বিকৃত ভালোবাসা।
তাহমিনা আক্তার।
রাখী আর রবীনের বিবাহিত জীবনের সতের-আঠারো বছর চলে। তারা দুই সন্তানের জনক-জননী। পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে হয়। স্বামী-স্ত্রী দুই জনই কলেজ শিক্ষক। বিয়ের পর থেকেই শশুর বাড়ির লোকেরা তাকে আপন করে নিতে পারিনি। বিশেষ করে শাশুড়ী তাকে আপন করে নিতে পারেনি। বউকে ভালো চোখে দেখার মানসিকতা তার ছিল না। রবীন কে বিভিন্ন ভাবে কুপরামর্শ দিতে থাকে। রবীনের আগে থেকেই নারী প্রীতি বেশি ছিল। স্ত্রী প্রীতি ছিলো না। রাখী অনেক স্বপ্ন নিয়ে শশুর বাড়ি গেল, কিন্ত তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন গুলো আস্তে আস্তে বিবর্ণ হতে লাগলো। রাখী তার দুই সন্তানের মাঝেই তার স্বপ্ন গুলোকে গুটিয়ে নিতে লাগলো ১৭/১৮ বছর একই চাদের নিচে বসবাস করে কেউ কারোর হতে পারলো না। যাকে বলে এটাই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। হায়রে মা… সন্তানদের ছেড়ে অন্য কাউকে নিয়ে জীবন-যাপনের কথা ভাবতেই পারে না। তার নাড়ি ছেঁড়া ধন, তার চোখের মনি। আর সন্তানের বাবা অন্য নারীর সঙ্গে লটরপটর করে যাচ্ছে। আরো একটি বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছেন। বড়ো মেয়ে সামনের বছর এস, এসসি পরীক্ষা দিবে। ছেলেটা ছোট। রাখী শুধুই রবীনের যৌন ক্ষুধা মেটানোর খোরাক ছিল। এছাড়া আর কিছু না। রাখী দেখতে খারাপ ছিলো না, দেখতে মোটামুটি সুন্দর ছিলো। নারী প্রীতি ওয়ালা স্বামীর কাছে পড়লে মেয়েদের জীবন এভাবেই নিঃশেষ হয়ে যায়। যার জীবনে প্রথম কষ্ট দিয়ে শুরু হয়, তার বাকি জীবনটাও কষ্টের বোঝা বহন করে চলতে হয়। করোনার সময়ে হঠাৎ করে রাখী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল, রাখী মরণ-ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত। অপারেশন হলো, রবীনের স্বপ্নের দরজা খুলে গেল। রবীন এখন বাসা ভাড়া, বাজার করা ছাড়া সংসারে আর কোনো খরচ করে না। দুটি সন্তানের খরচ এবং নিজের খরচ, রাখী নিজেকেই বহন করতে হয়। রাখী যত দিন বেঁচে থাকবে, মরণ যন্ত্রণা আর দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াবে। রবীন যেকোনো দিন হয়তো বা রাখীর সামনে হাজির হবে। পাঠকের জানার ইচ্ছা থেকে যাবে রাখী শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে আরো কতো দিন বেঁচে থাকবে। তিলে তিলে নিঃশ্বেষ হ’য়ে হয়তো বা এ পৃথিবীর ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাবেন। দুটি সন্তান হারাবে মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা, মায়ামমতা। বাবা পাবে তার যৌন ক্ষুধা মেটানোর খোরাক…!