কষ্টের ফেরিওয়ালা
নাজমুন নাহার লাডলী
কষ্টের ফেরিওয়ালা
ও কষ্টের ফেরিওয়ালা
কষ্ট তোমার কি ?
কত কষ্ট বেচো তুমি
কোনটার দাম কত
জানতে পারি কি?
ঝুড়িতে তোমার
আর কত কষ্ট আছে
আমার থেকেও বেশি?
কষ্টের রং শুধুই কি নীল
লাল সবুজ হয় না কি
তোমার কষ্ট আমায় দিবে
করব ফেরি তোমার মতো
বন্দি থেকে মুক্তি দিবে কি?
তুমি কত্তো স্বাধীন
বাড়ি বাড়ি ফেরি করো
দূর দূরান্ত ছুটে চলো
আমার আকাশটা জানো
ভীষণ ছোট।
কষ্টের ফেরিওয়ালা
ও কষ্টের ফেরিওয়ালা
তুমি আমার বাবাকে
ঐ আকাশে দেখেছো কি?
ওখানেই তারা হয়ে আছে
দেখা হলে বলো
তার আদরের মেয়ে
ভালো নেই তাকে ছাড়া।
এখন আর তার
কেউ খোঁজ নেয় না
চোখের কান্নাগুলো
কেউ মোছে না।
এখন আর কেউ বলে না
চোখের নিচে কালি
জমেছে কেন তোমার
খাও না বুঝি ঠিক মতো
রাত্রি জাগো নিশ্চয়ই?
ফেরিওয়ালা কেউ বলে না
ডাক্তার দেখিয়েছো তো
কেউ বলে না
দুধে আলতা গায়ের রংটা
কেমন করে হচ্ছে কালো!
কেউ নাইওর নিতেও
আসে না যে আর
প্রিয় খাবার যত্ন করে
বক্সে ভরে কেউ আনে না।
অসুখ হলে খবর
নেয় না তো কেউ
জানো ফেরিওয়ালা
আমার বাবা অনেক কষ্ট
পেয়ে মরেছে
সব কষ্ট তো যায়না বলা!
কষ্টের ফেরিওয়ালা যদি
বাবার সঙ্গে দেখা হয়
বলো আমি আর কাঁদি না!
কষ্টগুলো জমিয়ে রাখি
ঠিক বুকের গভীরে
এতটাই গভীরে যে
কেউ তার নাগাল পায় না।
সারারাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে
ঐ আকাশে বাবাকে খুঁজি
আমার আকাশটা তো
অনেক ছোট তাই
ঐ তারাদের ভীড়ে
বাবাকে পাই না খুঁজে।
কষ্টের ফেরিওয়ালা
তুমি তো অনেক দূরে যাও
কত কত দেশ মহাদেশ
সাত সমুদ্র পাড়ি দাও।
ভালোবাসার মানুষ আমার
নেয় না তো খবর আর
পারবে কি তুমি এনে দিতে
একটি বার খোঁজটি তার?
আমার কষ্ট দিও না তাকে
দেখা হলে বলো
আমি বেশ ভালো আছি
অনেক কষ্ট জমিয়েছি
কষ্টকে আড়াল করে
হাসতে শিখে গেছি।
আরও অনেক কষ্ট আছে
সব কথা কি বলা যায়
সব স্মৃতি কি ভোলা যায় ?
কষ্টের ফেরিওয়ালা
ও কষ্টের ফেরিওয়ালা
তোমার বোঝা বেশি হলে
আমায় দিয়ে তুমি
হালকা হতে পার
আমি কষ্টের পাহাড়
বানাবো এই বন্দিখানায় ।
আমার কষ্ট সইবার শক্তি আছে
তাইতো সবাই কষ্ট দেয়
কিন্তু আমি বেচবো না
আমি শুধু কিনব
যেন সবার কষ্ট
একটু হলেও হালকা হয় ।
কাব্যগ্রন্থ: কাচের ভালোবাসা