একজন আরাধ্যার জন্ম
রেশমা আক্তার
পর্ব-৪
বাচ্চার মুখ দেখে নার্সেরও বুঝি দয়া হলো। পৌষের শীত। তাই মানবিক কারণেই পাগলীর এইবার জায়গা হলো হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে। রাহেলা তাতেই খুশি।
রাহেলা সব ঠিকঠাক করে দিয়ে ঘুমন্ত পাগলীর বুকের কাছে বাচ্চাটা জড়ো করে রেখে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলো। ফজরের আজান পড়েছে। লোকজনও বের হয়েছে রাস্তায়। রাহেলা বাসায় এসে গোসল সেরে, রান্না খাওয়া করে কাজে যাবার প্রস্তুতি নেয়। ছেলে দুটো স্কুলে চলে গেলে সেও কাজে বের হয়।
সারাদিন কাজের ফাঁকে বারবার বাচ্চাটার কথাই মনে পড়লো তার। পাগলীটা বাচ্চাকে খাওয়াবে তো? কোলে নিবে তো? ফেলে রেখে চলে যাবে নাতো? হাসপাতালে কত লোকজন, নিশ্চই মানুষের নজরের মধ্যেই থাকবে ওরা।
কাজ শেষে সন্ধ্যা নাগাদ সোজা হাসপাতালে গেলো রাহেলা। ছেলে দুটি আজ না খেয়ে থাকবে নির্ঘাত। হাসপাতালে তাকে দেখে একজন আয়া চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো।
– তোমার আক্কেল কেমন গো মাতারি? পাগলে কী বাচ্চা চিনে? না বুঝে দুধ খাওয়ানো, না বুঝে নেওন থোওন। বাচ্চাডা তো মরবো।
রাহেলা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। সে কোন জবাব না দিয়ে দৌড়ে গেলো যেখানে পাগলী শুয়ে ছিলো সেখানে।
একি! বাচ্চাটাতো উদোম হয়ে পড়ে আছে, যেই ঠান্ডা পড়েছে, মরলো নাকি? প্রায় দশহাত দূরে পাগলী গুটিসুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে। রাহেলা দ্রুত বাচ্চাটাকে জড়িয়ে নিলো কাপড়ে। হিম শীতল শরীর তার। রাহেলা পেট পরীক্ষা করলো। আহারে, বাচ্চা তো মনে হয় না খেয়েই মরে গেল। বুকটা ছাৎ করে উঠলো রাহেলার।
এমন সময় করিডরে সেই নার্সকে দেখা গেলো। রাহেলা বুঝলো, তার কপালে দুঃখ আছে। নার্স এগিয়ে এসে বলল,
– এই যে, কী খবর তোমার? সারাদিন খোঁজ নাই। বাচ্চাডারে কার জিম্মায় রাইখা গেলা? হুজুগে তোমরা এমন সব আকাম করো, যার খেসারত দেই আমরা।
– কী করমু আফা, আমিওতো কাম কাইজ কইরা খাই। পরছি বিরাট ভ্যাজালে।
– ভেজালতো কেবল শুরু তোমার। আমি আয়ারে দিয়া অনেক চেষ্টা করছি, পাগলি দুধ খাওয়াইতে পারে নাই। বাচ্চা ক্ষিধায় কানতে কানতে ঘুমাইছে
রাহেলা বাচ্চার বুকে কান দিয়ে তার শ্বাস প্রশ্বাস পরীক্ষা করলো। নার্স রাহেলার পিঠে একটা হাত রেখে বলল
– শোনো, ভয় পাইওনা। তুমি একটা বিরাট মানবতার কাজ করছো। এখন এই বাচ্চা বাঁচাইতে হইলে অরে তুমি নিয়া যাও। পাগলীরে দিয়া কিচ্ছু হবে না। ও বাচ্চার কিছুই বুজতেছে না।
নার্স তার ইউনিফর্মের পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে রাহেলার দিকে ধরলো , বলল
– বড় ডাক্তার রাউন্ডে আইসা সব শুইন্যা, তোমার প্রশংসা করছে। বাচ্চা তোমারে নিয়া যাইতে বলছে। আর এই টাকাটা বাচ্চার জন্য স্যারে দিছে, নাও।
