যদি কথা রাখিস
সোহরাব হোসেন
শোন, তোকে একটা কথা বলবো
প্রমিস কর কাউকে বলবি নাতো –
তিন সত্য বলে কথা দে,
যদি কথা রাখিস, তাহলে তোকে
সব কিছু খুলে বলবো!
আমাদের পাড়ায় সুন্দর একটি হাট বসেছে,
বিকেলে অনেক লোকজন আসে হাটে,
বেশ কিছু দোকানও বসেছে
শুধু তাই নয় প্রত্যেহ সকাল বিকেলে
বাজারও বসে।
বাজারের দক্ষিণ কর্ণে চাটাইয়ের বেড়া
টিনের চালা ঘর চায়ের স্টল, ওটা আমার!
বেশ ভালোই চা বিক্রি হয় বাজারে।
মাঝে মধ্যেই কেউ কেউ পান খেতে চায়,
আমার মনে হয় স্টলে পান রাখলে
খুব ভালো বিক্রি হবে।
আমি বলি কি বন্ধু তুই আর-
কামলা বিক্রি করতে যাস না
কারন কামলার কাজ সবসময় চলে না;
যখন পূর্ব আকাশে একটু একটু করে
কালোমেঘে হানা দেয় তখন গেরস্ত বলে
আজ আর কাজ করতে হবেনা।
এদিকে ঘন্টা দুয়েক জমিতে
নিড়ানি দেওয়া হয়ে গেছে,
তারপর গেরস্তের বাড়ি থেকে হাত উঁচিয়ে
হাক ছেড়ে বলে, ঐ দ্যাখো আকাশে
মেঘ জমেছে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হয়েছে
এ-সময় নিড়ানির দরকার নেই।
তারচেয়ে বরং আজ বাড়ি চলে যাও!
তখন কিন্তু কোন মাইনে বা খোরাকী ছাড়াই
বাড়ি ফিরে আসতে হয়! তখন,
পাহাড়সম দুঃখ চেপে বাড়ি ফিরতে হয়!
শুরু হয়ে যায় অঝোরে বৃষ্টি,
ঢল নামে দু-চার দিনের তরে।
পরিবারের ছোট ছেলে মেয়েদের
বেশির ভাগ না খেয়েই বেলা গড়ে যায়!
ঐ রাতে খায় আবার ঐ রাতে খায়।
ওদের না খাওয়া মুখের দিকে তাকালে
আঁখি জলে বন্যা বয়ে চলে!
তাই আগামীকাল থেকে তুই বরং
আমার স্টলেই পান সিগারেট বিক্রি করা শুরু কর, যেহেতু অনেক চাহিদা আছে খুব চলবে।
আমি চা-তৈরি করবো আর তুই
পান সিগারেট দিবি দুই বন্ধুর
সংসার বহুত ভালো চলবে আর কখনো
আমাদের কামলা বিক্রি করতে হবে না।
দিন শেষে হিসেব করে দেখবি
দুজনের বেশ ভালো পকেট ভরেছে।
বলতো ঠিক বলি নি?
যদি তোর ভালো লাগে তাহলে কাল থেকেই
শরু করে দে স্টলের কাজ।
লজ্জা শরম ভেঙে তোর কাছেই সব খুলে বলিলাম,
আমরা লেখাপড়াও তেমন করতে পারি নাই, তাই
স্বল্প পুঁজিতে এটা দারুণ ব্যবসা।
এভাবেই, একদিন আমরাও পয়সা ওয়ালা হবো।
____________
সোহরাব হোসেন ” শিক্ষক ”
সারিয়াকান্দি, বগুড়া।