গোলাম কিবরিয়া পিনুর ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ : স্বদেশের রক্তাক্ত মুখ
হিমেল বরকত
———————————————————–
১.
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ অবসানে ভারতবর্ষে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফল হিসেবে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশের উদ্ভব ঘটে। ধর্মীয় ঐক্যের সূত্রে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে লাভ করে নতুন নাম- পূর্ব-পাকিস্তান। এদেশীয় মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতৃবর্গ আপামর জনগণকে উদ্বেলিত করেছিল এই স্বপ্নে যে, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণ দীর্ঘদিনের উপেক্ষাজনিত অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তি লাভে সমর্থ হবে। কিন্তু পূর্ববাংলার রাজনৈতিক নেতৃবর্গ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের ব্যবধানেই উপলব্ধি করতে পারে, পূর্ববাংলাকে তারা আরেক ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে সমর্পণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা এই নেতৃবর্গ নিরুপায় চোখে দেখতে পায় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণ। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় যাঁরা দায়িত্বকে কুক্ষিগত করেন তাঁরা প্রায় সকলেই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসী এবং বৃহত্তর খেটে-খাওয়া জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন সামন্তপ্রভুদের প্রতিনিধি ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণায় বিকশিত শিক্ষিত সামরিক-বেসামরিক আমলা শ্রেণী। এদের শাসন ও আধিপত্যে পূর্ব-পাকিস্তান অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হতে থাকে। পাকিস্তানি এই শাসনকে কেউ ‘ঔপনিবেশিক’, কেউ ‘অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক’, কেউবা ‘নয়া-ঔপনিবেশিক’ আবার কেউ-কেউ ‘সম্প্রসারণবাদী’ শাসন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পরিভাষাগত ও পরিস্থিতিগত ভিন্নতা সত্ত্বেও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ঔপনিবেশিক শোষণ ও আধিপত্যের সঙ্গে পাকিস্তানি শাসন অভিন্ন চারিত্র্যেই প্রকাশিত।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যায়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব-পাকিস্তানবাসী ও পশ্চিম পাকিস্তানবাসীর মধ্যে বার্ষিক উৎপাদন ও মাথাপিছু আয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবৃন্দের বৈষম্যনীতি ও শোষণের ফলে এই দুই অঞ্চলের বার্ষিক উৎপাদন ও মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং দু’দশক পর তা ১৭ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশে বর্ধিত হয়। বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের ৬০ শতাংশ, কখনো বা ৭০ শতাংশ উপার্জিত হতো পূর্ব-পাকিস্তান থেকে; কিন্তু এর বাৎসরিক আমদানি ব্যয় হতো মাত্র শতকরা ৩০ শতাংশ। পঞ্চাশ ও ষাট দশকে পাকিস্তান প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পেয়েছিল, যা পূর্ব-পাকিস্তানে খরচ করা হয় ১৯৪.২ কোটি ডলার ও পশ্চিম পাকিস্তানে ৪৫৫.৮ কোটি ডলার। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উভয় অংশের এই তুলনার মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব-পকিস্তানকে ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ করার তথ্যটি নির্ভুলভাবে প্রমাণিত হয়। অর্থনৈতিক এবং আর্থিক নীতিগুলো এমনভাবে প্রণয়ন হতে াযাতে পূর্ব-পাকিস্তানের সম্পদে পশ্চিম পাকিস্তানকে শিল্পোন্নত করা যায়। এক পরিসংখ্যানের হিসেবে জানা যায়, ১৯৪৮-’৬৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচারের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্প-পণ্যের জন্য একটি অধীন ও স্থায়ী বাজার হিসেবে পূর্ব-পাকিস্তানকে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
ঔপনিবেশিক শক্তি চায় উপনিবেশিত জনগোষ্ঠীকে নিজস্ব সংস্কৃতি-ভাষা-দর্শন-বিশ্বাস থেকে উৎখাত করে তাদের সংস্কৃতানুগ করে তুলতে। উপনিবেশিতদের ভেতর নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবজ্ঞা, অনাগ্রহ, বিতৃষ্ণাবোধ এবং ঔপনিবেশিক শক্তির সংস্কৃতিকে উচ্চতর জ্ঞান করার এই হীনমন্যতা উপনিবেশিতদের স্বাতন্ত্রিক পরিচয়কে লুপ্ত করে, মেরুদ-হীন করে তোলে। ঔপনিবেশিক শাসকেরা তাই পরিকল্পিতভাবেই আক্রমণ করে উপনিবেশিতের সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক ভূমিকে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও স্বাধীনতার এক বছরের ভেতরই হামলা চালায় পূর্ব-পাকিস্তানের ভাষার উপর; পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলার বদলে সংখ্যালঘিষ্ঠ শাসকগোষ্ঠীর ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার মাধ্যমে। পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিরা ভাষার উপর এই আগ্রাসন মেনে নিতে পারে নি। সরব প্রত্যাখ্যানে তারা প্রতিরোধ করতে চেয়েছে পশ্চিমা শাসকদের হীনচক্রান্ত। অতঃপর নানা বাদ-প্রতিবাদের পর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে, ভাষার জন্য বাঙালির প্রাণবিসর্জনের বিশ্ববিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবার পাশাপাশি উন্মোচিত হয় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ক চরিত্র।
ভাষার পাশাপাশি ধর্মীয় ঐক্যকে অবলম্বন করে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দেশীয় অনুগত শ্রেণী বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষঙ্গের মূলে আঘাত হানে। হিন্দুয়ানির অভিযোগ এনে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, ঋতুভিত্তিক সাংস্কৃতিক উৎসব ও মেলা, রবীন্দ্র সংগীত প্রচার, যাত্রা-পালা প্রভৃতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব তৎপরতায় পশ্চিমা শাসকশ্রেণীর অনুগত গোষ্ঠীর উৎসাহ ও প্রচারণা ছিল অক্লান্ত। কিন্তু বাঙালির গর্বিত ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া রবীন্দ্রনাথকে আত্মশক্তির পাথেয় হিসেবে অবলম্বন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী শ্রেণী। রাষ্ট্রশক্তির রক্তচক্ষু ও সমস্ত বিরোধিতা উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে সাড়ম্বরে দেশব্যাপী উদ্যাপিত হয় রবীন্দ্রনাথের শততম জন্মবর্ষ।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের মতো পাকিস্তানি শাসকশ্রেণীও পূর্ব-পাকিস্তানে তৈরি করে নেয় এক অনুগত শ্রেণিগোষ্ঠী। মধ্যবিত্ত এই শ্রেণী স্বার্থের তাড়নায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অধিকার, দাবি পদদলিত করতে পিছপা হয় নি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকের শোষণ-মন্ত্রের পক্ষেও তারা প্রতিধ্বনি তুলেছে, নির্দ্বিধায় সমর্থন ও তা প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে।
পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে প্রথম সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনজীবনকে আরো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয় ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। দশ বছর কালব্যাপী তার স্বৈরাচারী শাসন পূর্ব-পাকিস্তানের জনমানসে ঘনীভূত করে তোলে অসন্তোষের বাষ্প। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে স্বাধিকারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ উত্থাপন করে ৬ দফা। এই ৬ দফাকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আশ্রয় নেয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃবর্গকে গ্রেফতার করায় সমগ্র পূর্ব-পাকিস্তান বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। আন্দোলনরত ছাত্ররা এ সময় ৬ দফার সমন্বয় করে ১১ দফার কর্মসূচি গ্রহণ করে। ক্রমে এসব প্রতিরোধ ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। পুলিশের হামলায় নিহত হন আসাদ। আসাদের রক্তমাখা শার্ট পরিণত হয় বিপ্লবের প্রতীকে।
পাকিস্তান-পর্বে ১৯৫২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বাঙালির সংগ্রাম কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণের লড়াইতে। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব-পাকিস্তানের জনমত সমর্থিত আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রামকে উন্নীত করে স্বাধীনতার স্বপ্নে। নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের পূর্ব-বাংলার মোট ১৬৯ টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৭টি। পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ লাভ করে ২৯৮টি। অপরদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশ মিলিয়ে পিপলস পার্টির অধীনে ৮৮টি আসন লাভ করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে উপেক্ষা করে ঔপনিবেশিক শাসকের চরম স্বেচ্ছাচারী চরিত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি চক্র ক্ষমতা-বণ্টনের বদলে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ব-পাকিস্তানের উপর। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চের রাতে নারকীয় সশস্ত্র এই হামলা সূচনা করে মুক্তিযুদ্ধের। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস, ধর্ষণ, নির্যাতনের শ্বাসরুদ্ধ সেই নয় মাসব্যাপী করুণ, নৃশংস, ভয়ংকর অভিজ্ঞতা পার হয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ তাই শোকে ও প্রাপ্তিতে অবিস্মরণীয়।
২.