রাহেলার চোখ ছলছল করে ওঠে। না, পাঁচশ টাকার নোট দেখে নয়। সারাক্ষণ বিরুদ্ধ স্রোতের সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাকে। কেউ তো কখনও মানবতার কথা তাকে শোনায়নি। সে অবশ্য কোন কাজে কারও প্রশংসাও চায় না , এমনকী বিরোধীতারও তোয়াক্কা করে না। নিজে যেটা ঠিক , যেটা তার বিবেক সায় দেয় সবসময় সেটাই করে। একজন আজ তার পক্ষে কথা বলেছে, চোখে এই জন্যই পানি।
টাকাটা হাতে নেয় রাহেলা। নার্স তাকে একটা দুধের নাম লিখে দেয়, আরও দেয় তার তরফ থেকে একশ টাকা। আর বলে,
– মানুষের কাছে চেয়ে চিন্তে দুই চার মাস পার করো। তারপর গরুর দুধ খাইতে দিও একটু। পেটে কোন সমস্যা হইলে আমার কাছে নিয়া আসবা ।
রাহেলার মনটা খারাপ লাগছে। পাগলীটা এখন ঘুমাচ্ছে। বাচ্চাটা এভাবে নিয়ে যাবে? ও যে মায়ের দুধ পাইলো না। আর এমন কপাল পোড়া মা, মরেও না হারামজাদী। দেহো কেমনে ঘুমায়।
কিন্তু কিছু করার নাই এখন। বাচ্চা বাঁচাতে হলে নিয়ে যেতেই হবে।
ঘুমন্ত পাগলীকে পাশ কাটিয়ে হাসপাতাল থেকে বাচ্চা নিয়ে নেমে এলো রাহেলা। প্রথমে দুধ কিনলো, ছোট্ট একটা ফিডারও কিনলো। বাসায় এসে দ্রুত দুধ গুলে ফিডারটা মুখে ধরলো বাচ্চাটার। প্রথমে একটু মোড়ামুড়ি করলো, পরে চুকচুক করে বেশ খানিকটা টেনে নিলো।
পাড়া পড়শি হামলে পড়লো রাহেলার কুঁড়েঘরে। পাগলীর বেটি, পাগলীর বেটি, দেহি, দেহি, আমারে একটু দেকতে দে…..ওমা..! এ দেহি আসমানের চাঁন….সাদা ফকফকা…
সবচেয়ে হতবাক হয় রাহেলার ছেলে দুটি। তারা অবাক চোখে , গাঢ়ো বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাচ্চাটার দিকে।
– আম্মা, এইডা আমাগো কী লাগে আম্মা? এইডা কী পাগলীর বাচ্চা…?
রাহেলা ধমক দেয়
– চোপ…। তারে এই নামে আর কক্ষনও ডাকবা না।
– তাইলে তারে কী বলবো?
রাহেলা সস্নেহে হেসে বলে ,
– আইজ থেইক্যা তারে তোমরা বইন ডাকবা। আইজ থেইক্যা সে তোমাগো বইন। এক্কেরে নিজের বইন। কী সুন্দর দেকছো?
রাহেলা ছেলেদের দেখিয়ে বিগলিত হাসে। ছেলেরাও তাদের মায়ের কথায় খুশি হয় খুব। কেমন পুতুলের মত দেখতে একটা বাচ্চা আজ থেকে তাদের বোন।
ছেলেরা খুশিতে মাথা ঝাঁকায়। তারা তাদের নতুন বোনকে ঘিরে থাকে সারাক্ষণ। কাউকে হাত লাগাতে দেয় না। এত সুন্দর একটা বোনের ভাই হতে পেরে তারা গর্বিত। পাড়া পড়শিদের সাথে তাদের ভাবটাও বেশ অহংকারী। রাহেলা যখন বাচ্চাটাকে ফিডার খাওয়ায় তখন তার দুই ছেলে দু’ দিক থেকে উঁকি দিয়ে থাকে। বড় ছেলে আবু বলে,
– আম্মা আমাগো বইনে মনে হয় মেলা বড়লোক। হ আম্মা, আমি দেকছি, বড়লোকের বাচ্চাগুলানে এইডি খায়।
রাহেলা ছেলের কথা শুনে হাসে।
আবু আবার বলে
– আম্মা, আমাগো বইনের নাম কী?
রাহেলা চিন্তার ভান করে। বলে
– বেজায় চিন্তার বিষয়। তার জন্য একটা নামতো ঠিক করতে হইবো। দেখি কি করা যায়।
বাজারে এ ক’দিনে রাহেলা যেন বিশেষ একজন। প্রশ্নে প্রশ্নে জেড়বার হতে হচ্ছে তাকে। অনেকে সব বৃত্তান্ত শুনে বাহবা দেয়, সাথে দুই দশটা টাকা। অনেকে মুখের উপর বলে দিচ্ছে
– আজাইড়া ঝামেলা নিলি কান্ধে রাহেলা। নিজেরই ভাত জুডেনা তোর, তার ওপর পাগলীর বেজম্মা বাচ্চা….
