অহংকার বা দাম্ভিকতা মুমিনের চরিত্রে কখনোই মানায় না। প্রকৃত মুমিনের পরিচয় হচ্ছে নম্রতা, বিনয় ও নিরহঙ্কারিতা। কারণ অহংকার হল ‘অত্যন্ত সম্মানিত’, ‘গৌরবান্বিত’, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ আল-মুতাকাব্বির-এর পোশাক; আর সেই পোশাক কেবল আল্লাহ তায়ালাকেই মানায়।
হাদিসে কুদসিতে এই বিষয়টি আল্লাহর রাসুল (সা.) অত্যন্ত কঠোরভাবে তুলে ধরেছেন যে “আল্লাহ তায়ালা বলেন, ইজ্জত–সম্মান আমার পোশাক এবং গর্ব–অহঙ্কার আমার চাদর। যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেব।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৬০৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ইজ্জত–সম্মান আমার পোশাক এবং গর্ব–অহঙ্কার আমার চাদর। যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে, তাকে আমি কঠোর শাস্তি দেব।
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৬০৯
মানুষের জন্য অহংকার কি আদৌ মানায়
মানুষ যদি তার হেদায়েত নিয়েও অহংকার করে, তাও ভুল। কারণ মানুষের শেষ পরিণতি তার অজানা। সে জানে না তার শেষ পরিণতি কী হতে পারে। আজ যে মুমিন, কাল সে বিপথে যেতে পারে। আজ যে গোমরাহ, কাল সে মুমিন হয়ে যেতে পারে; আল্লাহর হেদায়েতের কারণে।
আমলের ওপর অহংকার করাও ভয়ানক ভুল। কখনোই বেশি আমল নিয়ে নিজেকে নেককার ভাবা ঠিক নয়। অহংকারের কারণে পাহাড়সম আমলও আল্লাহ চাইলে ধূলিসাৎ করে দিতে পারেন। আর অহংকার হতে পারে জাহান্নামের বাসিন্দা হওয়ার কারণ।
অহংকারের ভয়াবহতা নিয়ে ৩টি হাদিস
অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন।
১. হারিস ইবনে ওয়াহাব খুযাঈ (রা.) বলেন, আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তাঁরা যদি কোনো ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করে বসেন, তাহলে তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী—তারাই জাহান্নামি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৯১৮)
আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ করা।
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭
২. আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি জানতে চায়, “মানুষ সুন্দর পোশাক ও জুতা পরতে চায়, এগুলো কি অহংকার?” রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, “আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। অহংকার হচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ করা।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭)
৩. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আর যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৮)
এত কঠোর সতর্কতার পরও কোনো মুমিন নিশ্চয়ই চাইবে না তার অন্তরে বিন্দুমাত্র অহংকার থাকুক।
অহংকার দূরীকরণে ইমাম গাজালির কিছু উপদেশ
অহংকার দূর করার জন্য ইমাম গাজালি (রাহি.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-এর অহংকার ও আত্মপ্রশংসার নিন্দা অধ্যায়ে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা আত্মশুদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন:
১. শিশুকে দেখলে ভাববে: সে আল্লাহর অবাধ্যতা করেনি; আমি করেছি—অতএব সে আমার চেয়ে উত্তম।
২. বৃদ্ধকে দেখলে ভাববে: তিনি আমার আগে থেকে আল্লাহর ইবাদত করছেন; নিশ্চয়ই তিনি আমার চেয়ে উত্তম।
অহংকার মানুষের শেষ পরিণতি নষ্ট করে দিতে পারে। আল্লাহ তায়ালা অহংকারীকে ভালোবাসেন না। মুমিনের সৌন্দর্য হল, বিনয় ও নম্রতা এবং আল্লাহকে ভয় করা।
৩. আলেমকে দেখলে ভাববে: তিনি যে জ্ঞান ও মর্যাদা পেয়েছেন—আমি তা পাইনি; তার স্তরে পৌঁছাতেও পারিনি। তাই আমি তার সমকক্ষ নই।
৪. অজ্ঞ ব্যক্তিকে দেখলে ভাববে: সে অজ্ঞতাবশত ভুল করে। কিন্তু আমি জেনে–বুঝে গুনাহ করি। তাই শাস্তির যোগ্য আমি বেশি।
৫. কাফিরকে দেখলে ভাববে: হতে পারে সে ভবিষ্যতে ঈমান গ্রহণ করবে এবং নেক আমল নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে। ফলে আল্লাহর নৈকট্য পাবে। আর আমি (আল্লাহ না করুন)—গোমরাহ হয়ে গুনাহে ডুবে মারা যেতে পারি।
শেষ কথা
আমাদের সকলের চেষ্টা হওয়া উচিত আমরা যেন পূর্ণ নিরহঙ্কার, বিনয়ী ও আল্লাহভীরু অবস্থায় তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে পারি।
writerismat@gmail.com
ইসমত আরা: শিক্ষক ও লেখক।

