বাংলা সাহিত্যের তিন বন্ধ্যোপাধ্যায়:
তসলিমা হাসান
বাংলা সাহিত্যের তিন প্রধান বন্ধ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে -‘বিভূতিভূষণ বন্ধ্যোপাধ্যায়'(১৮৯৪-১৯৫০), ‘তারাশংকর বন্ধ্যোপাধ্যায়'(১৮৯৮-১৯৭১) ও ‘মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়'(১৯০৮-১৯৫৬)। তাদের প্রত্যেকের লেখার আলাদা -আলাদা নিজস্ব বিষয় ভাবনা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
(১)- কল্লোল যুগের লেখক হয়েও পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো, শ্রেণীদ্বন্দ, যৌনতা, কামনা, বাসনা,হতাশা, ক্লান্তি এসব ছাপিয়ে ‘বিভূতিভূষণের’ লেখায় উঠে এসেছে শাশ্বত প্রেম, প্রকৃতি, চিরন্তন বাংগালী নারীর দেবীমূতি, স্নেহপ্রেম ভালোবাসা লালায়িত আত্মা ও শিশু মনস্তত্ত্ব। যেমন বলা যেতে পারে পথের পাঁচালী, আরণ্যক, ইছামতী উপন্যাস ও মেঘ-মল্লার, মৈরীফুল, অরন্ধনের নিমন্ত্রণ, জন্ম ও মৃত্যু সহ প্রভৃতি ছোট গল্পের কথা।
(২)-‘তারাশংকর বন্ধ্যোপাধ্যায়ের’লেখা প্রকাশ পেয়েছ রাঢ় বঙ্গের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহ, সমাজ, রীতি-নীতি, ঐতিহ্য, ধর্ম বিশ্বাস, টোটেম-ট্যাবু। সেই সাথে উঠে এসেছে ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদ জমিদারী প্রথার সাথে নব্য উঠতি পুঁজিবাদী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দ্বন্দ্ব। উদাহরন হিসেবে বলা যায় কবি, গণদেবতা, পঞ্চগ্রাম প্রভৃতি উপন্যাস।
(৩)-‘মানিক বন্ধ্যাপাধ্যায়ের’লেখায় মার্কসবাদী চেতনায় উঠে এসেছে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ, শ্রেণী সংগ্রাম আর ফ্রয়েডীয় চেতনার আলোকে জটিল মানব মনস্তত্ত্ব, জৈবিক তাড়নাজাত কামনা, বাসনা, যৌনতা। যেমন- পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস, পুতুল নাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য প্রভৃতি উপন্যাসে ও প্রাগৈতিহাসিক, সরীসৃপ, হলুদপোড়া সহ প্রভৃতি ছোট গল্পে।
তসলিমা হাসান
কানাডা, ৩০-১২-২০২১