শব্দ-বোধিনী
(প্রচলিত শব্দ-জিজ্ঞাসা)
হৃৎপিণ্ড/হৃদপিণ্ড:
‘হৃদপিণ্ড’ একটি অতিব্যবহৃত ভুল শব্দ। এ-ক্ষেত্রে ব্যাকরণসম্মতরূপে শুদ্ধ শব্দটি হলো : হৃৎপিণ্ড (হৃদ্+পিণ্ড )। ব্যঞ্জন সন্ধির নিয়মানুযায়ী পূর্বপদের শেষ বর্ণটি যদি ‘দ্’ হয় এবং পরপদের প্রথম বর্ণ ক-বর্গ বা প-বর্গের প্রথম দুটো বর্ণের একটি কিংবা ‘স’ হয়, তবে ‘দ্’ স্থানে‘ ’ৎ’ হবে। একই নিয়মে গঠিত আরও কিছু শব্দ : হৃৎকমল, হৃৎকম্প, হৃৎপীড়া, হৃৎস্পন্দন।
সর্বজনীন / সার্বজনীন
‘সর্বজনীন’ অর্থ হলো ‘সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত’ বা ‘বারোয়ারি’; যেমন : সর্বজনীন অনুষ্ঠান। অপর দিকে, ‘সার্বজনীন’ অর্থ সকলের মধ্যে প্রবীণ’ বা ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’; যেমন : সার্বজনীন ব্যক্তিত্ব। কিন্তু প্রায়শ ‘সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত’ অর্থে ’সার্বজনীন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা ঠিক নয়। খ্-জাত ঈন্-প্রত্যয় দ্বারা গঠিত বলে ‘সর্বজনীন’ {সর্বজন+ঈন(<খ্)} শব্দটিতে প্রকৃতির আদ্যস্বরের কোনও পরিবর্তন হয়নি। পক্ষান্তরে, খঞ্-জাত ঈন্-প্রত্যয়ের কারণে ‘সার্বজনীন’ {সর্বজন+ঈন(<খঞ্)} শব্দে প্রকৃতির আদ্যস্বর ‘অ’ বৃদ্ধি পেয়ে ‘আ’ হয়েছে।
জিন/জ্বীন
‘জ্বীন’ বা ‘জ্বিন’ নয়, লিখতে হবে ‘জিন’। কারণ এটি ফারসি ভাষা হতে আগত শব্দ, যা ‘জিম’ (ج), ‘ইয়া (ي)’ ও ‘নুন’ (ن) –এই তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘জিম’ (ج)-এর উচ্চারণ বাংলা ‘জ’-এর মতো। তা ছাড়া, প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মে বিদেশি শব্দ শুধু ই-কার দিয়ে লেখার নির্দেশনা রয়েছে। তাই, ‘জ্ব’ ও ঈ-কার হওয়ার কোনো হেতু নেই। ‘জ্বীন’ বা ‘জ্বিন’ শব্দ বাংলা অভিধানেও নেই।
জঙ্গি/জঙ্গী
জঙ্গী, জঙ্গীবাদ, জঙ্গীবিমান –প্রায়শ এমন সব বর্জিত বানান চোখে পড়ে। প্রমিত নিয়ম অনুযায়ী বিদেশাগত শব্দে দীর্ঘ ঈ-কার যুক্ত করা যায় না, হ্রস্ব ই-কার বসাতে হয়। তাই লিখতে হবে জঙ্গি, জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবিমান। উল্লেখ্য, এটি ফারসি শব্দ ‘জঙ্গ’ হতে উৎপন্ন হয়েছে।
বিদেহ/বিদেহী
কেউ মারা গেলে অনেকেই তাঁর ‘বিদেহী’ আত্মার শান্তি কামনা করেন। এর পরিবর্তে ’বিদেহ’ আত্মার শান্তি কামনা করা উচিত। কারণ, ‘বিদেহ’-ই যথাযথ বিশেষণ শব্দ, এটি ‘ঈ’ প্রত্যয় যোগে পুনরায় বিশেষণ করা এবং স্ত্রীবাচক রূপ দেওয়া ঠিক নয়।
কীরূপ/কী রূপ
‘কীরূপ’ অর্থ কীপ্রকার, কীরকম বা কেমন। কিন্তু শব্দটি মধ্যস্থলে ফাঁকা রাখলে ভিন্ন অর্থ হয়। ’কীরূপ’ প্রশ্নাত্মক ও বর্ণনাত্মক উভয় ধরনের বাক্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন : “কীরূপ ঘড়ি তুমি পছন্দ করো?”, “তার স্বভাব কীরূপ তা আগে জেনে নিও।” কিন্তু ‘কী রূপ’ বললে কারও রূপের প্রশংসা করা হয়। তাই ‘কীরূপ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘কী রূপ’ লেখা যাবে না।
AK: