কাণ্ডজ্ঞান: কাণ্ড ও জ্ঞান
(মাইন উদ্দিন আহমেদ)
কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে ভাবছিলাম। কাণ্ডজ্ঞান অর্থ কি? ছাত্রজীবনে কখনো কাণ্ডজ্ঞান শব্দের অর্থ কোন শিক্ষক কখনো ক্লাসে আলোচনা করেছেন বলে মনে পড়ছেনা। প্রাইমারীতে, হাইস্কুলে, কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে– কোথাও স্যারদের মুখে কাণ্ডজ্ঞান শব্দের অর্থ ছাত্রদেরকে জানাতে শুনিনি। তবে দুএকবার কোন কোন ছাত্রকে কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়ার জন্য তিরস্কার করতে শুনেছি। তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো? যাক, ওই আলোচনা অন্য সময় হবে, এখন আমরা কাণ্ডজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করবো।
কাণ্ডজ্ঞান জিনিসটা কি, এবার সন্ধান করে দেখা যাক। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, “কাণ্ডজ্ঞান অর্থ ভালমন্দ জ্ঞান, প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান।” এবার আলাদা করে কাণ্ড এবং জ্ঞান এই দুই শব্দের অর্থ খুঁজে দেখা যাক। যা পেলাম তা হচ্ছে, কান্ড শব্দের অর্থ হলো, “গাছের গুঁড়ি, বাশ, বেত প্রভৃতির এক গ্রন্থি হতে অন্য গ্রন্থি।” আর জ্ঞান শব্দের অর্থের সন্ধান করে পেলাম, “জ্ঞান বলতে কোন বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা থাকাকে বুঝায়।”
তাহলে পুরো বিষয়টা কি দাঁড়ালো? গাছের গুঁড়ি সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে তা হচ্ছে কান্ডজ্ঞান– বিষয়টা এরকমকি? তাইতো মনে হয়। তাহলে আমরা এতোদিন কি ধারনা নিয়ে চলছিলাম! আমার কাছে মনে হয়, ডাল বা কান্ডের আগার দিকে বসে গোড়ার দিকে কাটা উচিত নয়, এরকম জ্ঞানকেই কাণ্ডজ্ঞান বলে। আপনাদের কি মনে হয়? ব্যপক অর্থে এটা হতে পারে যে, নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ জ্ঞান থাকাই হচ্ছে কান্ডজ্ঞান। নিজের কল্যাণ যিনি বুঝবেন তিনি অপরের মঙ্গলও বুঝবেন, সমাজের কল্যাণও বুঝবেন। কান্ডজ্ঞান থাকলেই হলো।
আমাদের সমাজে কান্ডজ্ঞানের সংকট অপরিসীম। বিশেষতঃ তথাকথিত আঁতেল সমাজে এই সংকট সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ বা অশিক্ষিত সমাজেতো জ্ঞানেরই অভাব থাকে, কন্ডজ্ঞানতো আরো দূরের কথা।
একজন মাঝি বলছেন, ঐ বাস ড্রাইভারটার দক্ষতার অভাব আছে আর একজন বাস ড্রাইভার বলছেন, ঐ পাইলটটা ভবিষ্যতে অনেক চমৎকার প্লেন চালাতে পারবে– কি বুঝলেন! প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কোন সমাজের চিত্র এটি! এই চিত্রটি যে সমাজের, সেই মানবগোষ্ঠীর ভবিষ্যত কি হবে তা ধারণা করার জ্ঞান আপনাদের আছে। অতএব সাধু সাবধান।
আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো। তাহলো, কোন সমাজ যদি তাদের সহজ-সরল মানুষদেরকে বোকাদের দলে ফেলে দিয়ে বঞ্চিত করে তখন ঐ সমাজ এক সময় সৎমানুষহীন হয়ে পড়ে। আর বেশি কিছু বলবো না। আপনারা চারিদিকে চেয়ে দেখেন। পরিস্হিতি বুঝবার মতো জ্ঞান অবশ্যই আপনাদের আছে। আমি জানি যে, এই লেখার পাঠকমহল সবাই কাণ্ডজ্ঞানের অধিকারী এবং মন ও মননে উঁচু মানে অবস্হানকারী। সবার জন্য আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
লেখক: কবি ও ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক;
(নিউইয়র্ক/আমেরিকা)।
১ Comment
very good job; Congratulations.