জনগণই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানার : মাহফুজ আলম। প্রতিবিম্ব প্রকাশ।
‘জনগণই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানার, এখন সময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করার’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. মাহফুজ আলম।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক। মাহফুজ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে বৈষম্যরিবোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন।
নিয়োগ পাওয়ার পর আজ শুক্রবার মাহফুজ আলম তার ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
মাহফুস আলমের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
গণ-অভ্যুত্থানের গণচরিত্র ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ! ব্যক্তির বদলে সামষ্টিক চিন্তা মোকাবেলা গুরুত্বপূর্ণ!
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন কারা? নির্দিষ্ট করে বললে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিক অংশ। এ নাগরিক বা জনতা যদি বলতে চান- তাদের রূপ আর রং বহুত। সব শ্রেণি-পেশার, দল-মতের লোকেরাই এ অভ্যুত্থানের অংশীজন।
এখনই কাউকে বড় করে তোলা কিংবা কাউকে খাটো করে দেখার সময় নয়।
কিন্তু মনে রাখতে হবে এ গণ-অভ্যুত্থানের গাঁথুনিতে আছে আন্দোলনের সমন্বয়করা এবং আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পূর্বেকার অভিজ্ঞতাপ্রসূত চিন্তা। সে চিন্তা সামষ্টিক, কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা সেটার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এতটুকু বোঝেন।
আন্দোলন ছিল ভ্যানগার্ড পার্টির মতো- এ কথাটাও বোঝেন।
বাঙালি ভক্তি অথবা ঘৃণার মাঝামাঝি থাকতে চায় না বোধ হয়। Idea বা চিন্তার বদলে Idolization কি ক্ষতিকর, আমরা বিগত ফ্যাসিবাদে দেখেছি। ফলে চিন্তা নিয়ে কথা বললে ব্যক্তি কম গুরুত্ব পাবে এবং চিন্তাকে কেন্দ্র করেই বিতর্ক চলবে। এর মাধ্যমেই একটা সৃজনশীল রূপান্তর সম্ভব।
সবাই এর মাধ্যমেই উপকৃত হবে।
আমরা চাই, এত দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ভেতরে গড়ে ওঠা সব চিন্তাকে প্রতিনিধিত্ব করতে। সেটা দুরূহ কাজ। কিন্তু এ রকম না হলে পুরাতন ইডিওলজিকাল ফ্যাসাদে আমরা খাবি খাব। আর সবাই নিজস্ব খোপে বেহুদা তর্কে ও ব্যক্তি আক্রমণে নিজেদের ক্লান্ত করে তুলবেন।
গণ-অভ্যুত্থান ব্যাখ্যার স্বাধীনতা সবার আছে। সেটাই কাম্য। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের ভেতরকার চিন্তাগত ডিনামিজম যে গুটিকয় জানবেন, সেটা তো অস্বাভাবিক না। এ গুটিকয় লোক সামষ্টিক চিন্তার প্রতিনিধিত্ব না করলে এবং সবাইকে ধারণের বিশালতা না রাখলে, প্রতিবাদ ন্যায্য। কিন্তু এ অন্তর্গত ডিনামিজিম যে গণ-অভ্যুত্থানের জন্য ক্যাটালিস্ট ভূমিকা রাখছে, সেটা ভুলে গেলে মবোক্রেসিই চলবে, তর্ক আর সংলাপ সুদূরপরাহত। আপনাকে তো একটা বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে।
আমরা কেবল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে নোকতা দিয়েছি, শুরুর বিন্দুগুলো বলেছি। এখন আবার আমরা জনগণের কাছে যাব, আরো বিচিত্র চিন্তাকে একোমডেইট করে কিভাবে সেটাকে রাষ্ট্রকল্পে রিপ্রেজেন্টেড করে তোলা যায়, সে চেষ্টা করব। আমরা ভুলতে চাই না যে আমরা নেতৃত্ব ও চিন্তার জায়গাতে ছিলাম, নিজেদের শক্তিতে নয় বরং আপনাদের প্রতিনিধিত্বের শক্তিতে।
আমরা ব্যক্তিমানুষ নশ্বর, এই আছি, এই নেই। কিন্তু চিন্তা ও গণচেতনা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জীবনীশক্তি তথা আবেহায়াত!
পুনশ্চ: একজন বলছিলেন, যদি রাজনৈতিক শক্তি আকারে সংঘটিত হয়ে নির্দিষ্ট রূপকল্পের ভিত্তিতে এ গণ-অভ্যুত্থান হতো, তাইলে এটা বিপ্লবী সরকারে গিয়ে ঠেকত! ফলত, এখানে মাস্টারমাইন্ড জাতীয় কিছু নেই। হইলে আমরাই খুশি হইতাম এবং ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করে নিজেদের জানান দিতাম। কিন্তু আমরা আজীবন লড়াই করব, সে পরিপূর্ণ বিজয়ের জন্য। সেদিন এ মুকুট আমরা নিজেরাই ধারণ করব। অদ্য নয়! এ গণ-অভ্যুত্থান বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বলে আপনারা আমোদিত, বিহ্বল-সত্য। কিন্তু এত দ্রুতই কাল্টিজমের দিকে যাইয়েন না। তাইলে আমাদের দীর্ঘ লড়াই বাধাগ্রস্ত হবে। এখন সময় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করার! জনগণই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানার!