মহারণে প্রসব বেদনা।
–পলক রহমান।
আমি শয়নে স্বপনে জাগরণে, ভয়ংকর বিক্ষুব্ধ বিশ্রী
আলোড়নে, আকাশ বাতাস কাঁপানো উত্তপ্ত সকল
মিছিলের তীব্র কন্ঠস্বরের মধ্যেও এখন প্রায় প্রতিদিনই
শুনছি অসহ্য অসহায় মাটি ও মায়ের কান্নার শব্দ।
হয়ত শেষ বারের মত আর এক নতুন মুখের জন্ম
দেবে বলে দেশমাতা যে এখন প্রচন্ড প্রসব ব্যাথায়
জর্জরি। আপন দেশ, মা মাটির জঠোরে উদরে
আষ্টেপৃষ্ঠে বড় হওয়া বুড়ো সন্তান ভূমিষ্ট হবে বলে
নিরাপত্তাহীন মমতাময়ী মা জুন্মভূমি কাঁদছে এখন।
কেমন হবে সে সন্তান? কালো, নাকি ধলো, নাকি
তামাটে? কেমন হবে তার শারীরীক গঠন-লম্বা,
বেঁটে, নাকি বিকলাংগ? কেমন হবে তার মুখের ভাষা?
আরবী, হিন্দী, ফার্সি, ঊর্দু, ইংরেজী, সংস্কৃত নাকি বাংলা?
তার অপেক্ষাতেই প্রচন্ড প্রলয় চলছে এ স্বাধীন
বাংলার আকাশে বাতাসে, পথে ঘাটে লহরী মর্তের
আহাজারী মাতমে। একটা বুড়ো সন্তান জন্ম নেবে
নেবে করেও মারনাস্ত্র আর অবৈধ যুদ্ধ রসায়নের
তান্ডবে ভয়ে থ্যমকে আছে মায়ের জরায়ু মুখ।
জঠোরে পানির বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, রক্ত ঝরে ঝরে
রক্ত শুন্যতায় ভুগছে এখন । মা মরতে বসেছে,
তাঁকে বাঁচানোর পাশাপাশি মা চায় আসন্ন প্রসবিত
তাঁর সন্তান এবার বাঁচুক, আগামী হাজার বছর বেঁচে
থাকুক তারা সুস্থ হয়ে।
কালো, ধলো, তামাটে, ওত সব বুঝে না ,মা চায় তাঁর
সন্তান হোক বাঙালি, অন্য কোন বর্ণ, ধর্ম, ভাষা নয়,
অন্যায়, অবিচার, খুন, লুটতরাজ নয়। বরং মানবতা
আর সৎ নৈকতায় সে কথা বলুক প্রমিত বাংলায়।
তাঁর বয়স হয়েছে। সাতচল্লিশ থেকে আর কতবার
নতুন করে শ্রেষ্ঠ নেতৃত্ব, সুশাসন আর স্বাধীনতা
অর্জনের চেয়ে তাকে রক্ষাকরার জন্য একজন দক্ষ
নেতার নেতৃত্বে একটি শোষণমুক্ত দেশ জন্ম দেবে সে বারবার!
তাই পঁচে গলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগে তাঁর এবারের
সন্তান বাঁচুক, সন্তানেরা বাঁচুক সম্ভাবনাময়ী এই দেশ
ও জাতিকে রক্ষা করতে দলাদলি,
খুনাখুনির ঊর্ধ্বে তাকে বাঁচানো হোক,
তবেই দেশমাতা কলঙ্গকহীন গর্বিত
থাকবে আগামী ইতিহাসের পাতায় চিরকাল।