মায়েদের একটি অন্তর চক্ষু থাকেঃ
(দক্ষিন ফ্রান্সের কানে একটি বিভিষিকাময় রাত্রী)
ডাঃ রাহেলা খুরশীদ জাহান (মঞ্জু)
সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালের কথা। ফ্রান্সের কানের দিনগুলি নুতন নুতন অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলো। একদিন এমনই একটি দুর্লভ অভিজ্ঞতার সন্মুখিন হলাম যা আমি কোনদিন কল্পনাও করি নাই।
আমার ছেলে রাজি তার ফ্লাইং স্কুলের ডাইরেক্টারকে একদিন বলেছিল, “স্যার আমার সাথে আমার মা আছেন। আপনি অনুমতি দিলে আমার ফ্লাইং স্কুলটা মাকে দেখাতাম”। সাথে সাথে উনি বললেন, “হ্যাঁ, ছুটির দিনে তোমার মাকে নিয়ে এস। উনাকে প্লেনে পুরো কান শহর ঘুরে দেখাব”। আর চিফ ইন্সট্রাক্টারকেও তিনি বলে দিলেন, উনি যেন নিজে রাজির মাকে প্লেনে সব ঘুরিয়ে দেখান। রাজি বিশ্বাস করতে পারছিল না, এটা কি করে সম্ভব! এতো ব্যায়বহুল এই প্লেনের ফ্লাইং, তার মায়ের জন্য কেন ব্যয় করবেন তারা?
সে খুব খুশী হয়ে সেদিন বাসায় এসে আমাকে সব কিছু বলল। আমিও তার কথা শুনে বেশ অবাকই হলাম।
ডাইরেক্টারের কথা অনুযায়ী ছুটির দিনে রাজি আমাকে সাথে নিয়ে ফ্লাইং স্কুলে আসল। সে আমাকে পরিচয় করে দিল তার চিফ ইন্সট্রাক্টারের সাথে। উনি মোটামুটি ইংলিশ বলতে পারেন। তিনি নিজে সমস্ত অফিসটা বিশেষ বিবরন সহ আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন। কিছু স্ন্যাক্স, কফি খাবার শেষে উনি হ্যাংগার থেকে প্লেন ডি-৪০ বেড় করতে বললেন। তারপর আমাদেরকে সাথে নিয়ে প্লেনের কাছে গিয়ে তিনি আমাকে প্লেন চালানোর জন্য ওরিয়েন্টেশন দিতে শুরু করলেন। প্রতিটা অপারেশনের সাথে প্লেনের পাখা, টেইল, ইত্যাদির মুভমেন্ট কি ভাবে হয়, তা তিনি প্লেনের চারিপাশে ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখালেন। জয় স্টিক ছিল সেই প্লেনে। সেটার ব্যাবহারও শিখালেন। আমি এবং রাজি দুজনেই অবাক হয়ে ভাবছি এসব শিখে আমার কি লাভ? আমি জানতে চাইলাম কেন তিনি আমাকে এতকিছু শিখাচ্ছেন। তিনি বললেন, “ you have to know what your son is doing here” ।
ইতিমধ্যেই উনি আমাকে আরও অবাক করে ক্যাপ্টেনের সিটে বসতে বললেন। তাই শুনে অবাক বিস্ময়ে উনার মুখের দিকে আমি চেয়ে রইলাম। তখন উনি দৌড়ে গিয়ে একটা চেয়ার আনলেন। যাতে করে আমি চেয়ারে উঠে সহজে প্লেনে উঠতে পারি। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি আবার আমাকে সেখানে বসতে বললেন। তখন রাজি বলল, “মা তোমাকে এখানে বসতে বলছেন, তুমি বস”। আমি অনেক দ্বিধা সংকোচ নিয়ে শেষে ক্যাপ্টেনের সিটে বসলাম। চিফ ইন্সট্রাক্টার কো-পাইলটের সিটে এবং রাজি পেছনে বসল।
উনি প্লেন টেক অফ করার পর কিছুদূর চালিয়ে যখন ভূমধ্য সাগরের উপরে উঠলেন, তখন আমাকে বললেন, “You operate now”। আমি শুনে হতবাক। একবার, দু’বার, তিনবার বলার পর উনি বললেন, “Look, I am just sitting idle. I gave you lesson, you pls. operate”
রাজি জানে ইন্সট্রাকটারের কাছে কন্ট্রোল আছে তাই সে বলল, ‘মা তুমি প্লেন চালাও’। আমি অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে প্লেন চালাতে শুরু করলাম। কিন্তু মুহুর্ত পরেই আমার ভীষন ভয় হল, কারন প্লেনটিকে ডানে বামে নেয়ার সাথে সাথে প্লেন কাত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল এই বুঝি প্লেনটা ভূমধ্য সাগরে পরে গেল। তখন ইন্সট্রুাক্টার তার পা দিয়ে কন্ট্রোল করছেন।
এভাবে বেশ কতদুর চলার পর সামনে এলো একটি পৃথিবী বিখ্যাত দ্বীপ স্যান্ট্রোপে। কতগুলি মনোমুগ্ধকর বীচের জন্য দ্বীপটি বিখ্যাত। এখানকার দৃশ্য অতি মনরোম। এবং ঘরবাড়িগুলো অত্যন্ত সুন্দর ডিজাইনের এবং জাকজমক পুর্ন। এখানকার অনন্য বেকারি এবং ডেসার্ট অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বিখ্যাত। বিভিন্য সেলিব্রেটিরা এখানে এসে থাকেন। এবং প্রিন্সেস ডায়না কানে আসলেই তিনি এই দ্বীপে আসতেন। একপ্রকার ভিন্য প্রজাতির ঝিনুক পাওয়া যায় এই দ্বীপে, তিনি সেটা খেতে খুব পছন্দ করতেন।
আমি প্লেন চালাতে চালাতে প্রাণ ভরে দেখলাম সেই দ্বীপটি। প্রিন্সেস ডায়নার পদচারনা আমি যেন অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম। শুধুই মনে হল তার কোমল স্পর্শ লেগে আছে এই দ্বীপটির আনাচে কানাচে। আর তার কণ্ঠস্বর হয়তো আজও ভেসে আছে স্যান্ট্রোপের আকাশে বাতাশে। আরও মনের চোখে ভেসে উঠল সেই ১৯৮১ সনে প্রিন্সেস ডায়না- চার্লসের বিবাহ অনুষ্ঠান। যেটা একযোগে প্রচারিত হয়েছিল বিশ্বের সকল টিভির পর্দায়। তখন আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম সেই অনিন্দসুন্দরী ডায়নার মোহনীয় রূপ মাধুর্য। কিছুক্ষনের জন্য আমি সত্যিই হারিয়ে গেলাম অতীতে। হঠাৎ চিফ ইন্সট্রাক্টারের কথা শুনে আমার সম্বিৎ ফিরে এলো। এবার তার নির্দেশ মতো এই দ্বীপের উপর থেকে ইউ টার্ন করে প্লেনটিকে ঘুড়িয়ে আনলাম আমি। যেটা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। তারপরও তিনি আমাকে দিয়েই সেটা করালেন।
কিছুক্ষন পর মন্টি কারলোর পাশ দিয়ে আসার সময় আমার কাছ থেকে কন্ট্রোল নিলেন চিফ ইন্সট্রাক্টার। এরপর ঘুরে ঘুরে আরও অনেকগুলো দ্বীপ তিনি দেখালেন। একটা দ্বীপের উপর দিয়ে যাবার সময় দেখলাম সেখানে অনেক পুরানো একটি ক্যাসেল আছে। ক্যাসেল অর্থ রাজবাড়ী। তার নীচে অনেক পুরাতন একটা কারাগার আছে। Island dungeon (A strong underground prison cell, specially in a cassle). এই দ্বীপের নাম Sainte- Marguerite। এই দ্বীপটি তিন কিলোমিটার লম্বা।
সেই কারাগারের এক করুন ইতিহাস রাজি আমাকে বলতে শুরু করল। আপনারা হয়তো “The Man in the Iron Mask” নভেলটি পড়ে থাকবেন। এটা Alexandar Dumas এর লিখা একটি বিখ্যাত নভেল। ফ্রান্সের রাজা Louis xIv এর রাজত্যকালে রাজনৈতিক কারনে একজনকে 1669 or 1670 সালে লোহার মুখোশ পরায়ে প্রথমে ফ্রান্সের বিভিন্য কারাগারে রাখার পর শেষে সারাজীবন এই কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। লোহার মুখোশ পরানোর কারন, যাতে করে কেউ তার মুখ দেখতে না পায়। He was the elder brother of king Louis XIV . বোবা এবং বধির মানুষকে দিয়ে সেই বন্দীকে খাবার পরিবেশন করা হত। যাতে তার আকুতি, চিৎকার তারা শুনতে না পায়। সে এক লম্বা ইতিহাস। আজ এটুকুই থাক।
এইভাবে সর্বমোট এক ঘন্টা তিনি আমাদেরকে প্লেনে ঘুরে ঘুরে ফ্রেন্স রিভেরার সব দ্বীপ গুলি দেখালেন। এটা ছিল লো ফ্লাইট অর্থাৎ নীচু দিয়ে প্লেন চালানো। রাজি পেছনে বসে সেই সুযোগে প্লেনের জানালা দিয়ে সমস্থ দ্বীপগুলির স্পষ্ট ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছিল। সবকিছু মিলায়ে সেই একটি ঘন্টা ছিল আমার জীবনের কিছু শঙ্কা, কিছু দ্বিধা আর আনন্দ বিজরিত এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। যা জীবনে কখনই ভোলার নয়। সেদিন বিমান ভ্রমণ শেষে এয়ারপোর্টে নেমে চিফ ইন্সক্টারটারকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা বাসায় ফিরে এলাম।
ধীরে ধীরে কানের দিনগুলি ফুরিয়ে এলো আমার জন্য। কারন ২০ শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ আমার ঢাকায় ফিরার ফ্লাইট। আমাকে বিদায় দেয়ার জন্য রাজি চারদিনের ছুটি নিল। ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে সে আমাকে নিয়ে সুপার মার্কেটে গেল। সেখানে দেশের জন্য কিছু কেনা কাটা করার পর হঠাৎ রাজির চোখে পড়ল ড্রেস করা এক প্যাকেট কোয়েল পাখী, যেটা ওখানে সচরাচর পাওয়া যায়না। সে মহাখুশী হয়ে এক প্যাকেট কিনে ফেলল। ঐ প্যাকেটে ছিল এগারটা পাখী। তাই দেখে আমার তো মাথায় হাত। কারন এই এতরাতে আমাকেই সব চাকু দিয়ে কাটতে হবে আবার রান্না করতে হবে। তাও আবার দো-পিঁয়াজি, তারজন্য অনেক পিয়াজ কাটতে হবে। এইসব চাকু দিয়ে কেটে আমি অভ্যস্ত নই। যা হক ছেলের মহা খুশী দেখে আমিও খুশী হয়ে বাসায় ফিরলাম। তারপর সব কাটা, রান্না সেরে সাথে আবার খিচুড়ি রান্না করলাম।
এসব সাড়তে গিয়ে রাত সারে বারটা বেজে গেল। এরপর খেতে বসে রাজির সে কি আনন্দ। দেশ থেকে যাবার পর এই প্রথম সে পাখীর মাংস খাচ্ছে। আমি কিছু মাংস আর খিচুড়ি তার ফ্রিজে রাখলাম, সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে এসে রাজি আবার খাবে। আর পরদিন পথে খাবার জন্য কিছু আলাদা বক্সে করে সাথে নিলাম।
তারপর রাত চারটায় আমরা সুইজারল্যান্ডের পথে রওনা দিলাম। এবার ঐ ইতালীর মধ্য দিয়ে দুর্গম পথে নয়; ফ্রান্সের ভিতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। অতি সুন্দর রাস্তা। রাজা নেপোলিয়ান একসময় এই রাস্তা দিয়ে রাজ্য জয় করার জন্য যেতেন। পথে একটা ব্রেক নিয়ে রাজি মনের আনন্দে আবার সেই পাখীর মাংস আর খিচুড়ি খেতে শুরু করল। তাই দেখে আমার যে কি পরিমান কস্ট হচ্ছিল তা প্রকাশ করার মত নয়।
এই ছেলেকে আবার বিদেশে (কানে) একা ফেলে আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে হবে। কেন যেন একটা অজানা আশঙ্কায় আমার মনটা হঠাৎ কেঁদে উঠল। পাইলটের ট্রেনিং, তার জীবন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না তো!!!