পাগলীর নতুন আস্তানা বাস রাস্তার মোড়। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এদিকেই ঘোরাঘুরি করতে করতে জায়গাটা বেছে নিয়েছিলো সে । মূল বাজার এলাকা থেকে জায়গাটা খানিক দূরে। বাস রাস্তাটাও বেশ জমজমাট। দোকান পাট, রেস্টুরেন্ট সব গমগম করছে সারাক্ষণ।
রাহেলা দু’একদিন পরে হাসপাতাল এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাগলীর দেখা পেলোনা।
অথচ পাগলীকে তার ভীষণ দরকার। মেয়েটার পেট ফেঁপেছে। রাহেলা কথামত তাকে আবারও হাসপাতালের নার্সের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো। নার্স ঔষধ লিখে দিয়েছে আর গলা নামিয়ে বলেছে,
– পারলে, বাচ্চাটারে তার মায়ের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা কইরো। নইলে কিন্তু সমস্যা..
রাহেলা গত কয়েকদিন পাগলীর খোঁজ করেনি। সময় পায়নি, প্রয়োজনও হয়নি। পাগলীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার সময় কোথায় আর তার? কিন্তু গত দু’দিন থেকে পুতলা কিছুই খাচ্ছে না। পেটটাও কেমন ফোলা ফোলা। তারও মনে হলো, প্রতিদিন অন্তত একবার যদি মেয়েটাকে দুধ খাওয়াতে পারতো পাগলীটা। আজ নার্সের কথা শুনে তাই রাহেলা বাসস্ট্যান্ডেই একটু ঘোরাফেরা করলো।
রাহেলা অনেক খুঁজে খুঁজে একটা পরিত্যক্ত দোকানের ছাউনির নিচে পেলো তাকে শেষ পর্যন্ত। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। এখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। দোকানের ছাউনির নিচে শুয়েছিলো পাগলী। কয়েকটা ধাক্কা দিতেই আড়মোড় ভেঙে উঠে বসলো সে। ঘুম কাতুরে চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে কি সব দুর্বোধ্য শব্দ আওড়াচ্ছিলো । রাহেলাকে দেখে কোনো ভাবান্তর হলো না তার। রাহেলা আঁচলের নিচ থেকে এবার বাচ্চার ঘুমন্ত মুখটা বের করে দেখালো তাকে। তাতেও পাগলীর কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না।
রাহেলা এবার দুহাতে বাচ্চাটা এগিয়ে ধরলো। বললো
– দেখ… দেখ, তোর বাচ্চা… নে…নে, একবার কোলে নে…
পাগলীর চোখে বিমুঢ় দৃষ্টি। সে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটার দিকে। কিন্তু কেমন বিরক্তি তার চোখে মুখে। পাগলীর উর্ধাঙ্গে একটা ছেড়া ব্লাউজ। নিচে পেটিকোট। রাহেলা এক হাতে পাগলীর বুকের বোতাম খোলার চেষ্টা করলো। নতুন মাতৃত্বে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পাগলীর স্তন যুগল। কিন্তু বুকে হাত দিতেই পাগলী কেমন অস্থির হয়ে উঠলো, তার মুখে কেমন যেন একটা যন্ত্রণাকাতর গোঙানি। তার অসহযোগীতার আভাস পেয়ে রাহেলা আরও দ্রুত নিজের হাত চালালো। দুটো বোতাম খুলতেই আতকে উঠলো রাহেলা। ফর্সা বুকের উপরিভাগে রক্তাক্ত গভীর ক্ষত। মনে হয় যেন কোন পাগলা কুকুরের একাধিক দংশন। ধারালো নখের আচড়ে মাংসল দগদগে রক্তের ধারাটা এখনও শুকায়নি। পাগলি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো রাহেলার হাত। গোঙাতে থাকলো আর বিরক্তিসূচক অস্ফুট শব্দ করতে করতে উঠে হাঁটা দিলো। পাগলী কেমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে।
রাহেলার কপালটা কুচকে আছে। সে দেখছে, পা নেচড়ে নেচড়ে পাগলী কেমন চলে যাচ্ছে চোখের আড়ালে। এত খুঁজে খুঁজে পাওয়া গেলো, অথচ এভাবে চলে গেলো? কিন্তু সে থামাতেও পারছে না ওকে। বুকের ভেতরটা জ্বলছে তার দাউদাউ করে। চোখ দিয়ে যেন তারই স্ফুলিঙ্গ ধারা বেয়ে নেমে আসতে চাইছে। সত্যিই কী পাগলীকে ওই জায়গায় কুকুর কামড়েছে? একটা অসম্ভব চিন্তা মাথায় এসেও উড়ে গেলো রাহেলার। আসল সত্যটা নির্মমভাবে ভেসে উঠতে চাইলো মানসপটে। দুদিকে মাথা নেড়ে চোখ বন্ধ করলো সে।
