আজ ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম প্রয়াণ দিবস:
বহু প্রতিভার নিজস্ব এক সত্ত্বার অধিকারী এই কবি তার আপন প্রতিভার আলোয় উদ্ভাসিত করে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব দরবারে। পেয়েছিলেন বিশ্বকবির সম্মান। তিনি বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।বাংলা সাহিত্যের এই অসামান্য প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বাংলা সনের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদাসুন্দরী দেবী। বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়ান দিবসে অনন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ কবির উদ্দেশে অভিনন্দনপত্র পড়ে শোনান। এর দশ বছর পরে ১৯৩৬খ্রি. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি লিট উপাধি প্রদান করলেও সেবার তিনি আসেননি। ১৯২৬-এর ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নর্থব্রুক হলে সংবর্ধনা গ্রহণ করেন, এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের (এখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেন।
এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনি ময়মনসিংহের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রকৃতপক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর এই চার দিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ছিলেন। অসুস্থতার কারণে জগন্নাথ হলে সশরীরে আসা হয়নি রবীন্দ্রনাথের। তবে জগন্নাথ হলের বার্ষিকী বাসন্তিকার জন্য ‘এই কথাটি মনে রেখো’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখে দেন। সেটাই আজ একটি বিখ্যাত গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘Meaning of Art’ ও ‘The Rule of the Giant’ শিরোনামের দুটো ইংরেজি প্রবন্ধ পাঠ করেছেন যা আজও ইতিহাসের স্বাক্ষি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের ছাত্রদের দেওয়া সংবর্ধনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথ একটি চমৎকার ভাষণও দিয়েছিলেন। আর এই মুসলিম হলের ছাত্র সংসদ রবীন্দ্রনাথকে ‘আজীবন সদস্য’পদ প্রদান করে। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের মুসলিম হল বার্ষিকীর ১০ম বর্ষ-সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ইংরেজি কবিতা ছাপা হয়। এই ইংরেজি কবিতার শিরোনাম ছিলো বাংলায় ‘উদ্বোধন’।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার পেছনে যিনি সর্বাধিক তৎপর ছিলেন তিনি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, পরে উপাচার্য রমেশচন্দ্র মজুমদার। তাঁর লেখায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঢাকা সফরের নানাদিক উঠে এসেছে। মুসলিম হল বার্ষিকীর ৭ম সংখ্যা (১৩৩৯ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথের ‘আহ্বান’ কবিতাটিও ছাপা হয়েছিলো। এই কবিতাটি পরে গীতবিতান-এ পূজা পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে সময় ‘মুসলিম হল’ ও ‘জগন্নাথ হলে’র সঙ্গে আরো একটি ছাত্রনিবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালেই স্থাপিত হয় সেটির নাম ছিলো ‘ঢাকা হল’ এখন সেটিই ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল’। ‘ঢাকা হলে’র বার্ষিকীর নাম ছিল শতদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও কৃতী অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথের ঢাকায় আগমনের ‘সমুদয় ঘটনা’ শতদল-এ লিপিবদ্ধ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ শতদল-এর জন্য ‘প্রার্থনার আবশ্যকতা’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখে পাঠান, যা বার্ষিকীর সপ্তম সংখ্যায় প্রকাশ হয়।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক