলিম। ‘আকর্ষণ’ ম্যাগাজিনে সম্ভাবনাময় শাবনাজের কাভারেজ। লালমাটিয়ার হুমায়ূন সাহেবের মেয়েটি তখনও নায়ক নাঈমের বধু হয়নি। তো বাসায় গিয়ে দেখি অভিনেতা ‘হাবা হাশমত’ বসে আছেন। তিনিও নায়িকা শাবনাজকে নিয়ে ছবি বানাতে আগ্রহী।
সেদিন ‘হাবা হাশমতে’র সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতা পীরে’র। বোকামিসুলভ অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য পীর লক্ষ্য করেছিলো। সেগুলো পরবর্তীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কার্যধারায় লক্ষ্য করে। সেসবের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমার প্রসঙ্গ টানে। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’র কলাম-ক্লিপিংসটি আমাকে পাঠায় চিত্রপ্রযোজক সুদীপ দে।
এবার দেশে ফিরে সন্দ্বীপ-সংশ্লিষ্টদের ডাকতে চেয়েছি। একটি পুনর্মিলনী করার প্রস্তুতিও চলছে। ওমিক্রন কমলে দিন-তারিখ চূড়ান্ত হবে। কিন্তু অনিবার্য অতিথি পীর হাবীব অবশেষে ফাঁকি দিলো। আড্ডার নক্ষত্রকে ছাড়াই হয়তো আমাদের পুনর্মিলনী হবে। তবে সেটি সম্মিলনীর বদলে হতে পারে ‘স্মৃতিতর্পণ সভা’!
পীর হাবীবের বিদেহী আত্মা স্বর্গীয় প্রশান্তি পাক। নিকটজনদের জন্যে শোক, সমবেদনা, শুভকামনা। থাকলো স্ত্রী প্রিয়জনেষু, পুত্র আহনাফ, কন্যা চন্দ্রস্মিতা।পেশা-প্রতিষ্ঠান নঈম নিজামদের ‘বসুন্ধরা মিডিয়া’। থাকলো লাখ লাখ ভক্ত, অনুরক্ত, শুভান্যুধ্যায়ী। প্রত্যাশা >> ‘কলমবীর পীর হাবীব’ নামে স্মারকগ্রন্থ বের হোক। উন্মুক্ত থাক সকলের ইতিবাচক রচনা প্রকাশের অধিকার। ♠
♦নিউইয়র্ক, ফেব্রুয়ারি ২০২২
# salemsuler.ss@gmail.com