পাগলী চলে গেছে, রাহেলা তাকে থামাতে চাইলো না আর। তার চোখে ভাসছে দগদগে ক্ষত ওয়ালা পাগলীর দুটি ভরাট স্তন। মেয়েটাকে তার মায়ের দুধ খাওয়ানোর চিন্তা আপাতত স্থগিত। রাহেলা বুঝলো, বাচ্চা জন্ম দিলেও, পাগলীর আর এ জন্মে মা হয়ে ওঠা হলো না। নির্মম নিয়তি ওর দেহের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকবে হয়তো সারাটা জীবন। রূপ আর যৌবন আমৃত্যু ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে তাড়া করে বেড়াবে ওকে। আর ওর মাতৃত্বের দায় বয়ে বেড়াবে এ সমাজ, সংসার। কারণ যে শিশু আজ জগতের আলো দেখবে, সে এসে নিশ্চই কাল সংসারে তার জায়গাটুকু ছেড়ে দেবে না। সেও কোন না কোন ভাবে ছিনিয়ে নেবে তার সব অধিকার। এই বাচ্চা বরং পাগলীর সংস্পর্শ থেকে দূরেই থাকুক। পেটে ধরার দায় ছিল, ধরেছে। এখন আর পাগলীর সাথে এর বন্ধন রচনা করা নির্বুদ্ধিতা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহেলা ফিরে আসে সেদিন। কিন্তু কি জানি, পাগলীর জন্য তার বুঝি খানিক মায়া পড়ে গেছে। এতদিন ভাবতো পেটের বাচ্চাটার জন্যই বুঝি সব করছে রাহেলা। কিন্তু ঘুরে ফিরে ওই হতভাগীর কথাই মনে পড়ে তার। পুতলার দিকে তাকালে, ওর জন্মদাত্রীর মুখটাও যেন ভেসে ওঠে তার পাশে।
রাহেলা দিনের আলো না ফুটতেই কাজে বের হয়ে যায়। ছেলেরাও তার স্কুলে যায়। যদিও ইতিমধ্যেই বড় ছেলে আবু তার বইনের যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। কিন্তু সে স্কুল থেকে ফেরে বেলা বারোটায়। সে পর্যন্ত ওর খেয়াল কে রাখবে? আবু অবশ্য স্বানন্দে তার স্কুল ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত।
রাহেলা হাসে। ছেলেরা তাদের নতুন বোনের জন্য সব করতে রাজি। তারা তাদের বোনের একটা নামও দিয়েছে, পুতলা।
পুতলাকে ঠিক যেন পুতুলের মতই দেখতে। আজকাল দূর দূরান্ত থেকেও লোকজন আসে পুতলাকে দেখতে। গায়ের রং কাঁচা হলুদ। জোড়া চিকন ভ্রুর নিচে সুন্দর দুটি চোখ। মাথায় কোঁকড়ানো চুল। আহা, বচ্চাটা মায়ের রূপ পেলো। যদি উল্টো হতো, তবে চেহারার মিল থেকে ওর বাপকে ঠাহর করা যেতো হয়তো। উদ্ভট এমন অনেক কথা বলে লোকে। আরও অনেক কথা শোনা যায় আজকাল, বাচ্চাটাকে নাকি নিতে চায় অনেকে। তারা রাহেলাকে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে বাচ্চাটা দত্তক চায়। রাহেলা কান দেয় না বরং বিশ্রী ভাষায় ঝেড়ে দেয় খানিক।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। কিন্তু ইদানিং, রাহেলার ঘরে একটা নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো পুতলা। রাহেলা দিন আনে দিন খায়। বাচ্চার দুধ জোটাবে কীভাবে সে? দু’দিন পরপর বাচ্চার পেটের সমস্যা হচ্ছে। একজন পরামর্শ দিলো, ও পাড়ায় উকিল বাড়ি মস্ত বড় গাই পোষে, একটু চেয়ে চিন্তে যদি জোটানো যেতো।
হাত পেতে চাওয়ার অভ্যেস নেই রাহেলার। তবু অগত্যা যেতে হবে তাকে। আজকাল পুরোদিন কাজ করতে পারে না রাহেলা। পুতলাকে দেখাশোনা করতে বারবার ছুটে আসতে হয় ঘরে। রোজগার কমে গেছে তার। ঘরে ছেলেদুটো তার একবেলা খায়, তাতেও তারা খুশি। ক্ষুধার কষ্টটা তারা যেন পুতলাকে নিয়ে হেসে খেলে, কথা বলে ভুলে থাকতে চায়।
উকিলের বউ এ তল্লাটে একজন জনপ্রিয় , প্রভাবশালী মহিলা। রাহেলাকে দেখে সে হেসে রাহেলার সাথে নানান কথা বলে, জানতে চান পাগলীর বৃত্তান্ত। রাহেলাও বলে অনেক কিছু। তারপর আসে আসল কথা।
– ভাবীসাব একটা জিনিস চাইতে আসছি।
উকিল বউ বলে
– কি..? কি.. চাস…?