মহান এই মুক্তিযুদ্ধের অভিঘাত স্বভাবতই বাংলাদেশের কবিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে এবং তার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রচিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিপুল সংখ্যক কবিতা। পরিমাণে সুপ্রচুর হলেও নৈরাশ্যজনক যে, ‘একাত্তরে বাঙালি জাতিসত্তার সম্মিলিত জাগরণকে আমাদের কবিতা এখনো যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারে নি। এর কারণ, আমাদের অধিকাংশ কবির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অভিজ্ঞতা-পরিস্রুত নয়; প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত না থাকার জন্যে তাঁদের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক উত্তাপ অনুপস্থিত।’১ তবে সৌভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশের যে গুটিকয় কবি কবিতা লিখেছেন, গোলাম কিবরিয়া পিনু তাঁদের একজন। তাঁর ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ গ্রন্থে ছড়িয়ে আছে সেই অভিজ্ঞতা ও চৈতন্যের রক্তাক্ত অনুভব।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বাংলাদেশের তাবৎ কবিতাকে মোটা দাগে দুটি ভাগে বিভক্ত করা চলে। প্রথমত, যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার বিবরণ; দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের করুণ পরিণতিতে স্বপ্নভঙ্গের হাহাকার। গোলাম কিবরিয়া পিনুর ‘মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ও গ্রন্থিত হয়েছে এই দুই চৈতন্যের নির্যাস নিয়ে। তাঁর এ কাব্যগ্রন্থে ‘অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে’ পর্বে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে স্বাধীনতা-বিরোধীদের উত্থান, তাদের আনুকূল্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন, মুক্তিযুদ্ধের মহান চৈতন্যের ধূলিস্যাৎ হওয়া ইত্যাদি গ্লানিকর অভিজ্ঞতার সমান্তরালে বিবৃত হয়েছে সংগ্রামের আহ্বান- যে সংগ্রামের প্রেরণাবীজও মুক্তিযুদ্ধ। এ গ্রন্থের দ্বিতীয় পর্ব ‘মুক্তিযুদ্ধ অগ্নিপ্রভ হয়ে বেঁচে আছে’ অংশে কবি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভয়াবহ স্মৃতি চিত্রিত করেছেন। এ পর্বে উঠে এসেছে পাকবাহিনী ও রাজাকার, আল-বদরদের নির্মমতার বহু দিক। বুলেটে বিদ্ধ করে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে, চোখ উপড়ে তুলে নৃশংসতম উপায়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা করে, প্রায় দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করে পাকিস্তানি শাসকেরা তাদের অবর্ণনীয় নির্মমতা প্রকাশ করেছে। তাদের এই হত্যাযজ্ঞে এদেশেরই কিছু মানুষ- রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এদেরই নির্দেশনায়, পরিকল্পনায় গণহারে বুদ্ধিজীবী হত্যা সংঘটিত হয়েছে। বাঙালির মেরুদণ্ড, মেধা, সাংস্কৃতিক জগতকে পঙ্গু করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত হয় এই চক্রান্ত ও হত্যালীলা :
ক. চুলোয় হওয়া ভাত চুলোয় রইল
শিশু স্তনে মুখ রেখেছিল–
দুগ্ধ পান করতে পারেনি,
বাড়ির উঠোন মোছা অসম্পূর্ণ ছিল,
কারা এসেছিল–
পোড়ানো ও মরণের গন্ধ নিয়ে?২
খ. রাজারবাগ পিলখানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
এক এক করে হামলায় দাঁতে দাঁত
নখরে আক্রান্ত করে, বিভীষিকার পরিসীমায়-
পা ফেলতে ফেলতে কুকুরেরা
আরো হিংস্র, আরো অন্ধ হলো৩
পাকিস্তানি সেনাদের উপর্যুক্ত নৃশংস নির্যাতন, হত্যা ও ধ্বংসলীলা সমগ্র বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে। পাশাপাশি, ধর্ষণ ও নারী-নির্যাতনে পাকিস্তানি সেনাদের তা-ব ও তার করুণ পরিণতির চিত্র বাক্সময় হয়ে আছে পিনুর কবিতায় :
ক. বস্ত্র হরণের পালা, মালা ছিল যে গলায়, সেই
মালা ছিন্ন ভিন্ন,
স্তব্ধতার পাথরে পাথরে মূর্তিমান
নির্লজ্জ পিশাচ,
তাঁকে নিয়ে যায়, নিয়ে যায়।৪
খ. ঝুলানো রয়েছে বারান্দায় ওড়নার কাপড়
যা ফাঁসির দড়ির বিকল্পে হয়েছিল পরিণত,
আর সেই মেয়েটির কথা ভাবতেই
হাজার হাজার পশু-পক্ষী রাত্রির নিস্তব্ধতায়
যেন ঘৃণা আর শোকে মূক হয়ে যায়।৫
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে ধর্ম-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে এক অসাম্প্রদায়িক চৈতন্যের বিকাশ ঘটায়। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, বাঙালি-আদিবাসী- সকলেই যূথবদ্ধভাবে পাকিস্তানি শক্তির হামলা প্রতিরোধ ও বাংলাদেশকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞায় লড়াইয়ে অংশ নেয়। কেউ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে, কেউ বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধের সহযোগীরূপে নিজের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধকালে বহির্বিশ্বে দুটি পক্ষও দাঁড়িয়ে যায়। আমেরিকা-চীন যেমন পাকিস্তানের সমর্থনে হাত বাড়ায়, তার বিপরীতে ভারত-রাশিয়া সোচ্চার সমর্থন জানায় বাংলাদেশকে। মুক্তিযুদ্ধের শেষপর্বে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু-প্রধান ভারতের সহযোগিতাকে স্বাগত ও গ্রহণে সমর্থ হয়েছে অসাম্প্রদায়িক চৈতন্যের কারণেই। মুক্তিযুদ্ধের দুঃসময়ে ভারত-রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতা বাংলাদেশকে যেমন উজ্জীবিত করেছে, তেমনি এদেশীয় একটি অংশের পাকিস্তানি শাসকের সঙ্গে আঁতাত ও মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী অবস্থান এদেশবাসীকে মর্মান্তিক ক্ষতির মুখোমুখি করেছে। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের নানা ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতার ফলে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন, অজস্র মা-বোন ধর্ষিতা হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন এদেশের বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবী। ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে আঁতাতকারী মীরজাফর যেমন কুখ্যাত হয়ে আছে, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধকালে এই বিরোধী পক্ষও মীরজাফরের সমতুল্যরূপে চিহ্নিত হয়েছে। এদের প্রতারণা ও স্বার্থান্বেষী মনোভাবের বিরুদ্ধে কবির ধিক্কার তাই অগ্নিক্ষরা :
ক. এরা, ক্ষুধার্ত শকুন, খাবলে মাংস খায়
এরা, পরাজিত শত্রু, পরাজয়ের গ্লানি মুছতে হিংস্র-শ্বাপদ
এরা, ছিটগ্রস্ত লোক, লণ্ডভণ্ড করে শস্যক্ষেত
এরা, মিথ্যেবাদী, ইতিহাসের পাতায় অন্য পৃষ্ঠা জুড়ে ফুঁড়ে দেয়
এরা, মায়াবিনী, ধর্মের অপব্যবহারের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে৬
খ. এদের হাতেখড়ি হয়েছে হত্যা আর ধর্ষণে
গোখুরা-সাপ এদের সহযোগী বন্ধু
এরা খাঁটি দুধে ঘি তৈয়ার করতে পারে না
এদের পোশাক খুলে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে
গায়ে মাংস লাগার পর
আবার নতুন পোশাক পরেছে, তাও খুলে পড়ছে-
এদের গা-গতর থেকে বমনের যাবতীয় দুর্গন্ধ বের হয়
এদের স্পর্শ করা যায় না।৭
দুর্ভাগ্যজনক যে, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নানা পর্বে স্বাধীনতা-বিরোধী এই অপশক্তি রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য লাভ করেছে, প্রাসাদে প্রবেশে করেছে মন্ত্রিত্বের শিরোপা নিয়ে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থান ও অপতৎপরতায় এই চক্রই মূলত দায়ী। সমাজের মুক্তবুদ্ধির মানুষকে ‘ইসলামের শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের হত্যা কিংবা ‘মাথার মূল্য ঘোষণা’ করতে দেখা গেছে। নির্বিচারে বোমা ও গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে এরা হত্যা করেছে অসংখ্য মানুষ। বস্তুত, ধর্মীয় উন্মাদনাকে পুঁজি করে মৌলবাদীরা চায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। ১৯৯১-এর সংসদ নির্বাচনে ভোটের বিনিময়ে বেহেশতের টিকিট বিক্রি করার মতো ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে ধর্মকে ব্যবহার করে মৌলবাদীরা বিভ্রান্ত করে সাধারণ মানুষকে। নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেও তারা ক্ষমতার প্রয়োজনে জোটবদ্ধ হয় নারী নেতৃত্বের অধীনে। এসব বিপরীত আচরণ ও ধর্মকে ব্যবসায় পরিণত করা এই স্বাধীনতা-বিরোধী পরাজিত গোষ্ঠীর স্বরূপ উন্মোচনে কবি তাই লিখেছেন :
ক. আজকাল রং পালটায় কি শুধুই গিরগিটি?
বাতিকগ্রস্ত চরিত্র রূপায়ণে যারা পারদর্শী
তাদেরই হাতে পালটে যাচ্ছে বিজয়মুকুট–
ইতিহাস হাসে মিটিমিটি।৮
খ. মুক্তি থেকে দূরবর্তী দ্বীপে সরে গিয়ে
মুঠো মুঠো অন্ধকার নিয়ে
কাদের নিয়েছে কারা কোলে তুলে?
… … … …
বার বার নিয়ে যেতে চায় মধ্যযুগে
-আলখাল্লা পরে!৯
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের পর যেসব হিন্দু নিরাপত্তা রক্ষার্থে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল, তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার তাদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে তাদের সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে সরকার অধিগ্রহণ করে। হিন্দুদের অধিকাংশই সে সময় পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির কারণে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর, দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ভেবে তারা দেশে ফিরতে চেয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি ফেরত পাবার দাবিও তারা জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের নীতিই বহাল রাখে, কেবল ‘শত্রু সম্পত্তি’র নাম বদল করে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ করা হয়। এ ঘটনার মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভেতর পকিস্তান আমলে যে সংখ্যা লঘুত্বের পীড়নভীতি তৈরি হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশেও তা অক্ষুণ্ন থেকে যায়। ‘বিভাজনের ইতিহাস’ কবিতায় অসাধারণ ব্যঞ্জনায় কবি তুলে এনেছেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার এই স্বার্থবাদী ব্যবহারকে। ধর্মকে ব্যবহার করা মানুষের মুখোশ তিনি মেলে ধরেছেন :
পানির ট্যাপ থেকে জল পড়ছে!
