শিমুল ফুলের বাসি মালা
নার্গিস পারভীন
পর্ব: ০৩
রথীন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একটা চেয়ার টেনে বারান্দায় আমাদের সামনে এসে বসলো। তা দেখে কাকাবাবু শিমুকে নিয়ে বেরোনোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বাতিল করে শিমুকে বললেন,– ‘দিদু ভাই, কালকের সকালে আমরা বেড়াতে যাব, কেমন’? শিমু মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
সবাই প্রায় চুপচাপ। রথীন ও হাঁটুর উপর দন্ডায়মান হাতের মুঠোর উপর থুতনি রেখে নিজের পায়ের পাতার দিকে চোখ রেখে বসে রইল। কাকাবাবু একবার গলা খাকারি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন দেখে আমি কথা শুরু করবার দায় নিলাম।
–’ঘুম হলো জামাইবাবু’?
–’না, সেভাবে হয়নি। শুয়েছিলাম’,,,,
–’ও আচ্ছা। তো বলুন জামাইবাবু ব্যবসা কেমন চলছে?
পেশেন্ট কেমন হচ্ছে এখন’?
আমি উত্তরের অপেক্ষায় রথীনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
–’ঐ চলে যাচ্ছে’,,,, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রথীন।
আমাদের চুপচাপ দেখে রথীন আবার বললো–’তোমার বাড়ির খবর বলো রক্তিম। জেঠিমা কেমন আছেন? রনিন আর তুলির খবর বলো’
–’সবাই ভালোই আছে। মা এখন এখানে নেই। ফোনে কথাবার্তা হয় মাঝেমধ্যে’।
– ‘খুব ভালো’।
দেখলাম রথীন কাকাবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে।
এতক্ষণে যেন জামাইবাবুর মুখটা একটু স্বাভাবিক উজ্জ্বল মনে হল।
এই আশ্বাসে ও সুযোগে চট করে পাঠকদের আমার পরিচয় দিয়ে নিই। পরেশ কাকা আর আমরা একই পাড়ায় থাকি। প্রতিবেশী হলেও ছোট থেকেই পরেশ কাকার সান্নিধ্য আমার কাছে পিতৃতুল্য। আমার জন্মের আগেই আমার বাবা মারা যান। মা আমার কথা ভেবেই সংসার আঁকড়ে পড়ে থাকেন। জন্মের পর মা অবশ্য আমার কাছে থাকতে পারেননি। ঠাম্মার অত্যাচারে ছয় মাসের আমাকে রেখেই মাকে দাদুর বাড়িতে চলে যেতে হয়। আমি বড় হতে থাকি ঠাম্মা আর মেজ কাকিমার কাছে। আর তখন থেকেই পরেশ কাকা আমাকে নিজের সন্তানদের থেকে আলাদা করে দেখতেন না। পড়াশোনা থেকে শুরু করে পৈতৃক স্থাবর অস্থাবর জায়গা জমি উদ্ধারে উনি আমার জন্য কঠিন লড়াই করেছেন। আমার বিবাহ থেকে যা কিছু আজ পর্যন্ত পরেশ কাকাই নিঃস্বার্থে সামলেছেন। পৈতৃক ভিটায় আমার স্বাভাবিক যে অস্তিত্ব তা একমাত্র পরেশ কাকার দৌলতেই। আমার স্ত্রী তুলি অর্থাৎ তুলিকা রায় ও একমাত্র পুত্র রনিন কে জামাইবাবু ও একটু বেশিই ভালবাসে। মা অবশ্য এখন মাঝেমধ্যেই আসেন আমার সংসারে। সেই সূত্রে জামাইবাবু আমার মাকে জেঠিমা ডাকে।
পরেশ কাকাকে এবার রথীন বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলো– ‘বাবাই, আপনার শরীর এখন ভালো তো? প্রেশার কন্ট্রোলে আছে তো?’
কাকাবাবু মাথা নেড়ে বললেন– ‘ হ্যাঁ বাবা, সব ঠিক আছে।
চলবে …..