স্বেচ্ছা নির্বাসনে
শেখর সিরাজ।
আমি কিছু কিছু বিষয়ে খুব শুচিবায়ুগ্রস্ত আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর।
আমি চাই না আমার খুব বেশি টাকা- পয়সা হোক।
বেশি টাকা হলে ভয় থাকে পতন হওয়ার, উত্থান-পতনের ভয় নেই আমার, আমি সমতলের মানুষ।
উপরে উঠতে উঠতে কিছু মানুষকে আমি বড় গাছের মগডালের শকুন হতে দেখেছি।
মানুষ থেকে কিংবদন্তি শকুন হওয়া পীড়াদায়ক।
তাই আমি কোন মরণোত্তর
বীমাপত্রে দস্তখত করি নাই।
চেক বইয়ের পাতায় নমিনি ছিল না কোন উত্তরাধিকার।
সঞ্চয়পত্র ছিল না সরকারের সাথে দেশ বিক্রির কোন গোপন আতাঁত। নিরপেক্ষ তর্জনী আঙ্গুলে আমার ছিল না
ভাগ্য বদলের কোন অষ্টধাতু।
আমি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি, মেষ শাবকের দল, পরিত্যক্ত সূর্য দীঘল বাড়ি।
স্ব-ঘোষিত, উজ্জ্বল মহিমায় বিনির্মানে তৈরি করে চলেছি জল পারদের ভাস্কর্য, আমি সত্যি জানি না,
বড় গাছের মগডালের শকুন হওয়ার গোপন সূত্র।
আমাকে বন্দি করে আপনাদের কোন লাভ হবে না, আমার ব্যক্তিগত ভোল্টে পাবেন রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান, পীথাগোরাসের উপপাদ্য।
আমাকে রিমান্ডে নেওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান, পীথাগোরাসের উপপাদ্যকে রিমান্ডে নেওয়ার সাহস দেখান।
শিয়ালদহ স্টেশনে তল্লাশি দিন।
বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মতো পীথাগোরাসের উপপাদ্য আপনাকে চব্বিশ ঘণ্টা মুখস্থ করতে হবে।
আমাকে রিমান্ডে নিলে অপচয় হবে সরকারি কোষাগারের বিপুল সময় ও অর্থ।
তার থেকে বরং প্রধানমন্ত্রী কার্যলয়ের সামনের রাস্তার ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেস করুন, আমি কে?
বঙ্গভবনের সামনের ফুটপাতের বাদাম বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন,
আমি কে?
গণভবনের সামনের লাল গোলাপ বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করুন,
আমি কে?
রাষ্ট্র কবি ও প্রেমিকদের জন্য কোন সরকারি পদের পরিপত্র প্রজ্ঞাপন জারি করে না।
আমাকে নিষিদ্ধ তালিকা রাখার আগে নিষিদ্ধ করে রাখুন বাংলা বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা।
বাংলা বারো মাসের দিন পঞ্জিকা, চৈত্র সংক্রান্তি,
পৌষ পাবণের উৎসবের দিন, নিষিদ্ধ করুন আবহাওয়া, জলবায়ু,
জীবন আচরণের খাদ্যাভ্যাসের সংবাদ পাঠ।
মুখ দর্পণের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের জলছাপ।
শত্রু সম্পত্তির মতো আমাকে আপাদমস্তক দখলে নিন,
দেওয়াল লিখনে নির্ধারিত করে দেন সীমানা প্রাচীর,
উড়িয়ে দেন লাল নিশান।
লাল দালানের জেল হাজত আমার খুব আরামপ্রিয় ও নিরাপদ।
বাইরের দূষিত বাতাসে দম বন্ধ লাগে।
তেজস্ক্রিয়তার বিদ্রোহে জ্বলে শরীর।
প্লীজ, আমাকে রাজনৈতিক পরিচয় দিবেন না,
বড় মন্ত্রীর ক্যাবিনেট সচিব পরিচয় দিবেন না,
ব্যবসায়ীক দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীর লাল ফোনে নিমন্ত্রণ করবেন না।
আমি জানি, মেরুদণ্ডহীন পত্রিকা সম্পাদকের মুখের মতো আপনাদের সকলের মুখ গহ্বর থেকে বের হয় পঁচা ডিমের দুর্গন্ধ।
আশ্চর্য!!
আপনাদের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের অদূরদর্শীতা আমাকে টিনের চালে কাকের মতো অবাক করে,
তারা কী কখনো সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা সিরিজের তিন গোয়েন্দা পড়েনি?
অথবা
প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু? ফেলুদা?
নিয়োগ তদবির বাণিজ্যে সব কলা গাছ রাতের অন্ধকারে হয়ে উঠল তাল গাছ।
সংসদ ভবন থেকে আমার পরিচয়ের দূরত্ব একটি মাত্র ব্যালেট পেপারের,
আমাকে ধরতে আপনার লেগে গেল স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর।
জানেন,
গত পঞ্চাশ বছরে বদলে গেছে পৃথিবীর মানচিত্রের ভূগোল,
বদলে গেছে অনেক রাষ্ট্র ও সংবিধান,
অসংখ্য রাষ্ট্র নায়কদের জীবন- যাপন পদ্ধতি।
রাজায়- রাজায় যুদ্ধে উলুখড়ে প্রাণ যাওয়ার মতো শত শত কোটি মানুষ হয়ে গেল উদ্বাস্তু, শরনার্থী।
ব্যক্তিগত বিচ্ছেদের দুঃখ বোধ, দেশ ছাড়ার দুঃখ বোধের উপলব্ধি সমান পারদে গলে।
আমি বোহেমিয়ান দেশপ্রেমিক, আমার কোন নারী বন্ধু নেই,
নেই কোন সহযোগী শাখা- প্রশাখা।
অফিসার,
আপনি আমাকে জেলখানার ভয় দেখাবেন না,
তার থেকে বরং জল মগ্ন হাঁসের কথা বলুন- হাসতে হাসতে ইস্তফা দিয়ে হয়ে যাবো
নিরুদ্দেশ কিংবা স্বেচ্ছা নির্বাসনে নির্বাসিত।