জলের ট্যাপ থেকে পানি পড়ছে!
এই নিয়ে কুঁদুলেপনায়- জনায় জনায়
দিনদগ্ধা হয়ে থাকলাম
এর মধ্যে যারা জল পাওয়ার–জল পেলো
এর মধ্যে যারা পানি পাওয়ার–পানি পেলো।
কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক বিভেদের বলী হয় সাধারণ মানুষ। আপামর অসাম্প্রদায়িক জনতার মানবিক তৃষ্ণা অপূরণীয় থেকে যায় :
ঝাঁটাঝাঁটি থেকে কাটাকাটি হলো
হাড়মাস কালি করা অবস্থায় বেঁচে থাকলাম
একবিন্দু তৃষ্ণা মেটাতে পারলাম না–
একথা অনস্বীকার্য যে, পাকিস্তানি শাসন-মুক্তির লক্ষ্যে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আপামর মানুষের কাক্সিক্ষত মুক্তির সনদ হয়ে উঠতে পারে নি। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের আত্মাহুতি, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর যন্ত্রণা, প্রিয় স্বজন বিয়োগের মর্মন্তুদ বেদনা পার হয়েও এদেশের সাধারণ জনতার অর্থনৈতিক মুক্তি রয়ে গেছে দূরপ্রান্তে। ব্যর্থ সমাজতন্ত্র, দু-দু বার সামরিক শাসন আর গণতন্ত্রের নামে পুঁজিতন্ত্রের সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞাকে মলিন করে দিয়েছে। পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তির সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্তি, রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় চরিত্রের বিকাশ মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনাকেই ধূলিস্যাৎ করেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্নাহত চেহারাও ঠাঁই পেয়েছে পিনুর কবিতায় :
ক. যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
তারা শুধু গেয়ে যাবে নিশীথের গান!
আয়ুষ্কাল ঝাঁ-ঝাঁ রোদের পাবে না কোনও নাগাল?
আমাদের দিন নেই! শুধু রাত্রিবেলা- শুধুই সূর্যাস্তকাল!১০
খ. যাদুঘরে গিয়ে দেখি প্রিয় মুক্তিযুদ্ধ
একটি ছিন্ন বিবর্ণ দৈনিকে!
একটি ছেঁড়া রক্তাক্ত পোশাকে!
একটি ছোট অস্পষ্ট ছবিতে!
এতটুকু ধারণক্ষমতা নিয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ?১১
গ. চুরি করা শিশু মনে করে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে
যা খুশি বোল শেখানো হচ্ছে তাকে!
… … … …
আমাদের গৌরবের পরিচয়বাহী মুক্তিযুদ্ধ
খাপছাড়া অবস্থায়–
বার বার বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে।১২
স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের এই অবমূল্যায়ন, সমাজব্যবস্থার স্থবিরতা আর এসব অব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিপন্ন জাতির মুক্তি-আকাক্সক্ষাকে গোলাম কিবরিয়া পিনু পাথেয় হিসেবে নিয়েছেন সম্ভাব্য সংগ্রামের পথ-পরিক্রমায়। দুর্বার বিক্ষোভ ধ্বনিতে আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি ও স্বাধীনতার সেই সজাগ প্রত্যাশার উজ্জ্বল লাবণ্যে উদ্ভাসিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য কবিতা। সে-সবের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যাংশ :
ক. ঘাতক-খুনি চতুর্দিকে করছে অন্তর্ঘাত
তারা এখন কাদের অন্তর্জাত?
টিকে থাকবো শুধু লুপ্ত বংশে?
আমরা কেন নিজের ভগ্নাংশে?