– বাচ্চাডার প্যাডে ব্যারাম। হাসপাতালের নার্স আফা বলছে, একটু গরুর দুধ খাওয়াইতে। আমি গরীব মানুষ, দুধ কই পামু..? একফোডা দুধ যদি দিতেন…
উকীল বউ চেয়ে থাকে খানিক, পরে গম্ভীর স্বরে বলেন
– এই দুর্মূল্যের বাজারে দুধ কীভাবে দিব..? তোর ভাই সাহেব, আমার ছেলেমেয়ে, এরাই সাবাড় করে দেয় সব। আমি বলি কী পাগলের বাচ্চা, ওসবের অভ্যেস করাসনে। একটুখানি ভাতের মাড় খাওয়াস। ও বাঁচবে, তুইও বাঁচবি।
মুখটা কালো হয়ে যায় রাহেলার। দুধ পায়নি বলে নয়। একটা দুধের শিশুর জন্য সামান্য একটু দুধইতো চাইছে। আহা, এরা কিসে এত বড়লোক হয়, বোঝে না রাহেলা। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মনে মনে বলে, দাও মালিক, এদের গোয়ালে না হয় তুমি আরও দুটি গরু দিয়ে দাও, এরা আরও বড়লোক হউক। পাগলীর বেটি মরলে বরং তোমারও লাভ, জগৎটা পাপমুক্ত হয়।
ক্ষুন্ন মনে রাহেলা ফিরে যাচ্ছিলো। উকিল বউ বসে ছিলেন বাড়ির পেছন দুয়ারের সিঁড়িতে। মধ্যবয়সীনী, সুস্বাস্থ্যবতী। হাতে পানের বাটা। সুপাড়ি কাটতে কাটতে আবার ডাকলো রাহেলাকে
– এই, শোন…
রাহেলা দাঁড়িয়ে পড়ে
উকিল বউ একফালি সুপাড়ি মুখে ছুড়ে দিয়ে বলেন
– একটা কাজ দিতে পারি তোকে
রাহেলা প্রশ্নাতুর চোখে চায়। উকিল বউ বলেন
– রোজ দুপুরে দোতলার সিঁড়ি দুটি আর গাড়ি বারান্দাটা মুছে দিয়ে যাস। কাজের ছেলেটা পালিয়েছে কাল। লোক পাচ্ছি না। কাজ শেষে যাবার সময় পোয়াটাক দুধ নিয়ে যাবি রোজ। রাজি থাকলে শুরু কর আজই।
রাহেলা দ্বিতীয়বার ভাবেনি। টপ করে আঁচলটা কোমরে গুজে কাজে লেগে গিয়েছিলো। দুধটুকু পেয়ে উপকার হলো খুব। কদিনেই পুতলার পেটের ব্যারাম কমলো। সে এখন বেশ ভালো আছে, সাস্থ্যটাও বেশ। কিন্তু সমস্যা মিটলোনা রাহেলার। সে দুপুরবেলা চাতালে কাজ করে। ওটুকুই তার রোজগার। দিনশেষে দু’মুঠো খুদ কুড়োও পায়। ওটা হারালে চলবে কেন। ক’দিন দেরী হওয়ায় মহাজন তেড়ে এলেন। এক্ষুনি ছাটাই করবে তাকে। রাহেলা হাতে পায়ে ধরে এ যাত্রায় রক্ষা পেলো। সেদিন বাসায় এলো মুখ কালো করে
বড় ছেলে বলল, চিন্তা কী আম্মা? আমিতো তখন ইস্কুল থেইক্যা ফিরি। আমিই যাবো উকিল বাড়ি, আমিই মুছে দেবো সিঁড়ি।
রাহেলা তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে কিয়ৎক্ষণ। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
– তুই পারবি বাপ?
– বইনের জন্য পারবো আম্মা, সব পারবো।
রাহেলা হেসে ফেলে। বলে, ইস, কী দরদের বইন তোমাগো।
ছেলেরাও হাসে তার। পুতলাকে ভালোবাসে তারা। পুতলা এখন তাদের দায়িত্ব। তাদের বইন ভাতের মাড় খেতে চায়না, দুধ খেতে চায়। তার দুধের জন্য ভাই হয়ে এটুকু কষ্ট করবে না, তা হয়?
আবু এরপর সোজা স্কুল থেকে উকিল বাড়ি যায়। সিঁড়ি মোছে, আরও দু একটা ফাই ফরমাস করে দেয়, তারপর বোতলে এক পোয়া দুধ নিয়ে ফেরে।
দু’ তিন মাস কেটে যায় এভাবে। রাহেলা যেন সদ্য পোয়াতি। মেয়েকে নিয়ে তার নানান কাজের পরিকল্পনা। পুতলা এখন চেনে তাকে। রাহেলা বাড়ি ফিরে আওয়াজ দিলে পুতলা হাত পা ছোড়াছুড়ি করে তার কোলে যাবার জন্য। হাসে, কান্নার বায়না ধরে যতক্ষণে রাহেলা কোলে তুলে না নেয়। রাহেলা হেসে হেসে নানান কথা বলে
– কইরে আমার লক্ষীসোনা, চান্দের কণা। আমার আম্মাজী , রূপার পুতলা।
পুতলা শব্দ করে হাসে। রাহেলার কোলে চড়ে অপলক তাকিয়ে থাকে তার দিকে। নানান অজানা শব্দ বের হয় তার মুখ দিয়ে। রাহেলা সে সব শব্দের অদ্ভুত আর মজার মজার উত্তর দেয়া শুরু করে। ছেলেরা তার তা শুনে হেসে লুটোপুটি খায়।
– আমার আম্মাজীর আইজকা মনডা খারাপ ক্যান? ভাইয়েরা আদর করে নাই? খাইতে দেয় নাই? আহারে আমার ময়না পক্ষী, মুখটা কেমন শুকাইয়া গ্যাছে দেহো। আইজকা আমার পুতলা মায় শাস্তি দিব সব্বেরে। কই গেলো রে আবু আর বাবু?
আবু আর বাবু তখন মিথ্যে ভয়ে পালানোর ভান করে। রাহেলা পুতলারে নিয়ে খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের। বেশ কিচুক্ষণ চলে তাদের লুকোচুরি খেলা। পুতলাও মজা পায় খুব। খিলখিল করে হাসে সেও। রাহেলা চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেয় পুতলার শরীর। আদরে বুকের মধ্যে চেপে ধরে থাকে খানিক। রাহেলার ঘরে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায় তখন। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে, পুতলাকে শুইয়ে দিয়ে এরপর গৃহকর্মে লেগে পড়ে সে।
পুতলার রূপের খবর ছড়িয়ে পড়ে নানান দিকে। অনেকই দূর দূরান্ত থেকে এসে লুকিয়ে খোঁজ নেয়, বাচ্চাটা চায় তারা। আসেপাশের লোকদের হাত করে, রাহেলার ওপর চাঁপ প্রয়োগ করে। কিন্তু রাহেলা অনড়।
অবশ্য জোর করতে পারে না কেউ। তারা জানে, এ বাচ্চা জন্মের পেছনে রাহেলার অবদান অনেক । সুতরাং বাচ্চার মালিকানা তার।
না পেরে উল্টে অনেক কুকথাও ছড়ায় লোকে। বলে, পাগলীর সন্তান জারজ। সমাজে তার পরিচয় নাই। কী তার ভবিষৎ? রাহেলা কি কম ধান্দাবাজ? একে বড় করে তুলতে পারলে তো রাহেলারই লাভ, পাগলীর মেয়েকে দিয়ে ব্যবসা খুলতে চায় রাহেলা, ইত্যাদি ইত্যাদি…।
রাহেলা কানে হাত চাপা দেয়। এমন নির্মম কথা ভদ্রলোকরাই ভাবতে পারে বটে। রাহেলাও কম যায় না। মুখ ছোটে তারও। এমন কথা বলে যে, প্রতিবেশীরাও দরজায় খিল দিতে বাধ্য হয়। ঘরে ঢুকে একা একা কাঁদে রাহেলা। সেতো এসব চায় না বলতে। কিন্তু কি করবে সে?
নিজের বাসায় ফিরে আজ রাহেলা একটু হোঁচট খেলো। উকিলের বউ বসে আছেন তার চৌকির এক কোণায়। বাচ্চাটা শুয়ে ঘুমাচ্ছে। ছেলে দুইটা আগলে আছে বোনকে।
– ভাবীসাব আফনে?
