একটি কালো রাত।
ছোটগল্প।
খাদিজা রহমান কল্পনা
রাত তখন দুই টা কি তিনটা বাজবে হয়তো। একটা দুর্স্বপ্ন দেখে এক চিৎকার দিয়ে উঠলো মিমি। বিরবির করে বলতে লাগলো না না এটা হতে পারে না। তুমি এটা করতে পারনা। আমি বিশ্বাস করি না। না না। চোখ তখনো ওর বন্ধ। ওর শরীর অনবরত থরথর করে কাঁপছে ।হাত পা মরিচের জলা জলছে। বুকটা ধরফর করছে। মুখ দিয়ে কথা বলতে চায়ছে কিন্তু জুড়ে বলতে পারছেন না।ধমটা আটকে যাচ্ছে । ধীরে ধীরে চোখটা খোলে দেখে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তখন ও বুঝতে পারলো ও এতক্ষণ স্বপন দেখছিল।
পিপাসায় গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে । ওর পাশে নাক ডেকে ঘুমাচছিল শোভন। মিমি বরকে ধাক্কা দিয়ে ডাকছিল।।এএএই শুশুশুনছ। শোভন বিরক্ত হয়ে বললো কি কি হয়েছে?এতো রাতে নাটক করছো কেন? ঘুমাও। শান্তি তে ঘুমাতেও দেবে না। মিমি বুঝতে আর বাকি রইলো না যে শোভন সব শুনতে পেয়েও চুপ করে আছে। মিমি আবার ও ডাকলো পা পা পা নি খা খাব।শোভন রাগাননিত হয়ে উঠে বসলো। পঙ্গু হয়ে গেছ উঠে যেয়ে পানি খেতে পারছ না। আবার কম্বলটা মাথা পর্যন্ত টেনে শুয়ে পড়লো।
উঠে দাড়াবার শক্তি টাও পাচ্ছিল না মিমি। আবার ও বেহায়ার মতো ডাকলো ওওওগো শু শু শুনছ? আমার খুব খারাপ লাগছে গগগলা শুশুশুকিয়ে যাচ্ছে। পাপাপা নি….।
শোভন এক ধমক দিয়ে বললো?তো…? আমি কি করবো? ঘুমাআআআআও। বাল শান্তি তে একটু ঘুমাতেও দেবে না। নাটক শুরু করছে। এই বলে শুয়েই রইলো। চোখ থেকে পানি আর ধরে রাখা গেলো না। পরম শত্রু ও মনে হয় এতোটা পাষাণ হতে পারেনা।আছতে করে মেয়ে কে ডাকছিল সিঁথি…পাশের রুমে শুয়ে থাকা মেয়ে টাও কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। কোনও উপায় না পেয়ে বসে বসে পঙ্গুর মতো ডাইনিং টেবিলে গেল। ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে মুখের সামনে আনতেই হাত কেঁপে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে গেল। পানি আর খাওয়া হলোনা। চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছিল। গলা শুকিয়ে অবস্থা খারাপ। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছিল। আজ সব থেকেও কেও নেই।
পৃথিবীটা নিরবতায়। এই কনকনে শীতেও মিমির মাথা থেকে গরম হাওয়া বের হচ্ছে। থরথর করে কাঁপা শরীর টাও আর চলছে না। মনে হচ্ছে এই রাতেই ওর…। ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল।দরজা টা খুলে কল থেকে কাচা পানি দুহাত দিয়ে ধরে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে যেয়ে শাড়ি টা ভিজে গেল। মিমির চোখ থেকে গরম হাওয়া বের হচ্ছিল। কনকনে শীত মিমির গা কাটা দিয়ে উঠলো। গা টা নারাবার শক্তি টাও নেই।বরফের মতো শক্ত হয়ে গেল।কল টা দিয়ে পানি পড়ছে মিমির মাথায়।তারপর মিমি আর কিছু বলতে পারে না…
হঠাৎ সিথির চিৎকার শুনে মাআআআআআআআ”শুভন ঘুম থেকে জেগে উঠে। বেলা তখন দশটা। কি হয়েছে? শান্তিতে ঘুমাতে দেবে না নাকি। তোমার মা ও ঘুমা, সিঁথি মাকে জড়িয়ে ধরলো কাঁদতে কাঁদতে বললো মা তুমি এখানে এভাবে কেন।কি হয়ে ছে তোমার? বাবা এখানে এসো। মাকে ঘরে নিতে হবে।শোভন উত্তর দেয়, কেন তোমার মা কি পা ভেঙে ফেলেছে ।সিঁথি রেগে বললো তুমি আসবে?
শোভন রাগে গমগম করে আসলো কি হয়েছে? নাটক আর ভাল লাগে না। কি অবস্থা করেছে। ছোট বাচ্চা হয়েছে। আর ভাল লাগে না। সিঁথি বড় চোখ করে তাকালো। বাবাকে রেসপেকট করতে গিয়ে নিজেকে সামলে বড় টাওয়াল নিয়ে মাকে পেঁচিয়ে বাবাকে বললো রুমে নিয়ে যাও। শোভন বিরক্ত বোধ হয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজে আবার শুয়ে পড়লো। মিমি কাঁপছে। সিঁথি কম্বলটা গায়ে দিয়ে বললো কম্বলটা ও গায়ে দাওনি। তোমার মন কোথায় থাকে বাবা।
মিমির চোখ থেকে ঝরঝর করে গাল বেয়ে জল পড়ছিল ।সিঁথি দেখতে পেয়ে বুঝে গেছে যে মার জ্ঞান ফিরেছে। সিথির চোখ থেকেও দু ফোটা জল টপ করে পড়লো। মা মাগো কি হয়েছে তোমার? বলো আমায়? মায়ের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে চোখ পড়লো। মিমির পায়ের দিকে হাতের দিকে। রক্তে লাল হয়ে গেছে। সিঁথি চিৎকার করে উঠলো মাআআআআআ! তোমার হাত পা কাটলো কি করে?
সিঁথি দৌড়ে ডাইনিং রুমে যায়। দেখতে পায় কাঁচ ভাঙা। সিঁথি অভাক হয়ে এসে বাবাকে প্রশ্ন করে বাবা ডাইনিং রুম কাঁচ ভাঙছে কিভাবে? বাবা -আমি কি জানি? সিঁথি- বাবা তুমি কেমন স্বামী । পাশে শুয়ে থাকা তোমার বউ কোথায় কি অবস্থায় আছে তুমি জানো না? শোভন চুপ হয়ে আছে। মিমি তখন ও কাঁদছে । সিঁথি এবার কাঁদতে কাঁদতে বলে বাবা তুমিতো এমন ছিলে না? কেন কেন এমন হয়ে গেলে?