আজ কবি এস এম শাহনূরের জন্মদিন:
বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি একাধারে কথাশিল্পী, কবি, লেখক, অনুবাদক, গবেষক এবং “Merit Theory”-এর উদ্ভাবক—তিনি এস এম শাহনূর। একবিংশ শতাব্দীর সৃজনশীল তারুণ্যের প্রতীক এই সাহিত্যযোদ্ধা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমানভাবে প্রশংসিত ও আলোচিত। তাঁর সাহিত্যজগৎ যেন এক অনন্ত ভ্রমণ, যেখানে ইতিহাস, প্রেম, মানবতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে এক স্বতন্ত্র ভাষায়।
জন্ম ও শৈশব:
১৯৭৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের প্রথম মুসলিম বসতি পরিবারে বৃষ্টিঝরা এক বিকেলে জন্মগ্রহণ করেন এস এম শাহনূর। পিতা হাজী আবদুল জাব্বার ও মাতা জাহানারা বেগমের স্নেহধন্য কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। শৈশবকাল থেকেই তাঁর মধ্যে শিল্প-সাহিত্যের প্রতি এক স্বাভাবিক টান ছিল। স্কুলজীবনে তিনি কবিতা লিখতেন, গল্প বলতেন, মঞ্চে আবৃত্তি করতেন, বিতর্কে বিজয় ছিনিয়ে আনতেন—এভাবেই গড়ে উঠেছিল তাঁর মেধা ও ব্যক্তিত্বের অনন্য ভুবন।
শিক্ষা জীবন:
ধারাবাহিকভাবে প্রথম স্থান অধিকারকারী একজন অসাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি বিভিন্ন মেধাবৃত্তি ও বোর্ড স্কলারশিপ লাভ করেন। পরবর্তীতে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এমএসএস) ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও তাঁর শিক্ষাগ্রহণের বিস্তার ঘটে—চীনের Marine and Warfare Academy of China থেকে সামরিক ও উচ্চতর প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতাকে বহুমাত্রিক করে তোলে।
কর্মজীবন ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা:
এস এম শাহনূরের পেশাগত জীবনও তাঁর সাহিত্যজীবনের মতোই বৈচিত্র্যময়। মেধা, শৃঙ্খলা ও দক্ষতার কারণে তিনি ভ্রমণ করেছেন এশিয়া ও ইউরোপের অসংখ্য দেশ—চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ভারত, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, লেবানন, তুরস্ক, সাইপ্রাস প্রভৃতি। জাতিসংঘের (UNIFIL) Maritime Task Force-এ শান্তিদূত হিসেবে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে তিনি মানবতার সেবায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন।
সাহিত্য জীবন:
সাহিত্যচর্চার শুরু কৈশোরে। ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা “অগ্নি বাণী” একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ বেতারে তাঁর কবিতা প্রথম সম্প্রচারিত হয়। ২০০৫ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ “স্মৃতির মিছিলে” তাঁকে সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে পরিচিত করে তোলে। এর পর থেকে তিনি কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গবেষণা, অনুবাদ, জীবনী ও নাটকের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছেন। তাঁর লেখনী বিশ্বের ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং দেশ-বিদেশের অসংখ্য পত্রিকা ও সাময়িকীতে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রকাশনা সংস্থা আমাজন (Amazon) থেকে প্রকাশিত বহু গ্রন্থে তাঁর লেখা স্থান পেয়েছে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক অ্যান্থলজি THE BOOK OF HYPERPOEM -এ তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী কবি।
গবেষণা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ:
একজন ইতিহাসপ্রেমী লেখক হিসেবে এস এম শাহনূর তাঁর জন্মভূমির শিকড় অনুসন্ধানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের ইতিকথা, জেলার কাইতলা জমিদার বাড়ির ইতিহাস, এবং বহু গ্রামের নামকরণের প্রামাণ্য তথ্য উদঘাটন করেছেন, যা স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাঁর বিশ্বাস—“মানুষ মরে যায়, কিন্তু ইতিহাস কখনও মরে না।”
ব্যক্তিজীবন:
সহজ-সরল, স্নিগ্ধস্বভাব, মিষ্টভাষী ও সাদামনের মানুষ এস এম শাহনূর পরিবার, সাহিত্য ও সমাজ—তিন ক্ষেত্রেই সমান নিবেদিত। তাঁর জীবনসঙ্গিনী মোছাম্মৎ আমেনা শরীফ শাহীন একজন সরকারি অডিট কর্মকর্তা। তাঁদের একমাত্র কন্যা সামীহা নূর জারা। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক ঐশী বাংলা-এর সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি:
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য এস এম শাহনূর দেশ-বিদেশে অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন। শিশু অধিকার ও বাংলা সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার স্বীকৃতিস্বরূপ American University of Milford (USA) তাঁকে সম্মানসূচক Doctor of Literature (D.Lit) ডিগ্রি প্রদান করে।
পরিশেষে :
এস এম শাহনূর কেবল একজন লেখক নন—তিনি এক সৃষ্টিশীল স্বপ্নযোদ্ধা, যিনি বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন নিরলসভাবে। তাঁর কলমের প্রতিটি শব্দ সময়ের পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেবে সৃষ্টিশীলতার আলোকধারা।