উকিল বউ কোন প্রকার ভূমিকা না করে বলল,
– রাহেলা শোন, যশোরে আমার ছোট বোন রুবি থাকে। বিশাল সহায় সম্পত্তির মালিক। স্বামী মস্ত উকিল। কিন্তুু বিয়ের দশ বছর পরও সে নিঃসন্তান। ওরা অনেকদিন যাবৎ একটা এতিম বাচ্চা খুঁজতেছে। তুই এই বাচ্চা দিয়া কী করবি? বাচ্চাডা আমাদের দিয়ে দে।
এমন সোজা সাপ্টা কথায় রাহেলাও হঠাৎ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। বলল
– কী কন ভাবীসাব, বাচ্চা কী আমার যে আমি আফনেরে দিমু?
উকিল বউ সুচতুরা, ভাববার সময় দিলো না রাহেলাকে। বলল
– এখন তো তুই অর মালিক। পাগলী তো কেবল কয়েকটা মাস পেটে রাখছে। সবাই জানে, এই বাচ্চা দুনিয়ার আলো পাইছে তোর জন্য। আমিতো শুনছি, পাগলীর পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করার জন্য মানুষে নানান চেষ্টা তদবীর করছিলো। ওষুধও খাওয়াইছিল নাকি। কিন্তু কই মাছের প্রাণ, বাচ্চা মরে নাই। তারপরও লোকে ভাবছে, পাগলের পেটের বাচ্চা, অজায়গা কুজায়গায় জন্ম নিবে, শেয়াল শকুনে নিয়া যাবে, মামলা খতম। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার হইলো, মামলা খতম হয় নাই। তুই চক্ষে চক্ষে রাইখ্যা বাচ্চা জন্ম দেওয়াইলি। এখন তুই যা বলবি তাই হবে। বাচ্চা এখন তোর। তুই বাচ্চাডা আমারে দে..
– কন কী ভাবীসাব, এই বাচ্চা জন্ম থেইক্যা আমার কাছে। পাগলীর পেটে হইলে কী হইবো সে আমার নিজের সন্তানের মত। জীবন গেলেও তারে আমি কাউরে দিতে পারবো না। আমারে ক্ষমা দেন।
– শোন, বাচ্চাডা দিয়া তুই যদি কোনো টাকা পয়সা চাস, পাবি। যা চাইবি তাই পাবি। তোর আর মিল চাতালে কাজ করে খেতে হবে না। ছেলে দুইটাও মানুষ করতে পারবি।
রাহেলার মানে বড় লাগলো কথাটা। ঝড় জল পাড়ি দিয়ে, নিজে আধপেটা খেয়ে কলিজার টানে, বিবেকের দায়ে এতসব কিছু করেছে সে। আর আজ তাকে টাকা দেখানো হচ্ছে? কোথায় ছিলো তোমাদের টাকাপয়সা এতদিন?
– মাফ দিবেন গো ভাবীসাব। রাহেলা গরীব, কিন্তুু পয়সার কাঙ্গাল না। এই বাচ্চা আমি বেঁচমু বইল্যা এতকিছু করি নাই। কেউ যদি একবার বেঁচনের কতা কয় তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করমু। আফনে মানী মানুষ, আফনেরে অফমান করতে চাই না। অক্ষণ আফনে যান গো ভাবীসাব
রাহেলার অগ্নিরূপ দেখে উঠে দাঁড়ালো উকিল বউ। স্থির কন্ঠে বলল
– মাথা ঠান্ডা কর, রাহেলা। চিন্তা ভাবনা কইরা জানাইস আমারে। পাগলীর বাচ্চা জারজ সন্তান। সমাজে তুই তারে কী পরিচয় দিবি? বুঝলাম , তুই তোর সন্তানের মতই দেখবি তারে। কিন্তুু সমাজ কী তারে তোর সন্তান বলবে? কয় জনার মুখে হাতচাঁপা দিবি তুই? তার চাইতে দূরে কোথাও গিয়া যদি সে নতুন পরিচয় পায়, মানুষ হয়, তোর আপত্তি কীসের? মেয়েটা বড় ঘরে, বড় পরিচয়ে মানুষ হবে।
উকিল বউ চলে গেলে রাহেলা চৌকীর এক কোণায় বসে পড়লো। কোন কারন ছাড়াই চোখ দুটো ভিজে উঠলো তার।
উকিল বাড়ির কাজটা ছেড়ে দিলো রাহেলা। দুধটুকুও বন্ধ হলো। পুতলা এখন ভাতের মাড়ই খায়। বেশ আগ্রহ করেই খায়। প্রথম ক’দিন সবার ভয় ভয়। পরে ঠিক সামলে গেলো, পেটের ব্যারামও হলো না আর। আবু আর বাবু পায়ের ওপর বালিশ দিয়ে পুতলাকে শোয়ায়, তারপর ঝিনুক দিয়ে একটু একটু করে মাড় মুখে ঢেলে দেয় । এসময় তারা বেশ বানিয়ে বানিয়ে গল্প শোনায় বোনকে। তাদের হাসি, গল্প, কথায় বেশ মজা পায় পুতলা।
পুতলার বয়স চার মাসে পড়েছে। কিন্তু উকিল বউ আজও হাল ছাড়েনি। এখনও আসে মাঝে মাঝে। এটা সেটা দিয়ে যায়। রাহেলা সেসব উপঢৌকন গ্রহন করতে না চাইলেও দেয়। তবে চাপ প্রয়োগ করেনা, বরং বোঝায়। রাহেলা সবই বোঝে, আবার কিছুই বোঝে না। তবে এর ক’ দিনের মাথায় রাহেলাও হার মানলো।
এক ঝড়জলের রাতে উকিল বাড়ির দরজায় ঘা পড়লো বারবার। দরজা খুললেন উকিল বউ, চোখে তার বিস্ময়, ভেজা সপসপে দাঁড়িয়ে আছে রাহেলা।
– কিরে রাহেলা, এত রাতে তুই..?
রাহেলা হাতজোড় করলো, কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল
– ভাবীসাব, দয়া করেন। মাইয়াডা হাসপাতালে। ডাক্তারে কয় নিউমোনিয়া। মেলা অসুদপত্তর লাগবো, টাকাও…
উকিল বউ ঘুমভাঙা চোখে বিরক্তি এনে বলল
– মেয়ে পালার এত শখ, এখন পাল। মানুষের সাহায্য কী দরকার? নিজের সঙ্গতি যখন নাই, কী দরকার একটা পাগলের সন্তান ঘরে নিয়ে আইসা পালার?
রাহেলা দৌড়ে এসে পা জড়িয়ে ধরে উকিল বউয়ের। কেঁদে কেঁদে বলে
– ভাবীসাব, হাতে ধরি, পায়ে ধরি। মাইয়াডার জীবন বাঁচান। মাইয়াডার দম আটকাইয়া যাইতাছে। বেজায় কষ্ট অইতাছে তার। আমারে কয়ডা টাকা ভিক্ষা দেন। আপনে যা করতে বলবেন তাই করব আমি।
উকিল বউ মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আহারে, পরের মেয়ের জন্য কী মায়। সাব্বাস রাহেলা, তরে স্যালুট। কিন্তু দুনিয়াটা স্বার্থের। তাই আমিও আইজ স্বার্থপর। আল্লাহ তোর ভালো করুক।
উকীল বউ দৃঢ় গলায় বলল
– দিতে পারি, এক শর্তে। মেয়েটাকে যদি বাঁচাতে চাস, আমারে দিয়ে দে। আর যদি মারতে চাস, তবে যা। ধুকে ধুকে রোগে শোকে অর মরনই ভালো।
রাহেলা স্তব্ধ হয়। এক মুহূর্তে তার মনে খেলে যায় অনেকগুলো চিন্তা। তাইতো, কী করে বাঁচাবে সে এ মেয়েকে? কী এর ভবিষৎ? একটুখানি মায়া মাত্র। মায়া আবার কী? সে কী এই বাচ্চার মা? তার এত মায়ার দরকারটা কী? তার হাতে সময় খুব কম। পুতলা মরনের সাথে যুদ্ধ করতাছে। এত ভাবার সময় নাই।
সে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। চোখ মুছে, ভারী গলায় বলল
– আমি রাজি ভাবীসাব। আপনে ওরে বাঁচান।
অন্ধকারেই হাসি ফুটলো মুখে উকিল বউয়ের। সে ভেতরে গিয়ে একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে ফিরে আসলো , তার হাতে ছাতা। বললেন
– চল, গাড়ি বের করতে বলেছি। আমিও যাবো তোর সাথে হাসপাতালে।
কিছুটা বিস্ময়ে, কিছুটা জড়সড়ো হয়ে রাহেলা উকিল বউয়ের সাথে গাড়ি চড়ে বসে।
সে রাতে যমে মানুষে টানাটানি হলো পুতলার জীবন নিয়ে। উকিল বউয়ের প্রভাবে বিশেষ কাজ হলো। দামী ঔষধ আর ব্যবস্থাপনায় সু চিকিৎসা পেলো পুতলা। ভোর নাগাদ ডাক্তার আস্বস্ত করলো তাদের। উকিল বউ বাড়ি ফিরলো। ফেরার আগে কিছু টাকা গুঁজে দিলো রাহেলার হাতে। রাহেলা এবার না করলো না। পুতলার জন্য তার এখন অনেক টাকা দরকার।
( চলবে)
২ Comments
very good story; congratulations
Thank you so much