০১) বালুকাময়
সামান্য সম্ভোগ আর অলসতা
মোহময়ী নদীর কাছে বন্ধক রেখে
যাপন
বোধহয় রাত্রিমেদ পুড়ে যাওয়া চর
এই অচেনা বালুর জীবন
ভেতরে বিনম্র শ্যাওলার স্তর
কতবার মৃত্যু হলে একেকটা ভোর হয়
রুমালে লেখা নাম মুছে যায়
চোখ মুছতে মুছতে চলে যাওয়া ভোর
কলঙ্কিনী রাতের চুড়ি
আর লক্ষ্মীর সরা পড়ে থাকে দ্রোহজলে
যাকে ভাগ্য বলে লোকে
তার আশেপাশে কোনো বাতাস থাকে না
গাছপালা মাঠঘাট কিছুই থাকেনা
নদী কেমন ঠোঁট উল্টে শুয়ে থাকে
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই বলে
০২) তদুপরি
রোদের চামচিকারা ঝুলে পড়ছে বেয়ারা রঙের কার্নিশে চামড়ার হিমশিম
ঘামা শব্দের ব্যুৎপত্তি ফেটে বেরুচ্ছে ঘিঞ্জি গলির
দামী পোশাকের শখ ড্যাম্প আতসবাজির মতো ফুসসস
ছাদে মেলে দেওয়ার ব্যাপারগুলো অদরকারি
নিমগাছের ইদানিং থেকে যত অশান্তির জট
বুকের গভীরে নেমে যেতে যেতে বাতাসের অভ্যাসগুলো
লোডশেডিং অস্বীকার করছে
এইজন্মে আগুনের অপেক্ষা মিটিয়াছে
চোখের ডাকবাক্স উগলে খাচ্ছে অচরিচারিত পাপ
পৃথিবীরও অভিমান হয়
মহাভারতের ভেতর যত কুন্তী নামে
০৩) জানো কী
গন্ধেরা ঘুঘু খেলে যায়
আলোচনা না বুঝেই ভেঙে যায় স্রোত
পাড়ের অধিকার যদি শাওনের রাত
মাছরাঙা চলে যায় নিবারণ রাগে
ভুলে যাওয়া পাখির ঠোক্কর
ঘোলা জলে পাক খেয়ে মরে
নৌকার পাদানিতে লাগে
যদি ঢেউ ঘুরে যায়
তাকেই কি অভিঘাত বলে
বেআব্রু নদী তবে
গভীর শপথ রেখে
কোনদিকে যায়
কোনদিকে যায়।
——————————-
কৌস্তুভের রক্তে কবিতা। বাবা কবি (স্বর্গীয়) কিরণ গোপাল দে সরকার ও মা দীপিকা দে সরকারের সুযোগ্য চতুর্থ তথা সর্বকনিষ্ঠ সন্তান কৌস্তুভের জন্ম ২৪ শে অক্টোবর ১৯৭৩ সাল। সেই ছেলেবেলা থেকেই তার কবিতার প্রতি এক অফুরন্ত ঝোঁক । প্রথম একক কবিতাপত্র – ‘এখন কবিতা ঃ মধুমিতা”। উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি হাইস্কুলে স্টার পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করার পর উচ্চ-মাধ্যমিকে ভর্তি হন রায়গঞ্জ সুদর্শনপুর দ্বারিকা প্রসাদ উচ্চ-বিদ্যাচক্র স্কুলে। এরপর রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে ইতিহাস অনার্স পড়াকালীন কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ কবির সম্মান পান। এ সময় তার কবিতা ফোল্ডার – ”রাত্রিকালীন মেসোপটেমিয়া” প্রকাশিত হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এম এ পাঠরত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার কবিতা শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আকাশবাণী শিলিগুড়ির যুব অনুষ্ঠানে বহুবার স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছেন। উত্তরবাংলা টিভি চ্যানেলেও কবিতা পাঠ করেছেন। তার লেখা আধুনিক গানের ফোল্ডার ”শুধু গান” প্রকাশিত হয় ১৪০৮ বঙ্গাব্দের ১ আষাঢ়। সেই বছরই প্রয়াত পিতার স্মরণে-শ্রদ্ধায় ”বাপুর জন্য কবিতা” ফোল্ডার প্রকাশ করেন। ”সাংবাদিকের ডায়েরী থেকে”, ”রিল”, ”একলাইন” ও ”ফেসবুক” তার কবিতা প্রকাশের আরও কিছু নিজস্ব প্রচেষ্টা। ফেসবুকে ও ইউটিউবে যথেষ্ট জনপ্রিয় এই কবির কবিতা রাজ্যের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। ”জার্নি ইন দ্য রেইন” তার বৃষ্টি ভেজা দিনের সমবায়ি রং-বাহারী স্বপ্নের এক ভিন্নধর্মী কবিতা ভাবনা, যা তার শৈশব- কৈশোর- যৌবনের প্রবহমান ধারাকে এক নস্টালজিক বোধে সম্পৃক্ত করে একটি একক দীর্ঘ – কবিতাকারে তুলে ধরেছে। ইতিমধ্যেই ‘রং-রুট, ছোটদের ছড়ার বই, কৌস্তুভের আবৃত্তিযোগ্য কবিতা, এখন কবিতা : মধুমিতা, প্রাগৈতিহাসিক প্রেমের কবিতা, কবিতার সেকাল-একাল, বছর শেষের প্রেমের কবিতা, প্রভৃতি বেশ কিছু কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে । সম্প্রতি প্রকাশিত হবার অপেক্ষায় রয়েছে কবির সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক নতুন কাব্যগ্রন্থ – “বিদেশি কবিদের কবিতা : কৌস্তুভের অনুবাদ”। কবি (স্বর্গীয়) কিরণ গোপাল দে সরকার দ্বারা ১৯৬৯ সাল থেকে সম্পাদিত ”চেতনা”-র বর্তমান সম্পাদক কবি কৌস্তুভ দে সরকারের কলমের চিরসবুজ ছোঁয়ায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে নিত্য নতুন প্রাণ সঞ্চার হচ্ছে অবিরাম। পাঠের আনন্দে পাঠক, আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আজীবন সঙ্গে থাকুন কৌস্তুভের কবিতার। আমরাও আরও অনেক নিত্যনতুন কবিতা উপহার পাই কবির কাছ থেকে।