রক্তমাখা পোশাকে আবার দাঁড়িয়ে যা বাপ
ভোজালি হাতে কাদের পায়ের ছাপ?১৩
খ. গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে এই আয়ুষ্কালে ছেড়ে দেব
শত্রুদের হাতে স্বাধীনতা?
আমাদের তাপশক্তি নিয়ে পাপস্্েরাত স্ফীত হচ্ছে!
পুনরুদ্ধারের জন্য–
এই চৈত্র মাসে তেতে উঠছি না কেন
সূর্যশক্তি নিয়ে,
দাহদিন দগ্ধ করে নিজ বিবেককে।১৪
গ. চলো–অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–কুণ্ঠামুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–নবাঙ্কুর হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
চলো–প্রসববন্ধন হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে১৫
‘যুদ্ধ’ কবিতায়ও কবি জোর দিয়েছেন যুথবদ্ধ ও দ্বিধাহীন উত্থানের, যুদ্ধ-প্রস্তুতির। কেননা কবির দৃঢ় বিশ্বাস– ‘আমরা দাঁড়ালে যুদ্ধ হবে/ শত্রুরা পালাবে উর্ধ্বশ্বাসে’। ‘রায়ের বাজারের লাশ’ কবিতায় বধ্যভূমি থেকে উঠে এসে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় পুনরায় সংগ্রামের প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করছে–
রায়ের বাজারে গুলি লাগা লাশ
প্রাণ পেয়ে উঠে দাঁড়ায়
ছড়ানো ছিটানো ফুল মাড়ায়,
স্টেনের ট্রিগারে দেয় চাপ
পাতকেরা এখনো মরে নি!
মরুক–
নইলে নিজেরা মরি
দ্বিতীয়বারের মত হই লাশ।
এই রক্তাক্ত, বিয়োগান্তক এবং একই সঙ্গে শোককে শক্তি ও গর্বে রূপান্তরিত করার আবেগবাহিত অনুভবপুঞ্জ কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর মত পাঠককেও বিক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও প্রতিবাদী করে তোলে। কবির সাফল্য এখানেই যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধকে অবলোকন করেছেন বিস্তৃত পটভূমিতে। মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে সমকালীন বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের জাগ্রত চৈতন্য। এই প্রত্যয়দীপ্ত উচ্চারণই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি কবির আমগ্ন ধ্যানকে প্রকাশ করে। আর পাঠককুল সেই মগ্নতা থেকে নিয়ে নেন প্রয়োজনীয় উত্তাপ–স্বদেশের মুখ থেকে রক্তাক্ত দাগ মোছার অগ্নিশপথ।
তথ্যসূত্র :
বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলাদেশের সাহিত্য, ১ম প্র, ঢাকা : আজকাল, ২০০৯; পৃ.২৪
২ গোলাম কিবরিয়া পিনু, মুক্তিযুদ্ধের কবিতা [কারা], ১ম প্র, ঢাকা : রিদম প্রকাশনী সংস্থা, ২০১২
৩ মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, পূর্বোক্ত, [পশুরা, ২৫শে মার্চ ’৭১]
৪ তদেব, বস্ত্র হরণের পালা
৫ তদেব, বধ্যভূমি
৬ তদেব, রুখে দিব, বাঁচাবো মুক্তিযুদ্ধ
৭ তদেব, এরা
৮ তদেব, ইতিহাস হাসে
৯ তদেব, আলোকশূন্যতা
১০ তদেব, আমাদের জন্মবার
১১ তদেব, যাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ
১২ তদেব, চুরি করা শিশু মনে করে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে
১৩ তদেব, রক্তমাখা
৪ তদেব, বরফের মধ্যে
৫ তদেব, অধিভুক্ত হই আবারও মুক্তিযুদ্ধে
—————-
রাঢ়বঙ্গ, ২য় বর্ষ : ২য় সংখ্যা । ডিসেম্বর ২০১৪
সম্পাদক : অনুপম হাসান
১ Comment
Congratulations.