মায়ের মন সন্তানের বিপদ আগে থেকেই টের পায়। আজ আমি সেই দুর্যোগের কথাই আমার গল্পের মাধ্যমে বলতে চাই। বিধাতার কাছে তাই সেদিন তাকে সমর্পন করে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, “চলো বাবা এবার রওনা দেয়া যাক”। আমরা আবার যাত্রা শুরু করে পথে আর একটা বিরতি নিয়ে মোট ছয় ঘন্টা পর জেনেভায় পৌঁছলাম। এরপর ফিরে এলাম লুযানে বৌমার বাসায়। সেখানে দু’দিন থাকার পর জেনেভা এয়ারপোর্টে সবার বিদায় দেয়া নেয়ার পালা। বৌমা আর তার বাবা মা এসেছেন আমাদের বিদায় জানাতে। অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি বাংলাদেশের পথে, আর রাজি কানের পথে যাত্রা করল।
রাজির আসন্ন বিপদাসঙ্কায় আমার মন সেদিন কেন এক অজানা আশঙ্কায় আবারও কেঁদে উঠেছিল, এখন সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে আমার বুক কেঁপে উঠছে। কান থেকে আমার ফিরে আসার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেই অপ্রাত্যাশীত দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছিল কানে।
*
সেদিন ছিল ৩ রা অক্টোবর ২০১৫ সন। কানে রাত্রি ১০ টা, ঝিপ ঝিপ বৃষ্টি,সাথে মেঘের প্রচণ্ড গর্জন। রাজি তার ডুপ্লেক্স ভিলার নীচ তলায় একটা বেডে শুয়ে শুয়ে পড়াশুনা করছে। প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে সাধারণত সে রাত ন’টার দিকে ঘুমিয়ে পরে। সেদিন কেন যেন তার ঘুম আসেনি। হঠাৎ সে দেখল, প্রচণ্ড শব্দে হুর হুর করে কাঁচের দরজার ফাঁক দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে তার ঘরের ভিতরে। মুহূর্তের মধ্যে তার হাটু পরিমান পানি। সে বুদ্ধি করে তাড়াতাড়ি সমস্ত ইলেট্রিক প্লাগ গুলো একে একে খুলে তার ল্যাপটপ সহ আরও নানা প্রকার ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জাম যতটা সম্ভব শিড়ি বেয়ে দোতালায় নিয়ে রাখল।
ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্ধকারে হাতড়িয়ে রাজি বেশী কিছু দোতালায় নিতে পারেনি। কিছুক্ষনের মধ্যে ছয় ফুটেরও বেশী লম্বা এই ছেলের কান পর্যন্ত পানি ঊঠে গেল। বরফের মত ঠান্ডা কাদা যুক্ত পানি। তখন বই পুস্তক আর জিনিস পত্রের মায়া ছেড়ে পিচ্ছিল সিঁড়ি বেয়ে কোন রকমে দোতালায় গিয়ে সারা রাত গভীর মনযোগে ভাগ্য বিধাতার নিকট প্রার্থনায় রত হল।
বাহিরে প্রচণ্ড ঝড়ের তান্ডব লীলা আর পাহাড়ি ঢল সারা রাত চলতে লাগল। বড় বড় গাছ ভেঙ্গে ঘর বাড়ির দরজা জানালা ভেঙ্গে, গাড়ী গুলো ভেসে ভেসে উল্টে পালটে লন্ড ভন্ড অবস্থা। পরদিন বেলা ১ টা পর্যন্ত তার ঘরের মধ্যে কাদা আর পানি। আসবাব পত্র সব লন্ড ভন্ড অবস্থা।
