বৃদ্ধাশ্রম
মুহাম্মাদ আনোয়ার হোসাইন
বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি শোনো লক্ষ্মী শোনা খোকা
তোকে আজ বলছি না বলা কিছু কথা
নয়তো তোকেও খেতে হবে পদে পদে ধোকা।
একটি জায়নামাজ ও কিছু খেজুরের মোহরানা দিয়ে
তোর বাবার সাথে সেদিন আমার হয়েছিল বিয়ে
দিনমজুর স্বামীর সাথে শুরু হলো অভাবের সংসার
অন্ন বস্ত্রের অভাব থাকলেও অভাব ছিলোনা ভালোবাসার
সময়ের ব্যবধানে ধরনী আলোকিত করে এসেছিলি যেদিন
গরু বিক্রয়ের টাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছিলাম সেদিন
তোর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রতিবেশীর বাসা থেকে
তোর বাবা ভাতের মাড় আনতেন হাত পেতে
তোর সুখের জন্য বাসায় করেছি ঝিয়ের কাজ
রাস্তায় পিঠা বিক্রি করতেও করিনি শরম লাজ
এক কাপড়ে পার করেছি দুই তিন বছর
এ সময়ে তোকে পোশাক দিয়েছি অসংখ্য বার
তোর প্রস্রাবে ভিজে যাওয়া কাপড়ে কাটিয়েছি রজনী
তোকে ভেবেই কাটিয়েছি কত রাত বুঝতেই পারিনি
বহু দিন অভুক্ত থেকেও খাবার খাইয়েছি তোকে
প্রচন্ড অভাবে থেকেও অভাব বুঝতে দিইনি তোকে
তোর বিভিন্ন পরীক্ষায় বিক্রয় করেছি যাবতীয় গহনা
তোর উচ্চ শিক্ষায় বিক্রয় করেছি অবশিষ্ট স্থাপনা
আজ তুই বিসিএস ক্যাডার ও পিএইচডি ডিগ্রীধারী
হয়েছে তোর দেশ বিদেশে অসংখ্য গাড়ি বাড়ি
মডার্ন বৌ নিয়ে তুই আজ আলিশান অট্টালিকায়
আমার অবস্থান খোকা বৃদ্ধাশ্রমের অন্ধকার নির্জন মনিকোঠায়
বহুদিন তোকে দেখিনা আমি সইতে পারছি না
একবার দেখা দে-না দোয়া করবো অভিশাপ দেবোনা
খোকা সন্তানকে মানুষ হতে শেখাবি সার্টিফিকেটধারী না
নয়তো সন্তানের বাসা নয় বৃদ্ধাশ্রম হবে ঠিকানা।
————————-
মুহাম্মাদ আনোয়ার হোসাইন
রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।