ওই এলাকায় অসঙ্খ ডুপ্লেক্স ভিলাগুলো পানির মধ্যে ভাসছে। এদিকে সেই রাতেই বৌমা এবং তার বাবা মা টিভির খবরে ফ্রান্সের এই দুর্যোগ দেখে সারা রাত তারা পেরেশান হয়ে ফ্রেন্স পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেস্টা করে বিফল হলেন। সকাল থেকে পুনরায় প্রবল দুশ্চিন্তা নিয়ে তারা পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেস্টা অব্যাহত রাখলেন।
বেলা একটার দিকে তারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। পুলিশ তখন সেই এলাকায় গিয়ে রাজিকে খুঁজতে থাকলেন। রাজির মোবাইল পানিতে ডুবে গেছে। দোতালায় আমি আমার পুরানো মোবাইলটা রেখে এসেছিলাম। সেই মোবাইলে ফ্রান্সের সিমে সামান্য কিছু ইউরো ছিল। রাজি বহু কস্ট করে কাদার মধ্যে একটা কাঁচের দরজা সর্বশক্তি দিয়ে একটু ফাঁক করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। এমন সময় পুলিশ এসে তার পরিচয় জেনে তাকে বলেন, “ফেমেলির সাথে কথা বলেন”। রাজি আমার ছেড়ে আসা মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে কোনভাবে বৌমাকে বলতে পেরেছিল, “প্লিজ কল ব্যাক”। তারপর তারা মোবাইলে কথা বলতে পেরে সবার যেন দেহে প্রান ফিরে এসেছিল।
এদিকে বেলা পাঁচটা বাজে, রাজির কিছু খাওয়া হয়নি রাত থেকে উপোষ। খাবার পানি পর্যন্ত নেই। বাহিরে সব লন্ড ভন্ড অবস্থা, রাস্তা ঘাট বড় বড় গাছ আর ভেসে আসা গাড়ি দিয়ে বন্ধ। ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ। সে এক ভয়াবহ দিন। ফ্রান্সের দুইশত বছরের ইতিহাসে এমন দুর্যোগ হয়নি। বেশ কিছু প্রানহানি হয়েছিল সেদিন। রাস্তায় বা হাই ওয়েতে যারা ঐ সময় গাড়ী চালাচ্ছিলেন তাদের মধ্যে যারা গাড়ী থেকে বের হয়ে সাঁতার দিয়েছিলেন, তারা বেঁচে গেছেন। গাড়ীগুলো রাস্তার পাশের গভীর খাদে পরে ছিল।
অনেকে তাদের দামী গাড়ী আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে বের করতে গিয়ে দশ পনের সেকেন্ডের মধ্যে গাড়ী সহ ডুবে গেছেন। তাদেরকে আর রক্ষা করা যায়নি। রাজির এলাকায় প্রায় ছাব্বিশজন প্রাণ হারিয়েছিল। রাজির পাশের প্রতিবেশী স্বামী স্ত্রী সেই রাতে বাসাতেই প্রাণ হারান। রাজি ঐ সময় ঘুমিয়ে থাকলে তার ভাগ্যে কি ছিল বিধাতাই ভাল জানেন! আর সেই কারনেই বুঝি আমার মন সেদিন পথের মধ্যে এক অজানা আশঙ্কায় কেঁদে উঠেছিল। একেই বলে মায়ের মন !!!
সমাপ্ত